leadT1ad

বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া: নেতৃত্ব, দৃঢ়তা ও গণতন্ত্রের প্রতীক

খালেদা জিয়া। সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে তিনি কেবল একজন রাজনীতিবিদই নন, বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা ও অবদান নিয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক ও জরুরি।

রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও অভিভাবকসুলভ ব্যক্তিত্ব

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তাঁর সংযম ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার। তিনি সবসময়ই একটি অভিভাবকসুলভ ভাবমূর্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে যারা তাঁর বিরোধী, তাদের সম্পর্কেও তিনি প্রকাশ্যে কখনো বিদ্রূপাত্মক বা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন। বিগত অনেকগুলো বছর দীর্ঘ কারাবাস সহ্য করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সমালোচনা করতে হেলা করেনি। সেই সব সমালোচনা অনেক সময় শালিনতা ও স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু খালেদা জিয়া কখনো প্রকাশ্যে ব্যক্তিগত কটুবাক্য বা অশালীন শব্দ প্রয়োগ করেননি। এই সংযম ও ধৈর্য তাঁর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে আছেন।

‘আপোষহীন নেত্রী’ উপাধির প্রেক্ষাপট

খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের জনগণ 'আপোষহীন নেত্রী' বা 'দেশনেত্রী' উপাধিতে ভূষিত করেছে। এই উপাধি অর্জনের পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস।

নব্বইয়ের দশকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় তাকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রস্তাব ও প্রলোভন দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ১৯৮৬ সালের নির্বাচন ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। সে সময় এরশাদের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একটি ঐক্যমত ছিল। কিন্তু সেই ঐক্যমত ভঙ্গ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নেয়। বিপরীতে, খালেদা জিয়া ছিলেন তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। তিনি সামরিক শাসনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তাঁর এই অনড় অবস্থান সে সময় জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয় এবং তখন থেকেই জনগণ তাকে 'আপোষহীন নেত্রী' হিসেবে গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে ভিন্ন সরকারের আমলেও তিনি তাঁর অবস্থানে অনড় থেকেছেন, যা তাঁর এই ভাবমূর্তিকে আরও দৃঢ় করেছে।

গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও সংস্কার

বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় খালেদা জিয়ার নীতিগত অবদান অনস্বীকার্য। তিনি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সরে এসে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে আসে। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন ছিল তাঁর অন্যতম সেরা রাজনৈতিক কীর্তি। এছাড়া, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করাও ছিল তাঁর নেতৃত্বের একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার ভূমিকা বিশেষ আলোচনার দাবিদার। তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে সক্ষম। তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ ও দৃঢ়তা দেশের মানুষের কাছে একটি অনুপ্রেরণার উৎস। দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তাঁর নেতৃত্ব আগামী দিনেও আলোচিত হয়ে থাকবে।

লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক

Ad 300x250

সম্পর্কিত