আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করবেন না বলে জানিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জহিরুল ইসলাস খান পান্না (জেড আই খান পান্না)।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ক্ষমা চান তিনি। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য হলেন বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
কার্যক্রমের শুরুতে ট্রাইব্যুনালের উপস্থিত ছিলেন না পান্না। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনাল উষ্মা প্রকাশ করে তাঁকে তলব করলে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে হাজির হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
জেড আই খান পান্না আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন। এর আগে গত ১২ আগস্ট তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে প্রথম মামলায় আইনি লড়াই করতে চেয়েছিলেন। সে সময় ট্রাইব্যুনাল পান্নার আবেদন গ্রহণ না করে, আমীর হোসেনকে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেন। সে সময় ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, ‘ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর স্টেশন মাস্টারকে বলে ট্রেনে ওঠার সুযোগ নেই।’
হাসিনার মামলা থেকে সরে জয়-পুতুলের পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না
পান্নাসহ শেখ হাসিনার সমর্থকরা এর সমালোচনা করেন। তাদের অভিযোগ, শেখ হাসিনাকে পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ দিতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে এবার ইচ্ছা প্রকাশ করলে গত ২৩ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) হিসেবে পান্নাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আজ শুনানির সময় তিনি আদালতে ছিলেন না। বিষয়টি নজরে এলে ট্রাইব্যুনাল ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সামাজিকমাধ্যমে ঘোষণা দিয়েও আদালতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন না করে অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে দ্রুত ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতের নির্দেশের ১০ মিনিটের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে আসেন আইনজীবী পান্না। তিনি বিচারকদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়বেন না বলে জানান। তাঁর এ ঘোষণার পর ওই দুই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে নতুন স্টেট ডিফেন্স হিসেবে আইনজীবী আমীর হোসেনকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।
নিয়োগ পাওয়ার তিন দিন পর ২৭ নভেম্বর জেড আই খান পান্না তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে ভিডিওবার্তায় জানান, তিনি শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় লড়বেন না। তবে আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে প্রত্যাহার না করায় আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছিল, যার অবসান হলো আজ।
ভিডিওবার্তায় তিনি আরও বলেছিলেন, যে আদালতের প্রতি শেখ হাসিনার আস্থা নেই, সেই আদালতে আমি তাঁকে ডিফেন্ড (আইনি সুরক্ষা) করতে পারি না।