দীর্ঘ অবরুদ্ধ দশা থেকে নিজের বাসার ফটকে এসে পুলিশ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আমাকে আপনারা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। সাহস থাকলে ছেড়ে দিয়ে দেখেন।’
স্ট্রিম প্রতিবেদক

গায়েবি মামলা, গণগ্রেপ্তার– শেখ হাসিনার শাসনামলের আলোচিত শব্দযুগল। বিরোধী মতের অসংখ্য মানুষ এর শিকার। তাদের মধ্যে অনেকে কাটিয়েছেন ‘আয়নাঘর’খ্যাত গোপন বন্দিশালায়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিপীড়নের বিচিত্র সব কৌশলের মুখোমুখি হয় মানুষ।
বাদ যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও, যিনি সবকিছু পেছনে রেখে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পাড়ি জড়িয়েছেন না ফেরার দেশে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদফা তাঁকে ‘বালুর ট্রাক’ কৌশলে আটকে রেখেছিলেন। ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘দেশটা কি আপনাদের একলার? পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের, যে গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে আমাদের প্রোগ্রাম বন্ধ করতে চান? পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রোগ্রাম বন্ধ করতে চান?’
২০১৩ সাল, খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা। তৎকালীন ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ডাক দেন খালেদা জিয়া। সেই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঠেকাতে তাঁর গুলশানের বাড়ি ‘ফিরোজা’র আশেপাশের সড়কে রাখা হয়েছিল বালুভর্তি ট্রাক। দীর্ঘ অবরুদ্ধ দশা থেকে নিজের বাসার ফটকে এসে পুলিশ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আমাকে আপনারা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। সাহস থাকলে ছেড়ে দিয়ে দেখেন।’
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর দিনভর মানুষের স্মৃতিতে বারবার ফিরে এসেছে এক যুগ আগের সেই দৃশ্য– গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজার’ সামনে আড়াআড়ি করে রাখা বালুভর্তি ট্রাক, পুলিশি পাহারা এবং ফটকের ভেতর থেকে ভেসে আসা ক্ষুব্ধ এক নেতার কণ্ঠস্বর।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির দীর্ঘ এক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। তবে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসে উত্তাল ২০১৩ ও ২০১৫ সাল এবং সেই সময়ের ‘বালুর ট্রাক’ ও ‘অবরুদ্ধ’ থাকার ঘটনাগুলো বিশেষভাবে দাগ কেটে আছে।

২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল। কিন্তু সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হতে পারেননি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
ওইদিন দুপুরে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে তাঁর বাসভবন ‘ফিরোজা’র দুই পাশে আড়াআড়ি করে রাখা হয়েছিল বালুভর্তি পাঁচটি ট্রাক। বাড়ির প্রধান ফটকে তালা, সামনে পুলিশ, র্যাব ও জলকামান। দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে থেকেও বের হতে না পেরে ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে আসেন। ফটকের ভেতর থেকেই পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশটা কি আপনাদের একলার? পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের? পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রোগ্রাম বন্ধ করতে চান?’
সেদিন গণমাধ্যমকর্মীরাও ছিলেন অবরুদ্ধ। দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করা সাংবাদিকদের সামনে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আগামী ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্ধারিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকশন নয়, সিলেকশন। ১৫৪টা সিট আনকনটেস্টেড (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) হয়ে যায়? সরকার যদি লজ্জা থাকে তাহলে অবিলম্বে তাদের বিদায় নেওয়া উচিত।’
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে তাঁর সেই ঝাঁঝালো উক্তি, ‘গোলামী করবেন না, দেশের মানুষের সঙ্গে থাকেন’, যা রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন আলোচনার খোরাক ছিল।
ওইদিন পুলিশ দাবি করেছিল, ট্রাকগুলো ‘নষ্ট’ বা বিকল হয়ে গেছে। তাই সরানো যাচ্ছে না। কিন্তু সেই নষ্ট ট্রাকগুলো মেরামত ছাড়াই হঠাৎ সচল হওয়ার ঘটনাটি ছিল বেশ নাটকীয়।
ওই সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে যান। কূটনীতিকদের গাড়ি দেখামাত্রই ‘বিকল’ ট্রাকগুলো চালু হয়ে যায় এবং রাস্তা ছেড়ে দেয়।
কূটনীতিকরা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই ট্রাকগুলো আবার আগের জায়গায় ফিরে গিয়ে ‘বিকল’ হয়ে পড়ে। সে সময় গণমাধ্যমে এই ঘটনাটি ‘ট্রাকের কূটনৈতিক শিষ্টাচার’ হিসেবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
২০১৩ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০১৫ সালের শুরুর দিকে। ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করতে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু প্রধান ফটক ছিল তালাবদ্ধ। নেতাকর্মীর ভিড় আর পুলিশের ব্যারিকেডের মধ্যে হঠাৎ বাতাসে ভাসতে থাকে পিপার স্প্রের ঝাঁঝালো গন্ধ।
অভিযোগ ওঠে, পুলিশ সরাসরি খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ও উপস্থিত নেতাকর্মী লক্ষ্য করে পিপার স্প্রে ছোড়ে। গাড়ির ভেতরে থেকেও অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। শ্বাসকষ্ট আর চোখের জ্বালায় তাঁকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হয়। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ওপর এমন আচরণের ঘটনা তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল।
