জুলাই সনদের মাধ্যমে ড. ইউনূস দেশকে ‘সভ্য’ ঘোষণা দিলেও বাস্তবে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মারার বর্বরতা চলছে বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর এই মোর্চা বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার এখন ‘ফেসবুক কেন্দ্রিক’ হয়ে পড়েছে, রাজপথে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে জোটের নেতারা এসব কথা বলেন। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড, ভালুকায় শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা এবং সংবাদমাধ্যমে হামলার প্রতিবাদে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, ‘ড. ইউনূস জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে আমাদের সভ্য জাতি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এটা কেমন সভ্যতা, যেখানে মানুষকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মারা হয়? এর আগে নূরান পাগলা নামের এক পীরের লাশ কবর থেকে তুলে পোড়ানো হয়েছে।’
শরীফ ওসমান হাদির খুনির পলায়ন প্রসঙ্গে জুবেল অভিযোগ করেন, হাদিকে হত্যার এক ঘণ্টার মধ্যে খুনির পরিচয় মিললেও তাকে আটকানো হয়নি। ৫ আগস্টের পর যারা আওয়ামী লীগ নেতাদের বর্ডার পার করিয়েছে, তারাই হাদির খুনিকে ভারতে পালিয়ে যেতে ‘সেফ এক্সিট’ দিয়েছে।
সরাসরি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায়ী করে জুবেল বলেন, ‘হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে ফ্যাসিস্ট রাজনীতি শুরু হয়েছে, তার মূলে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তাকে শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না, গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিতে হবে। তাহলেই বেরিয়ে আসবে কারা গণমাধ্যমে হামলা চালাচ্ছে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, উপদেষ্টারা কেবল ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দায় সারছেন। সরকার প্রধানের পেজ থেকে আমরা হামলার খবর পাই। এটি প্রমাণ করে, সরকারের রাস্তায় কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। গত দেড় বছরে হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ তিনগুণ বেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সমাবেশে সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার নিন্দা জানানো হয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, হাদি হত্যার বিচারের দাবির আড়ালে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও উদীচী তছনছ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের নেতারা এসব উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, হাদি ভোটাধিকার আদায়ের লড়াইয়ের সাথী ছিলেন। তাকে হত্যার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক সাজিদুল ইসলাম বলেন, সরকার গোলটেবিল বৈঠক করতে পারে, কিন্তু নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারে না।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রফিকুজ্জামান ফরিদ। এতে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়নের ভিপি মাঈন আহমেদ এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সংগঠক বাহাদুর ত্রিপুরা।