ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যার মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম ওরফে দাউদ খান যে দেশেই নেই, অবশেষে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এক সপ্তাহ আগেও তার অবস্থান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ধোঁয়াশা থাকলেও আজ রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) নিশ্চিত করেছে, ফয়সাল ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন। সেখানে তাকে পালাতে ও আশ্রয় দিতে সহায়তাকারী দুই সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করেছে মেঘালয় পুলিশ।
আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার জানান, ফয়সাল দেশে আছেন নাকি ভারতে পালিয়ে গেছেন তা নিয়ে এক সপ্তাহ আগেও পুলিশের সন্দেহ ছিল। তবে এখন তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফয়সালকে ওপারে পালাতে সহায়তা করা দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, হাদি হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ফয়সালের বাবা-মা, স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। তদন্ত অভিযানে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার চেক জব্দ করার তথ্যও জানিয়েছে পুলিশ।
তবে হাদিকে কেন হত্যা করা হলো, সেই মোটিভ বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। নজরুল ইসলাম বলেন, যেহেতু মূল সন্দেহভাজনকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, তাই হত্যার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি।
মামলার এজাহার ও তদন্ত সূত্র বলছে, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন শরিফ ওসমান হাদি। মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে আসা প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদ হাদিকে লক্ষ্য করে চলন্ত অবস্থায় গুলি চালায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, হত্যাচেষ্টা ও বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়। তবে হাদির মৃত্যুর পর গত ২০ ডিসেম্বর আদালতের আদেশে মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) সংযোজন করা হয়।