২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকালে খালেদা জিয়াকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। গভীর রাতে হঠাৎ তাঁর কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এরপর কাটা হয় ইন্টারনেট, ডিশ (কেবল টিভি) ও টেলিফোন সংযোগ।
মোমবাতির আলোয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দাপ্তরিক কাজ করার সেই ছবি তখন সংবাদপত্রের পাতায় এসেছিল। টানা ১৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকার পর সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হলেও, ইন্টারনেটসহ অন্যান্য সেবা দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, নিরাপত্তার স্বার্থে বা বকেয়া বিলের কারণে এমনটা হতে পারে। তবে বিএনপি একে ‘মানসিক নির্যাতন’ ও ‘চাপে ফেলার কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করেছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বারবার বালুভর্তি ট্রাক দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার পথ আটকানোকে ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ দাবি করলেও, বিএনপি একে ‘গণতন্ত্রের পথরুদ্ধ করা’ অভিহিত করে এসেছে। পুলিশের দাবি ছিল, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার জন্যই তারা এই ব্যবস্থা নিয়েছিল। তবে বাস্তবে এটি ছিল তাঁকে জনবিচ্ছিন্ন রাখার কৌশল।
২০২৪ সালের অক্টোবর, অর্থাৎ ঘটনার প্রায় এক যুগ পর গুলশান থানায় এ নিয়ে একটি মামলাও হয়। এজাহারে হয়, ২০১৩ সালে বালুভর্তি ট্রাক দিয়ে খালেদা জিয়ার পথরোধ করা ছিল সংবিধান পরিপন্থী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ। তৎকালীন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেআইনিভাবে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল এবং হত্যার উদ্দেশ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল– এই সময়টিতে খালেদা জিয়াকে ঘিরে সৃষ্ট ‘বালুর ট্রাকের রাজনীতি’ বাংলাদেশের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের এক প্রতীকী চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গুলশানের সেই বাসভবন কিংবা রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড আর বালুর ট্রাক সরিয়ে ৩০ ডিসেম্বর তিনি চিরবিদায় নিলেন।

গায়েবি মামলা, গণগ্রেপ্তার– শেখ হাসিনার শাসনামলের আলোচিত শব্দযুগল। বিরোধী মতের অসংখ্য মানুষ এর শিকার। তাদের মধ্যে অনেকে কাটিয়েছেন ‘আয়নাঘর’খ্যাত গোপন বন্দিশালায়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিপীড়নের বিচিত্র সব কৌশলের মুখোমুখি হয় মানুষ।
বাদ যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও, যিনি সবকিছু পেছনে রেখে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পাড়ি জড়িয়েছেন না ফেরার দেশে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদফা তাঁকে ‘বালুর ট্রাক’ কৌশলে আটকে রেখেছিলেন। ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘দেশটা কি আপনাদের একলার? পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের, যে গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে আমাদের প্রোগ্রাম বন্ধ করতে চান? পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রোগ্রাম বন্ধ করতে চান?’
২০১৩ সাল, খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা। তৎকালীন ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ডাক দেন খালেদা জিয়া। সেই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঠেকাতে তাঁর গুলশানের বাড়ি ‘ফিরোজা’র আশেপাশের সড়কে রাখা হয়েছিল বালুভর্তি ট্রাক। দীর্ঘ অবরুদ্ধ দশা থেকে নিজের বাসার ফটকে এসে পুলিশ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আমাকে আপনারা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। সাহস থাকলে ছেড়ে দিয়ে দেখেন।’
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর দিনভর মানুষের স্মৃতিতে বারবার ফিরে এসেছে এক যুগ আগের সেই দৃশ্য– গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজার’ সামনে আড়াআড়ি করে রাখা বালুভর্তি ট্রাক, পুলিশি পাহারা এবং ফটকের ভেতর থেকে ভেসে আসা ক্ষুব্ধ এক নেতার কণ্ঠস্বর।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির দীর্ঘ এক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। তবে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসে উত্তাল ২০১৩ ও ২০১৫ সাল এবং সেই সময়ের ‘বালুর ট্রাক’ ও ‘অবরুদ্ধ’ থাকার ঘটনাগুলো বিশেষভাবে দাগ কেটে আছে।

২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল। কিন্তু সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হতে পারেননি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
ওইদিন দুপুরে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে তাঁর বাসভবন ‘ফিরোজা’র দুই পাশে আড়াআড়ি করে রাখা হয়েছিল বালুভর্তি পাঁচটি ট্রাক। বাড়ির প্রধান ফটকে তালা, সামনে পুলিশ, র্যাব ও জলকামান। দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে থেকেও বের হতে না পেরে ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে আসেন। ফটকের ভেতর থেকেই পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশটা কি আপনাদের একলার? পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের? পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রোগ্রাম বন্ধ করতে চান?’
