leadT1ad

মতবিনিময় ও পরামর্শ সভায় বক্তারা

রাজনৈতিক বিবেচনায় তড়িঘড়ি করে কনটেইনার টার্মিনাল চুক্তি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৫১
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ‘অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো করে কনটেইনার টার্মিনাল চুক্তি’ শীর্ষক মতবিনিময় ও পরামর্শ সভা। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের লালদিয়া ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁওতে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতারা। তারা অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে ‘সুপারসনিক’ গতিতে এবং অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। অবিলম্বে এই চুক্তি বাতিল না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ‘অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো করে কনটেইনার টার্মিনাল চুক্তি’ শীর্ষক মতবিনিময় ও পরামর্শ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ঘটনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতি বিবেচনা না করে প্রধানত রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার অতি গোপনীয়তায় এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যে সরকারের চরিত্র অন্তর্বর্তীকালীন, তারা কীভাবে ২২ এবং ৩০ বছরের জন্য দুটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি লিজ চুক্তি করে? দেশপ্রেমিক কোনো সরকার এভাবে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় জাতীয় স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ নিতে পারে না।

সাইফুল হক আরও বলেন, বিদেশিদের হাতে কনটেইনার টার্মিনাল বা পোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। অতীতে আওয়ামী লীগ সরকার আদানির সঙ্গে অসম চুক্তি করে দেশকে বিপদে ফেলেছিল, বর্তমান সরকারও যেন সেই স্বৈরাচারী পথেই হাঁটছে।

গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই যেভাবে এই চুক্তি করা হয়েছে, তাতে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রবল বিরোধিতা ও বিতর্কের মধ্যে তড়িঘড়ি করে এই চুক্তি করার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। তিনি সরকারকে অবিলম্বে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে এই চুক্তি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ বা জনগণের স্বার্থে নয়, বরং অন্য কোনো মহলের স্বার্থে জনমত উপেক্ষা করে এই চুক্তি করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে যেসব যুক্তি দেখানো হচ্ছে তা উদ্ভট ও হাস্যকর। জনগণ দেশবিরোধী এ ধরনের চুক্তি কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

এলডিপির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, আমাদের বন্দর বর্তমানে লাভজনক অবস্থায় রয়েছে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একে আরও দক্ষ করে তোলার সুযোগ আছে। টার্মিনাল নির্মাণে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি পুঁজি আমাদের দেশীয় উদ্যোক্তারা জোগান দিতে সক্ষম। তাই বিদেশিদের হাতে বন্দরের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ড. আবু ইউসুফ সেলিম, গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক কবির হাসান এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আহ্বায়ক আর ইউ হাবিব প্রমুখ। নেতারা একশুরে দাবি করেন, অবিলম্বে এই আত্মঘাতী চুক্তি বাতিল করে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে, অন্যথায় জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত