leadT1ad

মানবতাবিরোধী অপরাধ

আট অভিযোগে বিচার শুরু, নির্দোষ দাবি ইনুর

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ০৬
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু। স্ট্রিম ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আটটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্য দিয়ে এ মামলায় তার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।

আজ রোববার (২ নভেম্বর) রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। একই সঙ্গে আদালত সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

অভিযোগ গঠনের পর হাসানুল হক ইনুর কাছে ‘তিনি দোষী না নির্দোষ’—এ বিষয়ে জানতে চান ট্রাইব্যুনাল। জবাবে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ দাবি করে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এসব গায়েবি মামলা। গায়েবি মামলার ঝাপটা এখানে লেগেছে। আশা করছি মহামান্য আদালত সেটা মোকাবিলা করবেন।’

হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার। আমি নির্দোষ, সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ।’

ট্রাইব্যুনাল-২ এর আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আন্দোলন দমনে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ, কারফিউ জারি, শুট অ্যাট সাইট—এগুলোর ব্যাপারে তার যে ভূমিকা ছিল, সেই কমান্ড ও সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন পদের দায়) কারণে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো গঠন হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘তিনি (ইনু) বিভিন্ন সময়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, ছাত্রদেরকে সন্ত্রাসী, জামাত-শিবির, বিএনপি এগুলো বলে তাদের হত্যা করাটা যে যৌক্তিক, সেই ধরনের একটা ইমপ্রেশন তৈরি করেছেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে ড্রোন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করা, বোম্বিং করা, এভাবে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার যে পরিকল্পনা, সেগুলো নিয়ে প্রাইম মিনিস্টারের (প্রধানমন্ত্রীর) সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। তিনি তাতে সম্মতি জানিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন।’

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, ‘সর্বশেষ আট নম্বর অভিযোগটি হলো, কুষ্টিয়া শহরে আগস্টে ছয়জন ব্যক্তিকে তার পরামর্শ ও নির্দেশে সেখানকার পুলিশ, প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও ১৪ দলীয় জোট মিলে হত্যা করে। এই সব মিলিয়ে আটটি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে গঠন করা হয়েছে।’

হাসানুল হক ইনুর ‘গায়েবি মামলা’ সংক্রান্ত বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে অভিযোগ গঠনের পরে আইনের বিধান হচ্ছে, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয় যে, আপনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন হয়েছে, আপনি কি নিজেকে নির্দোষ মনে করেন, নাকি দোষী মনে করেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি একটা জবাবই শুধু দিতে পারবেন, সেটা হচ্ছে উনি দোষী না নির্দোষ। এর বাইরে তিনি যে সমস্ত বক্তব্য দিয়েছেন, এগুলো আমলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

তাজুল ইসলাম আরও যোগ করেন, ইনু নিজেকে নির্দোষ দাবি করায় মামলাটি বিচারে যাচ্ছে। সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমেই প্রসিকিউশন তাকে দোষী প্রমাণের চেষ্টা করবে এবং আসামিপক্ষকে প্রমাণ করতে হবে তিনি নির্দোষ।

এর আগে, গত ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে। ২৮ অক্টোবর আসামিপক্ষের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী শুনানি করে হাসানুল হক ইনুর অব্যাহতি চান। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছিলেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত