পাবলিক ও শ্রেণি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী এবং শ্রুতিনির্ভর পরীক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে ‘পাবলিক ও শ্রেণি পরীক্ষায় শ্রুতিলেখক-এর সেবা গ্রহণ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৫’ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন এই নীতিমালার আওতায় এখন থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষায় অভিন্ন নিয়মে শ্রুতিলেখক ও অতিরিক্ত সময়ের সুবিধা পাওয়া যাবে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, স্থায়ী প্রতিবন্ধিতা অথবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে যারা নিজ হাতে লিখতে অক্ষম, তারা এই নীতিমালার সুবিধা পাবেন। সুবিধা পেতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘সুবর্ণ নাগরিক কার্ড’ অথবা সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার দেওয়া সর্বোচ্চ ছয় মাস মেয়াদি প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।
শ্রুতিলেখকের যোগ্যতা ও নিয়মাবলি
নতুন নীতিমালায় শ্রুতিলেখকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, যা পরীক্ষার্থীর চেয়ে অবশ্যই নিম্নধাপের হতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, ষষ্ঠ শ্রেণির পরীক্ষার্থীর জন্য পঞ্চম শ্রেণির, এসএসসির জন্য অষ্টম শ্রেণির এবং এইচএসসির জন্য দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রুতিলেখক হতে পারবেন। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের জন্য এইচএসসি এবং মাস্টার্স ও বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী শ্রুতিলেখকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একজন শিক্ষক শ্রুতিলেখক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। শ্রুতিলেখকের স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর হাতের লেখা এবং দ্রুত লেখার দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আবেদন প্রক্রিয়া
পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার্থীকে অনলাইনে বা সরাসরি শ্রুতিলেখকের জন্য আবেদন করতে হবে। পরীক্ষার্থী চাইলে নিজেও শ্রুতিলেখক মনোনয়ন দিতে পারবেন। ব্যর্থ হলে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ শ্রুতিলেখক সরবরাহ করবে। পরীক্ষার্থী সর্বোচ্চ দুজন শ্রুতিলেখকের অনুমোদন নিতে পারবেন এবং পরীক্ষার অন্তত সাত দিন আগে শ্রুতিলেখকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন।
অতিরিক্ত সময় ও আসন বিন্যাস
শ্রুতিনির্ভর পরীক্ষার্থীরা মূল সময়ের এক-চতুর্থাংশ অতিরিক্ত সময় পাবেন। অর্থাৎ প্রতি এক ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে, যা কোনোভাবেই ১০ মিনিটের কম হবে না। এছাড়া পরীক্ষার্থীদের জন্য নিচতলায় আসন ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিশেষ টেবিল-চেয়ার বা বেডের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার
সাধারণ জ্যামিতি বক্স ও ক্যালকুলেটরের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা টকিং ক্যালকুলেটর, ব্রেইল স্লেট, টেইলর ফ্রেম, হুইলচেয়ার ও ম্যাগনিফায়ার ব্যবহার করতে পারবেন। বিশেষ ক্ষেত্রে অনুমতি সাপেক্ষে ইন্টারনেট সংযোগবিহীন কম্পিউটার ব্যবহার করে পরীক্ষা দেওয়া যাবে। পরীক্ষার্থী নিজের উপযোগী কিবোর্ড ও হেডফোন ব্যবহার করতে পারবেন। নীতিমালায় বলা হয়েছে, শ্রুতিলেখক নির্বাচনে কোনো অসঙ্গতি বা জালিয়াতির প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হবে। এছাড়া শ্রুতিলেখকদের জন্য নির্ধারিত সম্মানী প্রদান এবং সনদপত্র দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।