বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এপোলো ও লেখক মারুফ মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদনের নিন্দা জানিয়েছেন ৪১ নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, এই উদ্যোগ জুলাই অভ্যুত্থানের মূল চেতনা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ শঙ্কা প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের আমলে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর হামলা ও মামলা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। বর্তমানে এক সম্পাদকের পক্ষ থেকে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার আবেদন সেই দমনমূলক সংস্কৃতিকেই ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাঁরা সবাই স্বৈরাচারী শাসনামলে নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন ও গণঅভ্যুত্থানেও সক্রিয় ছিলেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যমে হামলা ও ছায়ানটে ভাঙচুরের ঘটনা সমাজে গভীর ভীতি সৃষ্টি করেছে। ফেসবুকে কেবল কিছু প্রশ্ন তোলার কারণে মামলার আবেদন এই আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁরা সব ধরনের মতপ্রকাশের বাধাহীন পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন:
শিল্পী অরূপ রাহী, শিক্ষক আর রাজী, আ-আল মামুন, জাহেদ উর রহমান, লেখক পাভেল পার্থ, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, ফাতেমা শুভ্রা, অধ্যাপক সৌভিক রেজা, কবি রাসেল রায়হান, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, কথাসাহিত্যিক জব্বার আল নাঈম, প্রকাশক সাঈদ বারী, সাংবাদিক কামরুল আহসান, লেখক তুহিন খান, গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ, কবি মৃদুল মাহবুব, অ্যাক্টিভিস্ট শামীম আরা নীপা, লেখক জাহিদ জগৎ, প্রকাশক মাহবুবুর রাহমান, লেখক সাদ রহমান, সাংবাদিক উপল বড়ুয়া, কবি সোয়েব মাহমুদ, রহমান হেনরী, কথাসাহিত্যিক আশরাফ জুয়েল, অধ্যাপক আবুল ফজল, কবি চঞ্চল বাশার, গীতিকার মহসিন আহমেদ, দীপান্ত রায়হান, গবেষক রুদ্র আল মোত্তাকিম, কবি অর্বাক আদিত্য, প্রকাশক মাহবুবুর রহমান, গণমাধ্যমকর্মী সাইদুন নবী, গবেষক আরিফ রহমান, শিক্ষক মোহাম্মদ শাজাহান, অ্যাক্টিভিস্ট হুমায়ুন কবীর, লেখক আবুল কালাম আল আজাদ, লেখক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, চলচ্চিত্রকার ইমামুল বাকের এ্যাপোলো, কবি মিসবাহ জামিল এবং আলোকচিত্রী মোল্লাহ মোহাম্মদ সাঈদ।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ফোরামও বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে তাঁরা বলেছে, 'আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন দুই শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, ফ্যাসিবাদের আমলে প্রথম বুদ্ধিজীবী হিসেবে জেলখাটা, হামলা মালমার শিকার হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং জুলাই আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় মুখ, কলামিস্ট, সম্পাদক জনাব এফ এম রাশেদুল হক মল্লিক বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবী জানাই এবং এ ধরনের ফ্যাসিবাদ সুলভ আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।'
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক চর্চায় এবং সত্য ও ন্যায়ের সঙ্গে সব সময় থাকবে উল্লেখ করে পৃথক বিবৃতিতে বলেছে, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল দৃঢ়ভাবে মনে করে, এটি স্পষ্টভাবে মতপ্রকাশ ও গণতন্ত্র চর্চার পথে একটি বাধা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের মূল ভিত্তি। এই ধরনের আইনগত পদক্ষেপকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল অবিলম্বে নিন্দা জানাচ্ছে।'