গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধের বিচার চলাকালে আসামিরা নিজেদের ‘সেনা কর্মকর্তা’ পরিচয় ব্যবহার করে মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত বা সেন্সেটাইজ করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে এজলাসে শুনানিকালে প্রসিকিউশন ও বিবাদীপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ঘটে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর স্পষ্টভাবে বলেন, ট্রাইব্যুনালে কোনোভাবেই সেনাবাহিনীর বিচার হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হাজারও মানুষকে গুম করা হয়েছে। শত শত মানুষকে হত্যার পর লাশ নদী-নালা, খাল-বিল ও সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আসামিরা যখন এসব অপরাধ করেছিলেন, তখন তারা পুলিশ বা র্যাবের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তারা তখন সেনা কমান্ডের অধীনে বা সেনাবাহিনীর পোশাকে ছিলেন না। তারা ছিলেন শৃঙ্খলার বাইরে।
তাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বিচার প্রক্রিয়ায় আসামিপক্ষ সুকৌশলে তাদের পুলিশ বা র্যাব পরিচয় ভুলে গিয়ে বারবার সেনাবাহিনীর অফিসার পরিচয়টি সামনে আনার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, এই সেনা পরিচয়কে বাইরে ব্যবহার করার মাধ্যমে তারা মামলাটাকে সেন্সেটাইজ করার চেষ্টা করছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অসৎ উদ্দেশ্যেই এটা করছেন।
চিফ প্রসিকিউটর মন্তব্য করেন, মূলত আদালতের পরিবেশ উত্তপ্ত করে এবং জ্যেষ্ঠতার মিথ্যা দাবি তুলে গুমের বিচারের মূল ফোকাস থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে এক ধরনের হাইপ তৈরি করে এ বিচারের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা চালানো।
আদালতে আইনজীবীদের শিষ্টাচার ও জ্যেষ্ঠতা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী নিজেকে সিনিয়র দাবি করে আদালতের সম্মান (রেসপেক্ট) চেয়েছিলেন। কিন্তু রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি ২০২৫ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অথচ তিনি দাবি করছেন তিনি সিনিয়র।
আইনি ব্যাখা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার-১৯৭২ এর আর্টিকেল ২৬ অনুযায়ী, চিফ প্রসিকিউটর অ্যাটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদা ভোগ করেন। আইন অনুযায়ী, অ্যাটর্নি জেনারেল যখন আদালতে বক্তব্য রাখবেন, তখন অন্য কোনো আইনজীবী দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারেন না—সে তিনি যত সিনিয়র বা জুনিয়রই হোন না কেন। অথচ আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সেই শিষ্টাচার বা ‘ডিসেন্সি’ রক্ষা করেননি। উল্টো গণমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করছেন তাকে মর্যাদা দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশের পর সূচনা বক্তব্যের তারিখ ঘিরে আদালতে বাদানুবাদের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিচারকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।