leadT1ad

ওসমান হাদির ওপর গুলি

অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের ৩ মাসেই জামিন, বেরিয়েই গুলি, বিচারিক বিবেচনা নিয়ে প্রশ্ন আসিফ নজরুলের

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

এআই গ্রাফিক

র‍্যাবের হাতে দুটি বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। গুরুতর এই অপরাধের পর মাত্র তিন মাসের মাথায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। আর কারাগার থেকে বেরিয়েই ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আদাবরের ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী’ ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুলের বিরুদ্ধে।

অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত একজন দাগি আসামির এভাবে আইনি ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে আসা এবং আবারও অন্যের জীবন বিপন্ন করার ঘটনাটি দেশের বিচারিক অঙ্গনে নতুন করে ‘জামিন বিতর্ক’ উসকে দিয়েছে। বিচারিক আদালতের বিবেচনা ও প্রভাবশালীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

মামলার নথিপত্র ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত হওয়া ফয়সাল ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গত বছরের নভেম্বরে গ্রেপ্তার হন ফয়সাল। এর মাত্র তিন মাসের মাথায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি (২০২৫) হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ তাঁকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।

বিচারপতি মোহাম্মদ আলী এবং বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কায়সার কামাল ও মো. মাহফুজুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ জুলফিকার আলম শিমুল জামিনের বিরোধিতা করলেও আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে জামিন মঞ্জুর করেন।

গুরুতর অপরাধের মামলায় এমন তড়িঘড়ি জামিন পাওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টে অস্ত্র মামলার জামিন সহজে হওয়ার কথা নয়। এটি তখনই হতে পারে, যখন প্রভাবশালী আইনজীবীরা এসব মামলায় জামিন দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এই আইনজীবীদের অধিকাংশই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা। অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের প্রভাবে এসব জামিন হওয়া সহজতর হয়।’

পুলিশের দুর্বল অভিযোগপত্র

আদালত ও পুলিশের নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর আদাবরের একটি অফিসে ঢুকে পিস্তল ঠেকিয়ে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মাধ্যমে ফয়সাল আলোচনায় আসেন। তখন তিনি নিজেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য পরিচয় দিয়ে দম্ভোক্তি করেছিলেন। এরপর ৭ নভেম্বর র‍্যাব-২ অভিযান চালিয়ে সোফার নিচ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের দাখিলকৃত চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে আসামির রাজনৈতিক পরিচয় বা সুনির্দিষ্ট অপরাধের ভয়াবহতা অনেক ক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা গত ১৬ মাসের কিছু মামলার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ আসামির সম্পৃক্ততার তথ্য বা দলীয় পরিচয় অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেনি। ফলে বিচারিক নথিতে আসামির অপরাধের গভীরতা উঠে আসেনি।’

হাইকোর্ট বিচারিক কাজে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ফয়সাল করিম মাসুদের জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে উচ্চ আদালতের বিচারিক বিবেচনাবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে কীভাবে ৪ ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় জামিন হয়েছিল, তা নিয়ে আমি কয়েক মাস আগে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলাম। গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যার সংযোগ স্পষ্ট, যে ব্যক্তি জামিন পেলে পুনরায় অপরাধ করতে পারে, তাকে জামিন দেওয়া অস্বাভাবিক ও অসংগত।’

‘জামিন বাণিজ্য থামান’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট স্মরণ করিয়ে দিয়ে আইন উপদেষ্টা জামিন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তদের সতর্ক করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘জামিন বাণিজ্যে যাঁরা লিপ্ত আছেন, তাঁদের বলছি—এবার থামুন। আমাদের ছেলেদের জীবন বিপন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত দেবেন না। এক গণহত্যাকারী পাশের দেশে বসে আমাদের জুলাইয়ের বীরদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে জামিন দিয়ে সেই গণহত্যাকারীর অনুসারীদের এই সুযোগ করে দেবেন না।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত