leadT1ad

নিজের বোনের বাসা থেকেও টাকা-স্বর্ণালঙ্কার চুরি করেছিল আয়েশা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫২
পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার আয়েশা। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনার নেপথ্যের বর্ণনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনাটি বিস্তারিত তুলে ধরেন তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান। তিনি জানান, গ্রেপ্তার আয়েশার আগেও চুরির অভ্যাস ছিল। নিজের বোনের বাসা থেকেও ২ লাখ টাকা এবং ৪ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করেছিল। হুমায়ুন রোডের চুরির একটি ঘটনায় তাকে আটকও করা হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম বলেন, মা–মেয়েকে হত্যার প্রায় ৬০ ঘণ্টার মাথায় মূল আসামি আয়েশাকে স্বামীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তেজগাঁও বিভাগের তৎপরতায় ‘ক্লুলেস’ এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য দ্রুত উদঘাটন হয়। অতীতের বিভিন্ন মামলা ও জিডির তথ্য বিশ্লেষণ করে আয়েশাকে শনাক্ত করা হয় এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার সম্ভব হয়।

তিনি জানান, গত ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে লায়লা আফরোজ ও তাঁর মেয়ে নাফিসাকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় নিহত লায়লার স্বামী আজিজুল ইসলাম (৫৭) তিন দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মী ‘আয়েশা’কে আসামি করে মামলা করেন।

তদন্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—গৃহকর্মী আয়েশার কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা পরিচয় সংরক্ষিত না থাকা। সিসিটিভি ফুটেজেও তাকে শনাক্ত করা যায়নি, কারণ সে প্রতিবারই পুরো বোরকা পরে আসা-যাওয়া করত।

ডিএমপি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন সে ২ হাজার টাকা চুরি করে। তৃতীয় দিনে টাকার বিষয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তর্ক হয়। চতুর্থ দিনে সুইচ গিয়ার চাকু লুকিয়ে বাসায় আসে। আবার তর্ক শুরু হলে গৃহকর্ত্রী ফোনে স্বামীকে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে আয়েশা পিছন থেকে ছুরি মারে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। একই সময়ে মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। নাফিসা ইন্টারকমে ফোন দিতে চাইলে আয়েশা ইন্টারকমের মূল তার ছিঁড়ে ফেলে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুজনেরই মৃত্যু হয়।

অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর আয়েশা নিজের রক্তমাখা কাপড় বদলে নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বের হয়। ব্যাগে ল্যাপটপ ও ফোন নিয়ে যায়। ঢাকা ছাড়ার পথে সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন ও পোশাকভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেয়। তিনি জানান, আয়েশার আগেও চুরির অভ্যাস ছিল; নিজের বোনের বাসা থেকেও ২ লাখ টাকা এবং ৪ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করেছিল। হুমায়ুন রোডের চুরির একটি ঘটনায় তাকে আটকও করা হয়েছিল।

তিনি ঢাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, বাসায় গৃহকর্মী রাখার আগে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। গৃহকর্মীর পরিচয়পত্র ও তাকে শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংরক্ষণ করা জরুরি, কারণ পরিবারের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এতে জড়িত।

জোড়া হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই শহিদুল ওসমান মাসুম আজ দুপুর পৌনে ১টার দিকে স্ট্রিমকে জানান, হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বির দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। শিগগিরই আসামিদের আদালতে হাজির করা হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত