জুলাইযোদ্ধাকে হেনস্তার জেরে ঢাকা-ময়মনসিংহ বাস বন্ধ, ভোগান্তি

ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হানকে নাজেহালের অভিযোগ ওঠে ইউনাইটেড পরিবহনের এক শ্রমিকের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে ইউনাইটেড পরিবহনের ব্যানারে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক শামীমের মালিকানাধীন বাস বন্ধের দাবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন জুলাইযোদ্ধা ও এনসিপি নেতারা। প্রশাসন ইউনাইটেড পরিবহনের বাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে এর প্রতিবাদে আজ রোববার সকাল থেকে ঢাকাগামী ময়মনসিংহ বিভাগের সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীগামী যাত্রীরা। বিকল্প উপায়ে যারা যাচ্ছেন তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়াও।

পরিবহন সমিতি কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আজ ভোর ছয়টা থেকে ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলা থেকেই বন্ধ ঢাকাগামী সব ধরনের বাস চলাচল। গন্তব্যে যেতে না পেরে অনেকে ফিরে গেছেন, অনেকে আবার কয়েকগুণ বাড়তি দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা, পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ বিকল্প উপায়ে রওনা হন গাজীপুর-ঢাকার উদ্দেশ্যে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে বাড়ে চাপ, পাল্লা দিয়ে বাড়ে ভোগান্তির মাত্রাও।

বেলা একটার দিকে দিঘারকান্দা বাইপাসে গিয়ে জামালপুর থেকে আসা সাদিকুল ইসলাম নামের এক যুবককে বসে থাকতে দেখা যায়। সঙ্গে তাঁর মা, প্রতিবন্ধী এক ভাইসহ পরিবারের ৫ সদস্য। বাস না পেয়ে সাদিকুল জানান, ভোর পাঁচটায় জামালপুর থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে ময়মনসিংহ বাইপাসে এসেছেন। ভেবেছেন এখান থেকে ঢাকায় যাবেন তাঁরা। কিন্তু এখানেও বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন। ফিরে যাওয়ারও অবস্থা নেই। শেষমেষ বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পিকআপে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। বাইপাসে এমন অবস্থা শতশত মানুষের।

রুবায়েত ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী জানান, রোববার থেকে থেকে তাঁর ক্লাস শুরু। কিন্তু মাসকান্দা বাস টার্মিনালে এসে দেখেন বাস চলছে না। তাই বাসায় ফিরে যেতে হচ্ছে।

মইনুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোনো কিছুই হলেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। সাধারণ মানুষের কথা আসলে কেউ ভাবে না।

অন্যদিকে বাস শ্রমিক-চালকরাও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দাবিতে অনশন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধান করে বাস চালুর দাবি জানান।

মাসকান্দা বাস টার্মিনালে ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের কাউন্টারের সামনে ব্যানার টানিয়ে শ্রমিকদের অবস্থান করতে দেখা যায়। ইউনাইটেড গাড়ির শ্রমিক হাফিজুর রহমান বলেন, সড়কে কোন গাড়ি চলবে, কোন গাড়ি চলবে না, তা নির্ধারণ করে মালিক সমিতি। কিন্তু তা নির্ধারণ করার কাজ তো এনসিপির নয়।

জেলা এনসিপির সদস্য মোজাম্মেল হক বলেন, যারা ফ্যাসিস্ট ও শহীদ সাগরের ‘হত্যাকারী’ শামীমের ১৬টি বাস বন্ধের বিপক্ষে গিয়ে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন, তাঁদের সিন্ডিকেট চিরতরে ভেঙে দেওয়া হবে।

নিরাপত্তার কথা ভেবে ঢাকাগামী বাস ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ। তিনি বলেন, গতকাল যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল, তা ঢাকার মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়া হয়নি। এনসিপি যে দাবি করেছে, তা কিছু ব্যক্তির স্বার্থে করা হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট বাস কাউন্টারে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়। কয়েক দিন পরপর কাউন্টারে গিয়ে ঝামেলা করবে, এসব কার ইন্ধনে করা হচ্ছে, তা বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। গ্রেপ্তার অরুণ চন্দ্র দাস এনসিপির কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ না করলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শ্রমিকদের দাবি, অরুণকে মুক্তি দিতে হবে। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।

জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম জানিয়েছেন, ভোগান্তি নিরসনে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের আলোচনা অব্যাহত রেখেন তাঁরা।

উল্লেখ্য, এর আগে, এক জুলাইযোদ্ধাকে নাজেহাল করার অভিযোগ ঘিরে শুরু হওয়া এই সংকটের সূত্রপাত গত শুক্রবার সন্ধ্যায়। মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হানকে নাজেহালের অভিযোগ ওঠে ইউনাইটেড পরিবহনের এক শ্রমিকের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে ইউনাইটেড পরিবহনের ব্যানারে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক শামীমের মালিকানাধীন বাস বন্ধের দাবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন জুলাইযোদ্ধা ও এনসিপি নেতারা। শনিবার দুপুরে পাল্টা কর্মসূচি দেয় শ্রমিক সংগঠনগুলোও। পরে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ইউনাইটেড পরিবহনের ১৬টি বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর উভয় পক্ষের কর্মসূচি স্থগিত হলেও ১৬টি বাস বন্ধ রাখা ও এক শ্রমিককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আবারও নতুন করে ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলার ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিক সমিতি।