রাজধানীর সেনানিবাসে ডিজিএফআই সদর দপ্তরের ভেতরে একটি ‘আয়নাঘর’ বা গোপন বন্দিশালা ছিল। সেখানে একটি গামছা দিয়ে ২৫ বন্দি দৈনন্দিন কাজ সারতে বাধ্য হতেন। সবার জন্য রাখা ছিল মাত্র একটি টুথব্রাশ। রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম ও নির্যাতনের মামলার শুনানিতে এসব বর্ণনা দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশন জানায়, বন্দিশালার অবস্থান ছিল মূলত ডিজিএফআই সদর দপ্তরের দক্ষিণ পাশে মেস বি-এর মাঝখানে একটি দোতলা ভবনে। সেখানে ছোট ছোট সেলে বন্দিদের বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছিল। বাইরে থেকে সেখানে কী চলত, বোঝার উপায় ছিল না।
শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) নামে পরিচিত বন্দিশালায় চলেছে অমানবিক নির্যাতন। বন্দিরা দিনের পর দিন সূর্যের আলো দেখতে পাননি। পরিবেশ ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর ও অমানবিক।
তিনি বলেন, বাথরুমের সামনে ঝোলানো একটি নোংরা গামছা দিয়েই ২০-২৫ বন্দিকে হাত-মুখ ও শরীর মুছতে হতো। দিনের পর দিন একই গামছা ব্যবহারের ফলে তাদের মধ্যে চর্মরোগ, অ্যালার্জি ও খোসপাঁচড়া দেখা দিতো। অপরিচ্ছন্ন গামছা ব্যবহারের কারণে প্রায় বন্দিদের চোখ উঠত। এ ছাড়া ২৫ বন্দির জন্য মাত্র একটি টুথব্রাশ রাখা থাকত।
তাজুল ইসলাম বলেন, আয়নাঘরে বন্দিদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে অভিনব কায়দায় শব্দদূষণ করা হতো। বন্দিরা যাতে বাইরের কোনো শব্দ এমনকি আজান শুনতে না পান, সেজন্য সেলের ভেন্টিলেটরে থাকা এক্সজস্ট ফ্যান উচ্চ শব্দে চালিয়ে রাখা হতো। কখনো কখনো সাউন্ড বক্সে জোরে গান বাজানো হতো। এর মধ্যেও কখনো কখনো ফ্যান চালু করার আগেই অনেকে মসজিদের আজান বা জানাজার ঘোষণা শুনে বুঝতে পারতেন তারা সেনানিবাস এলাকাতেই আছেন।
প্রসিকিউশন জানায়, আয়নাঘরের সেলগুলো ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। মোটা রডের গ্রিলের বাইরে স্টিলের ঢাকনা দিয়ে আলো-বাতাস ঢোকার পথ বন্ধ করে রাখা হতো। অথচ প্রতিটি সেলে বন্দিদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, গুম থেকে ফিরে আসা ভুক্তভোগীরা তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে গিয়ে নিজেদের সেল শনাক্ত করেছেন। বাঁচার আশা ছেড়ে দিলেও, অনেকে নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে দেয়ালের কোণায় নাম বা সংকেত লিখে রেখেছিলেন, যা আলামত হিসেবে পাওয়া গেছে।