সেদিন গণমাধ্যমকর্মীরাও ছিলেন অবরুদ্ধ। দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করা সাংবাদিকদের সামনে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আগামী ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্ধারিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকশন নয়, সিলেকশন। ১৫৪টা সিট আনকনটেস্টেড (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) হয়ে যায়? সরকার যদি লজ্জা থাকে তাহলে অবিলম্বে তাদের বিদায় নেওয়া উচিত।’
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে তাঁর সেই ঝাঁঝালো উক্তি, ‘গোলামী করবেন না, দেশের মানুষের সঙ্গে থাকেন’, যা রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন আলোচনার খোরাক ছিল।
ওইদিন পুলিশ দাবি করেছিল, ট্রাকগুলো ‘নষ্ট’ বা বিকল হয়ে গেছে। তাই সরানো যাচ্ছে না। কিন্তু সেই নষ্ট ট্রাকগুলো মেরামত ছাড়াই হঠাৎ সচল হওয়ার ঘটনাটি ছিল বেশ নাটকীয়।
ওই সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে যান। কূটনীতিকদের গাড়ি দেখামাত্রই ‘বিকল’ ট্রাকগুলো চালু হয়ে যায় এবং রাস্তা ছেড়ে দেয়।
কূটনীতিকরা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই ট্রাকগুলো আবার আগের জায়গায় ফিরে গিয়ে ‘বিকল’ হয়ে পড়ে। সে সময় গণমাধ্যমে এই ঘটনাটি ‘ট্রাকের কূটনৈতিক শিষ্টাচার’ হিসেবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
২০১৩ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০১৫ সালের শুরুর দিকে। ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করতে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু প্রধান ফটক ছিল তালাবদ্ধ। নেতাকর্মীর ভিড় আর পুলিশের ব্যারিকেডের মধ্যে হঠাৎ বাতাসে ভাসতে থাকে পিপার স্প্রের ঝাঁঝালো গন্ধ।
অভিযোগ ওঠে, পুলিশ সরাসরি খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ও উপস্থিত নেতাকর্মী লক্ষ্য করে পিপার স্প্রে ছোড়ে। গাড়ির ভেতরে থেকেও অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। শ্বাসকষ্ট আর চোখের জ্বালায় তাঁকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হয়। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ওপর এমন আচরণের ঘটনা তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল।
২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকালে খালেদা জিয়াকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। গভীর রাতে হঠাৎ তাঁর কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এরপর কাটা হয় ইন্টারনেট, ডিশ (কেবল টিভি) ও টেলিফোন সংযোগ।
মোমবাতির আলোয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দাপ্তরিক কাজ করার সেই ছবি তখন সংবাদপত্রের পাতায় এসেছিল। টানা ১৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকার পর সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হলেও, ইন্টারনেটসহ অন্যান্য সেবা দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, নিরাপত্তার স্বার্থে বা বকেয়া বিলের কারণে এমনটা হতে পারে। তবে বিএনপি একে ‘মানসিক নির্যাতন’ ও ‘চাপে ফেলার কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করেছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বারবার বালুভর্তি ট্রাক দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার পথ আটকানোকে ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ দাবি করলেও, বিএনপি একে ‘গণতন্ত্রের পথরুদ্ধ করা’ অভিহিত করে এসেছে। পুলিশের দাবি ছিল, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার জন্যই তারা এই ব্যবস্থা নিয়েছিল। তবে বাস্তবে এটি ছিল তাঁকে জনবিচ্ছিন্ন রাখার কৌশল।
২০২৪ সালের অক্টোবর, অর্থাৎ ঘটনার প্রায় এক যুগ পর গুলশান থানায় এ নিয়ে একটি মামলাও হয়। এজাহারে হয়, ২০১৩ সালে বালুভর্তি ট্রাক দিয়ে খালেদা জিয়ার পথরোধ করা ছিল সংবিধান পরিপন্থী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ। তৎকালীন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেআইনিভাবে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল এবং হত্যার উদ্দেশ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল– এই সময়টিতে খালেদা জিয়াকে ঘিরে সৃষ্ট ‘বালুর ট্রাকের রাজনীতি’ বাংলাদেশের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের এক প্রতীকী চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গুলশানের সেই বাসভবন কিংবা রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড আর বালুর ট্রাক সরিয়ে ৩০ ডিসেম্বর তিনি চিরবিদায় নিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। নিজের বাবার মৃত্যুর পর রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়ার পেছনে খালেদা জিয়ার অবদানের কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
৪ ঘণ্টা আগে
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার অভিযোগ এনে নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাসহ ৯ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা
৬ ঘণ্টা আগে
পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘আপসরফা’র অভিযোগ তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আরিফ সোহেল। তিনি অভিযোগ করেছেন, এনসিপি জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নতুন ‘রাজনৈতিক শক্তি’ হিসেবে আত্মপ্রকাশে ব্যর্থ হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষে তিনটি সংসদীয় আসনে জমা দেওয়া হয়েছিল মনোনয়নপত্র। আজ মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু এই আসনগুলোতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব ফেলবে কি না তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
৮ ঘণ্টা আগে