মহান বিজয় দিবসে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সাধারণ মানুষের ঢল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
মঙ্গলবার ভোর থেকেই স্মৃতিসৌধ ও আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সর্বসাধারণের জন্য ফটক খুলে দেওয়া হয়। এরপর স্মৃতিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এর আগে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করে মূল বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে সকাল ৭টা ১০ মিনিটের দিকে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তাঁরা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা। স্ট্রিম ছবিএ সময় বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। পরে দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় তিন বাহিনীর প্রধান, উপদেষ্টা, কূটনীতিক, আহত ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবার, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার গাড়িবহর ঢাকার উদ্দেশে স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করে।
রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় দেখা যায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কজুড়েও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ কেউ চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। ধামরাইয়ের সানোড়া ইউনিয়নের মহিষাসী এলাকা থেকে আসা ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘প্রতি বছর ভোর রাতেই চলে আসি, যাতে আগেভাগে ঢুকতে পারি। সরকারের ঊর্ধ্বতনরা চলে যাওয়ার পরই ঢুকেছি। বেদিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তারপর ফিরবো।’
মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি, তাদের স্মরণে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’
জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা। স্ট্রিম ছবিতিনি জানান, আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কে ১৩টি সেক্টরে ৪ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
এর আগে বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতিতে সেজে ওঠে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। গণপূর্ত বিভাগ জানায়, প্রায় এক মাস ধরে ১০৮ হেক্টর এলাকাজুড়ে পরিচ্ছন্নতা, রঙ করা, ফুলের চারা ও টব বসানো, লেক সংস্কারসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। লাল-সবুজ আলোয় সাজানো হয় স্মৃতিসৌধ এলাকা। নিরাপত্তা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা। নবম পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডিংয়ে তিন বাহিনীর সদস্যরা কুচকাওয়াজ ও মহড়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন।