মাইলস্টোন কলেজ ট্রাজেডি
গত সোমবার যখন ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে, তখন মাইলস্টোন কলেজের ভৌগলিক অবস্থান বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে বিমান চলাচলের প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত স্থান না থাকাসহ বেশকিছু কারণ যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তোলে। এরপর দুটি বড় প্রশ্ন সামনে আসে। এক. মাইলস্টোনে কি নিয়মবহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল? দুই. স্কুলের ওপর দিয়ে সরাসরি বিমান চলাচলের রুট কিভাবে নির্ধারণ করা হলো?
ইয়াসাব ওসামা রহমান
সালটা ২০০১। দেশের শীর্ষ দুই ক্যাডেট কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের পর অবসর নেন কর্নেল নুরুন নবী। লম্বা সময়ের অভিজ্ঞতায় বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্থায় বেশকিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করেন তিনি। এরপর শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করেন। সে সময় রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনের ১১ নম্বর সেক্টরে গরীব-এ-নেওয়াজ অ্যাভিনিউতে একটি ভাড়া ভবনে মাইলস্টোন কিন্ডারগার্টেন স্কুল নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন নুরুন নবী। ধাপে ধাপে সেই প্রতিষ্ঠান নিম্ন মাধ্যমিক এবং পরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রূপ নেয়।
প্রতিষ্ঠানটি শিগগিরই সাফল্যের মুখ দেখে। মাইলস্টোন স্কুল শুরু থেকেই শতভাগ পাশের হার অর্জন করে প্রশংসা কুড়াচ্ছিল। ফলে পরিকল্পনা ও প্রত্যাশাও বাড়ে। এর ঠিক দুই বছর পর, ২০০২ সালের ১৮ মে মাইলস্টোন কলেজ নামে নতুন শাখার অনুমোদন পায় এই প্রতিষ্ঠান।
রাজউকের একটি টিম মাইলস্টোনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। টিম নানা বিধিনিষেধের কারণে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে আমরা ঠিক জানিনা, মাইলস্টোন উচ্চতার ক্ষেত্রে কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে কি না। আমরা দ্রুত কাজটা করার চেষ্টা করছি।আশরাফুল ইসলাম, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, রাজউক
কিন্তু গত সোমবার যখন ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে, তখন মাইলস্টোন কলেজের ভৌগলিক অবস্থান বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে বিমান চলাচলের প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত স্থান না থাকাসহ বেশকিছু কারণ যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তোলে। এই বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে, আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে আরও দেড় শতাধিক মানুষ।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর দুটি বড় প্রশ্ন সামনে আসে। এক. মাইলস্টোনে কি নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল? এবং দুই. স্কুলের ওপর দিয়ে সরাসরি বিমান চলাচলের রুট কিভাবে নির্ধারণ করা হলো?
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক নথি অনুযায়ী, মাইলস্টোন ক্যাম্পাসটি আসলে ‘অবস্ট্যাকল লিমিটেশন সারফেস (ওএলএস)’ পরিসীমার মধ্যে পড়েছে। ওএলএস হলো বিমানবন্দরের চারপাশে কল্পিত এক ধরনের সীমা, যার মাধ্যমে বিমান চলাচলের পথ নিরাপদ রাখা ও পথের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বাধা না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বেবিচকের তথ্য অনুসারে, কলেজ ক্যাম্পাসটি বিমান চলাচলের ‘ইনার হরাইজন্টাল সারফেস’ এলাকার মধ্যে ইনার অ্যাপ্রোচ এক অনুপাত ৫০ এর মধ্যে আছে। অর্থাৎ এই এলাকার সর্বোচ্চ ১৫০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা যাবে।
তবে উচ্চতার এই সীমার মধ্যে মাইলস্টোন কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে কি না তা জানে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অথচ ঢাকায় নগর উন্নয়নের পরিকল্পনা ও অনুমোদন দেয় রাজউক।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘রাজউকের একটি টিম মাইলস্টোনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। টিম নানা বিধিনিষেধের কারণে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে আমরা ঠিক জানিনা, মাইলস্টোন উচ্চতার ক্ষেত্রে কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে কি না। আমরা দ্রুত কাজটা করার চেষ্টা করছি।’
যদি স্কুলটি সরাসরি বিমান চলাচলের পথে পড়ে, তাহলে ওখানে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া উচিত হয়নি। ‘অবস্ট্যাকল ক্লিয়ারেন্স লিমিট’ বজায় রাখা বাধ্যতামূলক, এটি আন্তর্জাতিক নিয়ম। কিন্তু আমরা সেটা অনুসরণ করি না। গোলাম ইমতিয়াজ মাহবুব, অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
২০১৮ সালে বেবিচকের এটিএস ও অ্যারোড্রোমস শাখার পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের সই করা এক নথিতে দেখা যায়, মাইলস্টোন স্কুলটি রানওয়ের বাইরের যে দিক দিয়ে বিমান উড্ডয়ন করে, তার পেছনে অবস্থিত। এ রুটে বিমানের উচ্চতা প্রতি কিলোমিটারে গড়ে ৫০ ফুট করে বাড়ে।
মাইলস্টোন কলেজ বরাবর বিমান চলাচলের এই পথ তখনই ব্যবহার হয়, যখন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান ওঠানামা করে। গত সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে একটি যুদ্ধবিমান এই বিমানবন্দর থেকেই নিয়মিত প্রশিক্ষণ মিশনে আকাশে উড়েছিল। স্কুল থেকে আকাশপথে প্রায় কিলোমিটার দূরে বিমানবন্দর। কিন্তু উড্ডয়নের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
ঢাকা স্ট্রিমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার গোলাম ইমতিয়াজ মাহবুব বলেন, 'যদি স্কুলটি সরাসরি বিমান চলাচলের পথে পড়ে, তাহলে ওখানে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া উচিত হয়নি।’ তিনি বলেন, 'অবস্ট্যাকল ক্লিয়ারেন্স লিমিট' বজায় রাখা বাধ্যতামূলক, এটি আন্তর্জাতিক নিয়ম। কিন্তু আমরা সেটা অনুসরণ করি না।
দুর্ঘটনার দুই দিন পর, গত মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ফ্লাইট সেফটি ও রেগুলেশন শাখার পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. আহসান হাবিবকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব ছিল বিমান চলাচল সংক্রান্ত সব নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে নিশ্চিত করা।
সরকার এখনও আহসান হাবিবকে প্রত্যাহারের কারণ ব্যাখ্যা করেনি। তবে জানা গেছে, তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অনিয়মের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল।
প্রস্তাবিত জলাশয়ের জায়গায় তড়িঘড়ি করে ভবন নির্মাণ করার দায় আছে মাইলস্টোনের। এ ছাড়া যথাযথ নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণ হয়েছে কি না— সেটির দায়ও প্রতিষ্ঠানটির ওপর বর্তায়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের দায়িত্ব এ সব বিষয় তদারকি করা। কিন্তু তারা সেটি না করে সবসময় প্রভাবশালীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে এসেছে। অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স
২০১৫ সালে রাজউক নতুন ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। ২০১৭-১৮ সালে প্রাথমিক জরিপ, উপাত্ত সংগ্রহ ও খসড়া পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালে খসড়া ড্যাপ প্রকাশিত হয় এবং পাস হয় ২০২২ সালের ২২ আগস্ট।
নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, যে সময় খসড়া পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয় ওই সময়ই রাজধানীর কোন এলাকায় কোন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে তা নির্ধারণ করা ছিল। আর গুগল আর্থের স্যাটেলাইট চিত্র বলছে, খসড়া ড্যাপ প্রকাশের পর অর্থাৎ ২০২১ এর পর থেকে মাইলস্টোন কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
গুগল আর্থের স্যাটেলাইট চিত্র ও সরকারের ড্যাপ ম্যাপ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে যেখানে মাইলস্টোন কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস অবস্থিত সেখানে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোন অবকাঠামো ছিল না। জায়গাটি ছিল গাছপালা আচ্ছাদিত। ২০০৮ সালে সেখানে জমি ভরাটের চিত্র দেখা যায়। ২০১৮ সালের চিত্রে অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়। পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু হয় ২০২১ সালের পর থেকে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে হঠাৎ করেই সেখানে বহুতল ভবন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, দখল হয়ে যায় ড্যাপে প্রস্তাবিত জলাশয়ের একাংশও।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত দিয়াবাড়ির এই এলাকাটি ছিল প্রায় খালি। কোনো পাকা অবকাঠামো ছিল না। একটি উন্মুক্ত মাঠ, চারপাশে ইট-সিমেন্টের দেওয়াল, আর টিনশেডের একটি ঘর—এই ছিল মাইলস্টোন কলেজের মূল কাঠামো। ২০১৯ সালের পর ধাপে ধাপে গড়ে ওঠে বিশাল ভবন।
চলতি বছরের এপ্রিলে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, তারা ঢাকা শহরে অনুমোদিত নকশা ভঙ্গ করে নির্মিত হচ্ছে এমন তিন হাজার ৩৮২টি নির্মাণাধীন ভবন চিহ্নিত করেছেন। এ সব ভবনের অবৈধ অংশগুলো ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ঠিক কোথায় কোথায় অভিযান চালানো হবে, তা তিনি বলেননি।
এফ-৭ বিজিআই মডেলের যে বিমানটি এই দুর্ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সেটিতে কোনো সমস্যা ছিল না। বিমানটি ১২ বছর আগের তবে একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আমাদের বহরে ৪০ বছরের পুরোনো বিমানও আছে, যেগুলোর যন্ত্রাংশ এখনও পাওয়া যায়। এমনকি আমরা যুদ্ধবিমান কেনার সময় যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের চুক্তিও করে থাকি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
এ দিকে বেবিচকের পক্ষ থেকে রাজউককে একটি চিঠি দিয়ে সব ভবনের উচ্চতা নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র সংগ্রহের বিষয়েও সতর্ক করা হয়।
এই চিঠির একটি অনুলিপি ঢাকা স্ট্রিমের হাতে এসেছে। চিঠিতে বিমান চলাচলের পথে ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করার বলা হয়। স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, ছাড়পত্র ছাড়া যেকোন অবকাঠামো নির্মাণ যেন বন্ধ থাকে।
এ ছাড়া, ড্যাপ অনুসারে মাইলস্টোন কলেজের একধারে প্রস্তাবিত জলাশয় আছে। জলাশয় লাগোয়া ৭২ দশমিক পাঁচ চার কাঠা জমি ইন্সটিটিউশনাল জোন বা প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, সরকারি দপ্তর, বা অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সে হিসেবে এই প্রাতিষ্ঠানিক এলাকায় মাইলস্টোন কলেজ তাদের ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে পারতো।
সব মিলিয়ে মাইলস্টোন কলেজ অন্তত দুটি নিয়ম লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, প্রস্তাবিত জলাশয়ের জায়গায় তড়িঘড়ি করে ভবন নির্মাণ করার দায় আছে মাইলস্টোনের। এ ছাড়া যথাযথ নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণ হয়েছে কি না— সেটির দায়ও প্রতিষ্ঠানটির ওপর বর্তায়।
তিনি বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের দায়িত্ব এ সব বিষয় তদারকি করা। কিন্তু তারা সেটি না করে সবসময় প্রভাবশালীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আসার কথা ছিল। ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনারও (ড্যাপ) সংশোধন আনার কথা ছিল এই সরকারের। কিন্তু সেটি না হয়ে উল্টো আরও বেশি করে বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। রাজউক সেগুলো না ঠেকিয়ে আরও উস্কে দিচ্ছে। ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।’
পুরোনো মডেলের বদলে অন্তত চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এয়ার কমোডর মো. শফিকুল আলম, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার গোলাম ইমতিয়াজ মাহবুব উত্তরা এলাকার একটি উন্নয়ন মানচিত্র দেখিয়ে বলেন, ‘বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা আমাদের নেই। কোন কারণে বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে এখানে ভবনের ওপর আছড়ে পড়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, 'আমরা সাধারণত খোলা জায়গায় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রশিক্ষণের নির্দিষ্ট কিছু প্যাটার্ন থাকে, যেগুলো এলাকার ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে। এখন ঢাকা শহরে পরিষ্কার খোলা জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে।'
তিনি আরও বলেন, স্কুলটির সমালোচনা হচ্ছে কারণ এটি দশতলা ভবন। এটি যদি দুই তলা হতো, তাহলে হয়তো এমন প্রশ্ন উঠত না।
জায়গার স্বল্পতার মাঝে রাজধানীতে আসলেই একটি প্রশিক্ষণ এলাকা বা বিমানঘাঁটি থাকা দরকার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রয়োজন আছে।
ইমতিয়াজ মাহবুব বলেন, “ডিফেন্স ইন ডেপথ একটি সামরিক কৌশল। যেখানে শত্রুকে আগ্রাসন ঠেকানোর পরিবর্তে শত্রুর নজর অন্যদিকে সরানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই কৌশলের মাধ্যমে বোঝা যায়- সীমান্ত পার করার পর শত্রুপক্ষকে পাল্টা জবাব দিতে কত সময় লাগবে এবং কত দ্রুত তাদের ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে।'
এই প্রেক্ষাপটে কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটির অবস্থান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন। ইমতিয়াজ মাহবুব বলেন, ‘এটি শত্রুর আর্টিলারি ও এয়ার ডিফেন্স সীমার বাইরে। ফলে সেখানে একটি ফাইটার জেট থাকা জরুরি দরকার।’
তাঁর মতে, যেহেতু কুর্মিটোলায় যুদ্ধবিমান রাখা হয়, পাইলটদের সেখান থেকেই সেটি চালানো শিখতে হয়।
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বিমানঘাঁটিকে রাজশাহী সরিয়ে দেন, তাহলে সেটা সীমান্তের অনেক কাছাকাছি হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ছোট দেশ, চারদিকে সীমান্ত দিয়ে ঘেরা, তাই রাজধানীর কাছাকাছি এমন একটি জায়গাই সবচেয়ে উপযুক্ত।'
কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমানঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ রকম এলাকায় ঘাঁটি বানালে, সেখানে লোকজন ভিড় করে ব্যবসা, দোকান, বসতি গড়ে তুলবে। ঘুরেফিরে ফের সেই এলাকা ঘন জনবসতির দিকে যাবে।’
গোলাম ইমতিয়াজ মাহবুবের বক্তব্যের সঙ্গে আংশিকভাবে একমত এয়ার কমোডর মো. শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি সক্রিয় বিমানঘাঁটি পরিচালনা করাটা ঠিক নয়। কেননা কেননা এখানে জননিরাপত্তা বিষয় আছে পাশাপাশি শহর তো ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। তবে জাতীয় প্রয়োজনে এটি থেকে বিরত থাকাও সবসময় সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘পাইলট, অপারেটর এবং সহায়ক কর্মীদের ওপর ঢাকার ভয়াবহ যানজট অতিরিক্ত মানসিক ও প্রক্রিয়াগত চাপ তৈরি করে। ফলে কখনো কখনো নিয়মনীতি ও নীতিমালার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়, যা শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।”
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) এর নীতিমালা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নিয়মগুলো সাধারণত বেসামরিক বিমান পরিচালনার জন্য, কিন্তু তা রাষ্ট্রীয় বা সামরিক বিমানের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
তিনি বলেন, আইকাওয়ে বিমানঘাঁটির চারপাশে স্থাপনা নির্মাণে কড়া নির্দেশনা থাকলেও বাংলাদেশে সেগুলো খুব একটা মানা হয় না। এতে শুধু পাইলটদের নয়, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
তবে শফিকুল আলম মনে করেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে যুদ্ধবিমানসহ আকাশ প্রতিরক্ষার অস্ত্র রাজধানীর কাছাকাছি রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকার আশপাশে এমন কোনো বিমানঘাঁটি নেই যেখানে সব ফাইটার জেট রাখা যায়। তাই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বাধ্য হয়ে রাজধানীতেই যুদ্ধবিমান রাখছে এবং বেসামরিক বিমান চলাচলের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালনা করছে।’
তাঁর পরামর্শ, ‘অপারেশনাল স্কোয়াড্রনটি ঢাকার খুব কাছাকাছি কোথাও সরিয়ে নেওয়া উচিত, যেখান থেকে রাজধানীর জন্য প্রয়োজনীয় আকাশ প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। এটি করতে গেলে নতুন একটি বিমানঘাঁটি গড়ে তুলতে হবে। যা রাষ্ট্রীয় কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়।'
বিমান তৈরির ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, 'পুরোনো মডেলের বদলে অন্তত চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।'
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন সদস্য স্ট্রিমকে বলেন, এফ ৭ -বিজিআই মডেলের যে বিমানটি এই দুর্ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সেটিতে কোনো সমস্যা ছিল না।
তিনি জানান, ‘বিমানটি ১২ বছর আগের তবে একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আমাদের বহরে ৪০ বছরের পুরোনো বিমানও আছে, যেগুলোর যন্ত্রাংশ এখনও পাওয়া যায়। এমনকি আমরা যুদ্ধবিমান কেনার সময় যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের চুক্তিও করে থাকি।’
আরও উন্নত বিমান কেন কেনা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাজেটের সমস্যা তো আছে, পাশাপাশি রাজনৈতিকও সমস্যাও কম নয়। আমরা যখন আধুনিক রুশ যুদ্ধবিমান কিনতে চেয়েছিলাম, তখন বৈশ্বিক পর্যায়ের হস্তক্ষেপ এসেছিল। কিছু দেশ চায় না বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী গড়ে তুলুক। ফলে জেট কেনার বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে।’
বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা আমাদের নেই। কোন কারণে বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে এখানে ভবনের ওপর আছড়ে পড়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। গোলাম ইমতিয়াজ মাহবুব, অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
সালটা ২০০১। দেশের শীর্ষ দুই ক্যাডেট কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের পর অবসর নেন কর্নেল নুরুন নবী। লম্বা সময়ের অভিজ্ঞতায় বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্থায় বেশকিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করেন তিনি। এরপর শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করেন। সে সময় রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনের ১১ নম্বর সেক্টরে গরীব-এ-নেওয়াজ অ্যাভিনিউতে একটি ভাড়া ভবনে মাইলস্টোন কিন্ডারগার্টেন স্কুল নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন নুরুন নবী। ধাপে ধাপে সেই প্রতিষ্ঠান নিম্ন মাধ্যমিক এবং পরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রূপ নেয়।
প্রতিষ্ঠানটি শিগগিরই সাফল্যের মুখ দেখে। মাইলস্টোন স্কুল শুরু থেকেই শতভাগ পাশের হার অর্জন করে প্রশংসা কুড়াচ্ছিল। ফলে পরিকল্পনা ও প্রত্যাশাও বাড়ে। এর ঠিক দুই বছর পর, ২০০২ সালের ১৮ মে মাইলস্টোন কলেজ নামে নতুন শাখার অনুমোদন পায় এই প্রতিষ্ঠান।
রাজউকের একটি টিম মাইলস্টোনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। টিম নানা বিধিনিষেধের কারণে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে আমরা ঠিক জানিনা, মাইলস্টোন উচ্চতার ক্ষেত্রে কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে কি না। আমরা দ্রুত কাজটা করার চেষ্টা করছি।আশরাফুল ইসলাম, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, রাজউক
কিন্তু গত সোমবার যখন ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে, তখন মাইলস্টোন কলেজের ভৌগলিক অবস্থান বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে বিমান চলাচলের প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত স্থান না থাকাসহ বেশকিছু কারণ যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তোলে। এই বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে, আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে আরও দেড় শতাধিক মানুষ।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর দুটি বড় প্রশ্ন সামনে আসে। এক. মাইলস্টোনে কি নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল? এবং দুই. স্কুলের ওপর দিয়ে সরাসরি বিমান চলাচলের রুট কিভাবে নির্ধারণ করা হলো?
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক নথি অনুযায়ী, মাইলস্টোন ক্যাম্পাসটি আসলে ‘অবস্ট্যাকল লিমিটেশন সারফেস (ওএলএস)’ পরিসীমার মধ্যে পড়েছে। ওএলএস হলো বিমানবন্দরের চারপাশে কল্পিত এক ধরনের সীমা, যার মাধ্যমে বিমান চলাচলের পথ নিরাপদ রাখা ও পথের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বাধা না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বেবিচকের তথ্য অনুসারে, কলেজ ক্যাম্পাসটি বিমান চলাচলের ‘ইনার হরাইজন্টাল সারফেস’ এলাকার মধ্যে ইনার অ্যাপ্রোচ এক অনুপাত ৫০ এর মধ্যে আছে। অর্থাৎ এই এলাকার সর্বোচ্চ ১৫০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা যাবে।
তবে উচ্চতার এই সীমার মধ্যে মাইলস্টোন কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে কি না তা জানে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অথচ ঢাকায় নগর উন্নয়নের পরিকল্পনা ও অনুমোদন দেয় রাজউক।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘রাজউকের একটি টিম মাইলস্টোনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। টিম নানা বিধিনিষেধের কারণে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে আমরা ঠিক জানিনা, মাইলস্টোন উচ্চতার ক্ষেত্রে কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে কি না। আমরা দ্রুত কাজটা করার চেষ্টা করছি।’
যদি স্কুলটি সরাসরি বিমান চলাচলের পথে পড়ে, তাহলে ওখানে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া উচিত হয়নি। ‘অবস্ট্যাকল ক্লিয়ারেন্স লিমিট’ বজায় রাখা বাধ্যতামূলক, এটি আন্তর্জাতিক নিয়ম। কিন্তু আমরা সেটা অনুসরণ করি না। গোলাম ইমতিয়াজ মাহবুব, অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
২০১৮ সালে বেবিচকের এটিএস ও অ্যারোড্রোমস শাখার পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের সই করা এক নথিতে দেখা যায়, মাইলস্টোন স্কুলটি রানওয়ের বাইরের যে দিক দিয়ে বিমান উড্ডয়ন করে, তার পেছনে অবস্থিত। এ রুটে বিমানের উচ্চতা প্রতি কিলোমিটারে গড়ে ৫০ ফুট করে বাড়ে।
মাইলস্টোন কলেজ বরাবর বিমান চলাচলের এই পথ তখনই ব্যবহার হয়, যখন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান ওঠানামা করে। গত সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে একটি যুদ্ধবিমান এই বিমানবন্দর থেকেই নিয়মিত প্রশিক্ষণ মিশনে আকাশে উড়েছিল। স্কুল থেকে আকাশপথে প্রায় কিলোমিটার দূরে বিমানবন্দর। কিন্তু উড্ডয়নের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
ঢাকা স্ট্রিমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার গোলাম ইমতিয়াজ মাহবুব বলেন, 'যদি স্কুলটি সরাসরি বিমান চলাচলের পথে পড়ে, তাহলে ওখানে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া উচিত হয়নি।’ তিনি বলেন, 'অবস্ট্যাকল ক্লিয়ারেন্স লিমিট' বজায় রাখা বাধ্যতামূলক, এটি আন্তর্জাতিক নিয়ম। কিন্তু আমরা সেটা অনুসরণ করি না।
দুর্ঘটনার দুই দিন পর, গত মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ফ্লাইট সেফটি ও রেগুলেশন শাখার পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. আহসান হাবিবকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব ছিল বিমান চলাচল সংক্রান্ত সব নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে নিশ্চিত করা।
সরকার এখনও আহসান হাবিবকে প্রত্যাহারের কারণ ব্যাখ্যা করেনি। তবে জানা গেছে, তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অনিয়মের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল।
প্রস্তাবিত জলাশয়ের জায়গায় তড়িঘড়ি করে ভবন নির্মাণ করার দায় আছে মাইলস্টোনের। এ ছাড়া যথাযথ নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণ হয়েছে কি না— সেটির দায়ও প্রতিষ্ঠানটির ওপর বর্তায়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের দায়িত্ব এ সব বিষয় তদারকি করা। কিন্তু তারা সেটি না করে সবসময় প্রভাবশালীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে এসেছে। অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স
২০১৫ সালে রাজউক নতুন ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। ২০১৭-১৮ সালে প্রাথমিক জরিপ, উপাত্ত সংগ্রহ ও খসড়া পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালে খসড়া ড্যাপ প্রকাশিত হয় এবং পাস হয় ২০২২ সালের ২২ আগস্ট।
নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, যে সময় খসড়া পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয় ওই সময়ই রাজধানীর কোন এলাকায় কোন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে তা নির্ধারণ করা ছিল। আর গুগল আর্থের স্যাটেলাইট চিত্র বলছে, খসড়া ড্যাপ প্রকাশের পর অর্থাৎ ২০২১ এর পর থেকে মাইলস্টোন কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
গুগল আর্থের স্যাটেলাইট চিত্র ও সরকারের ড্যাপ ম্যাপ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে যেখানে মাইলস্টোন কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস অবস্থিত সেখানে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোন অবকাঠামো ছিল না। জায়গাটি ছিল গাছপালা আচ্ছাদিত। ২০০৮ সালে সেখানে জমি ভরাটের চিত্র দেখা যায়। ২০১৮ সালের চিত্রে অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়। পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু হয় ২০২১ সালের পর থেকে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে হঠাৎ করেই সেখানে বহুতল ভবন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, দখল হয়ে যায় ড্যাপে প্রস্তাবিত জলাশয়ের একাংশও।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত দিয়াবাড়ির এই এলাকাটি ছিল প্রায় খালি। কোনো পাকা অবকাঠামো ছিল না। একটি উন্মুক্ত মাঠ, চারপাশে ইট-সিমেন্টের দেওয়াল, আর টিনশেডের একটি ঘর—এই ছিল মাইলস্টোন কলেজের মূল কাঠামো। ২০১৯ সালের পর ধাপে ধাপে গড়ে ওঠে বিশাল ভবন।
চলতি বছরের এপ্রিলে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, তারা ঢাকা শহরে অনুমোদিত নকশা ভঙ্গ করে নির্মিত হচ্ছে এমন তিন হাজার ৩৮২টি নির্মাণাধীন ভবন চিহ্নিত করেছেন। এ সব ভবনের অবৈধ অংশগুলো ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ঠিক কোথায় কোথায় অভিযান চালানো হবে, তা তিনি বলেননি।
এফ-৭ বিজিআই মডেলের যে বিমানটি এই দুর্ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সেটিতে কোনো সমস্যা ছিল না। বিমানটি ১২ বছর আগের তবে একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আমাদের বহরে ৪০ বছরের পুরোনো বিমানও আছে, যেগুলোর যন্ত্রাংশ এখনও পাওয়া যায়। এমনকি আমরা যুদ্ধবিমান কেনার সময় যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের চুক্তিও করে থাকি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
এ দিকে বেবিচকের পক্ষ থেকে রাজউককে একটি চিঠি দিয়ে সব ভবনের উচ্চতা নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র সংগ্রহের বিষয়েও সতর্ক করা হয়।
এই চিঠির একটি অনুলিপি ঢাকা স্ট্রিমের হাতে এসেছে। চিঠিতে বিমান চলাচলের পথে ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করার বলা হয়। স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, ছাড়পত্র ছাড়া যেকোন অবকাঠামো নির্মাণ যেন বন্ধ থাকে।
এ ছাড়া, ড্যাপ অনুসারে মাইলস্টোন কলেজের একধারে প্রস্তাবিত জলাশয় আছে। জলাশয় লাগোয়া ৭২ দশমিক পাঁচ চার কাঠা জমি ইন্সটিটিউশনাল জোন বা প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, সরকারি দপ্তর, বা অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সে হিসেবে এই প্রাতিষ্ঠানিক এলাকায় মাইলস্টোন কলেজ তাদের ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে পারতো।
সব মিলিয়ে মাইলস্টোন কলেজ অন্তত দুটি নিয়ম লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, প্রস্তাবিত জলাশয়ের জায়গায় তড়িঘড়ি করে ভবন নির্মাণ করার দায় আছে মাইলস্টোনের। এ ছাড়া যথাযথ নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণ হয়েছে কি না— সেটির দায়ও প্রতিষ্ঠানটির ওপর বর্তায়।
তিনি বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের দায়িত্ব এ সব বিষয় তদারকি করা। কিন্তু তারা সেটি না করে সবসময় প্রভাবশালীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আসার কথা ছিল। ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনারও (ড্যাপ) সংশোধন আনার কথা ছিল এই সরকারের। কিন্তু সেটি না হয়ে উল্টো আরও বেশি করে বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। রাজউক সেগুলো না ঠেকিয়ে আরও উস্কে দিচ্ছে। ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।’
পুরোনো মডেলের বদলে অন্তত চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এয়ার কমোডর মো. শফিকুল আলম, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার গোলাম ইমতিয়াজ মাহবুব উত্তরা এলাকার একটি উন্নয়ন মানচিত্র দেখিয়ে বলেন, ‘বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা আমাদের নেই। কোন কারণে বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে এখানে ভবনের ওপর আছড়ে পড়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, 'আমরা সাধারণত খোলা জায়গায় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রশিক্ষণের নির্দিষ্ট কিছু প্যাটার্ন থাকে, যেগুলো এলাকার ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে। এখন ঢাকা শহরে পরিষ্কার খোলা জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে।'
তিনি আরও বলেন, স্কুলটির সমালোচনা হচ্ছে কারণ এটি দশতলা ভবন। এটি যদি দুই তলা হতো, তাহলে হয়তো এমন প্রশ্ন উঠত না।
জায়গার স্বল্পতার মাঝে রাজধানীতে আসলেই একটি প্রশিক্ষণ এলাকা বা বিমানঘাঁটি থাকা দরকার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রয়োজন আছে।
ইমতিয়াজ মাহবুব বলেন, “ডিফেন্স ইন ডেপথ একটি সামরিক কৌশল। যেখানে শত্রুকে আগ্রাসন ঠেকানোর পরিবর্তে শত্রুর নজর অন্যদিকে সরানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই কৌশলের মাধ্যমে বোঝা যায়- সীমান্ত পার করার পর শত্রুপক্ষকে পাল্টা জবাব দিতে কত সময় লাগবে এবং কত দ্রুত তাদের ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে।'
এই প্রেক্ষাপটে কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটির অবস্থান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন। ইমতিয়াজ মাহবুব বলেন, ‘এটি শত্রুর আর্টিলারি ও এয়ার ডিফেন্স সীমার বাইরে। ফলে সেখানে একটি ফাইটার জেট থাকা জরুরি দরকার।’
তাঁর মতে, যেহেতু কুর্মিটোলায় যুদ্ধবিমান রাখা হয়, পাইলটদের সেখান থেকেই সেটি চালানো শিখতে হয়।
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বিমানঘাঁটিকে রাজশাহী সরিয়ে দেন, তাহলে সেটা সীমান্তের অনেক কাছাকাছি হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ছোট দেশ, চারদিকে সীমান্ত দিয়ে ঘেরা, তাই রাজধানীর কাছাকাছি এমন একটি জায়গাই সবচেয়ে উপযুক্ত।'
কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমানঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ রকম এলাকায় ঘাঁটি বানালে, সেখানে লোকজন ভিড় করে ব্যবসা, দোকান, বসতি গড়ে তুলবে। ঘুরেফিরে ফের সেই এলাকা ঘন জনবসতির দিকে যাবে।’
গোলাম ইমতিয়াজ মাহবুবের বক্তব্যের সঙ্গে আংশিকভাবে একমত এয়ার কমোডর মো. শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি সক্রিয় বিমানঘাঁটি পরিচালনা করাটা ঠিক নয়। কেননা কেননা এখানে জননিরাপত্তা বিষয় আছে পাশাপাশি শহর তো ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। তবে জাতীয় প্রয়োজনে এটি থেকে বিরত থাকাও সবসময় সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘পাইলট, অপারেটর এবং সহায়ক কর্মীদের ওপর ঢাকার ভয়াবহ যানজট অতিরিক্ত মানসিক ও প্রক্রিয়াগত চাপ তৈরি করে। ফলে কখনো কখনো নিয়মনীতি ও নীতিমালার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়, যা শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।”
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) এর নীতিমালা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নিয়মগুলো সাধারণত বেসামরিক বিমান পরিচালনার জন্য, কিন্তু তা রাষ্ট্রীয় বা সামরিক বিমানের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
তিনি বলেন, আইকাওয়ে বিমানঘাঁটির চারপাশে স্থাপনা নির্মাণে কড়া নির্দেশনা থাকলেও বাংলাদেশে সেগুলো খুব একটা মানা হয় না। এতে শুধু পাইলটদের নয়, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
তবে শফিকুল আলম মনে করেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে যুদ্ধবিমানসহ আকাশ প্রতিরক্ষার অস্ত্র রাজধানীর কাছাকাছি রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকার আশপাশে এমন কোনো বিমানঘাঁটি নেই যেখানে সব ফাইটার জেট রাখা যায়। তাই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বাধ্য হয়ে রাজধানীতেই যুদ্ধবিমান রাখছে এবং বেসামরিক বিমান চলাচলের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালনা করছে।’
তাঁর পরামর্শ, ‘অপারেশনাল স্কোয়াড্রনটি ঢাকার খুব কাছাকাছি কোথাও সরিয়ে নেওয়া উচিত, যেখান থেকে রাজধানীর জন্য প্রয়োজনীয় আকাশ প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। এটি করতে গেলে নতুন একটি বিমানঘাঁটি গড়ে তুলতে হবে। যা রাষ্ট্রীয় কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়।'
বিমান তৈরির ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, 'পুরোনো মডেলের বদলে অন্তত চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।'
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন সদস্য স্ট্রিমকে বলেন, এফ ৭ -বিজিআই মডেলের যে বিমানটি এই দুর্ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সেটিতে কোনো সমস্যা ছিল না।
তিনি জানান, ‘বিমানটি ১২ বছর আগের তবে একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আমাদের বহরে ৪০ বছরের পুরোনো বিমানও আছে, যেগুলোর যন্ত্রাংশ এখনও পাওয়া যায়। এমনকি আমরা যুদ্ধবিমান কেনার সময় যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের চুক্তিও করে থাকি।’
আরও উন্নত বিমান কেন কেনা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাজেটের সমস্যা তো আছে, পাশাপাশি রাজনৈতিকও সমস্যাও কম নয়। আমরা যখন আধুনিক রুশ যুদ্ধবিমান কিনতে চেয়েছিলাম, তখন বৈশ্বিক পর্যায়ের হস্তক্ষেপ এসেছিল। কিছু দেশ চায় না বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী গড়ে তুলুক। ফলে জেট কেনার বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে।’
বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা আমাদের নেই। কোন কারণে বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে এখানে ভবনের ওপর আছড়ে পড়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। গোলাম ইমতিয়াজ মাহবুব, অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
আমাদের ছেলে সূর্য সময় বিশ্বাস। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আর একই বিদ্যায়তনের কলেজ শাখায় শিক্ষকতা করি আমি। প্রতিদিন ছেলেকে আমিই স্কুলে নিয়ে আসি। তবে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার আগের দিন (২০ জুলাই) সূর্য স্কুলে যায়নি।
১৫ ঘণ্টা আগেআমি তখন ছিলাম ভবন থেকে একটু দূরে। হঠাৎ একটা শব্দ হলো, এত জোরে শব্দ হলো যে মনে হলো কানের পর্দা ফেটে যাচ্ছে। এ সময় দেখি আগুন ওপরে উঠে যাচ্ছে। আমি তখন কী করব, হিতাহিতজ্ঞান ছিল না আমার। অসহায়ের মতো কাঁদছিলাম। মাকে ফোন করে বললাম, ‘মা, বাচ্চারা মারা যাচ্ছে মা, আমি কী করব।
৫ দিন আগেপশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে ঠিক এভাবেই হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকেরা। লাগাতার সেই আক্রমণ প্রবল হয়ে উঠেছে। এর বিরুদ্ধে সড়কে নামতে বাধ্য হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
৬ দিন আগেশেখ হাসিনার সমর্থকেরা নিজেদের এ স্থানকে দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনাই শুধু করেনি, প্রতিপক্ষ দলের কার্যক্রমকে তাদের প্রভাবের ওপর হুমকি হিসেবেও দেখেছেন। এমন মনোভাব আদতে শেখ পরিবারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতার নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
১০ দিন আগে