ঢাকার রাস্তায় অটোরিকশায় গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) বসানো হবে, যাতে নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করে চলাচল করতে না পারে ‘বাংলার টেসলা’-খ্যাত এই বাহন। এছাড়া অটোরিকশার এলাকা ভাগ করে দেওয়া হবে; এতে এক এলাকার রিকশা অন্য এলাকায় গিয়ে চলাচল করতে পারবে না। অটোরিকশার দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে করা প্রবিধানে সরকার নতুন করে কিছু সংযোজন এনেছে। শিগগিরই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
গেল ১২ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে ‘সিটি করেশন এলাকায় তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশা (ই-রিকশা) চলাচল প্রবিধান, ২০২৫’ প্রবিধানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে এই প্রবিধানের ওপর একটি বৈঠক হয়েছে।
এতে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মাহমুদুল হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা স্ট্রিমকে বলেন, ‘আগের প্রবিধানে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে এটি পাঠিয়ে দিয়েছি। ভেটিং শেষে দুয়েক দিনের মধ্যেই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।’
কী ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন বিধানে রিকশার বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ডুয়েট) চারটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ডিজাইনের দায়িত্ব। একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) অধীন পাঁচটির বেশি রিকশার মালিক হতে পারবেন না; আগে যেখানে একটির কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া নিবন্ধন ও নবায়ন ফি হালনাগাদ করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় এখন দুই ধরনের রিকশা চলে—পায়ে বা প্যাডেলচালিত ও ব্যাটারিচালিত। সাম্প্রতিক ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এসব রিকশা নিবন্ধনবিহীন, চালকেরও প্রশিক্ষণ নেই। গতি সাধারণ রিকশার চেয়ে বেশি, নিরাপত্তাও দুর্বল। ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহন ঠেকাতে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো সফলতা আসেনি; বরং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাটারিচালিত রিকশা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে থাকা চার্জিং পয়েন্ট বা চার্জিং স্টেশনগুলো থেকে রিকশা ও চালকদের তথ্য সংগ্রহ করলে প্রকৃতসংখ্যা জানা যাবে।
নতুন প্রবিধানে যা আছে, তাতেও বেপরোয়া পরিবহনটি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, রিকশার কাঠামো এমন হতে যাবে, যাতে ঘণ্টায় ১৫ কিমির বেশি গতিতে সেটি চলতে না পারে।
যা আছে প্রবিধানে
প্রবিধানে ই-রিকশার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশা (ই-রিকশা) মানে সরকার অনুমোদিত সীমিত গতির একটি তিন চাকার রিকশাকে বোঝানো হয়েছে, যা ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক মোটরের মাধ্যমে চালিত হয়। এটি চালক ছাড়া সর্বোচ্চ দুজন যাত্রী বহন করতে পারবে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত কোনো ওয়ার্ড বা নির্দিষ্ট এলাকার জন্য এসব রিকশার অনুমোদন নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে হবে রিকশা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে।
পরিবেশ সুরক্ষায় পুরাতন বা অকার্যকর ব্যাটারি নিরাপদ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও প্রবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পুরাতন ব্যাটারি সংগ্রহ ও স্টোরেজের ক্ষেত্রে সরাসরি ব্যবস্থা নেবে এবং পুরাতন বা ব্যবহৃত ব্যাটারি সহজ শর্তে সংগ্রহের ব্যবস্থা করবে সিটি করপোরেশন এবং তালিকাভুক্ত রিসাইক্লিং কারখানা।
এই প্রবিধান লঙ্ঘন করলে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর পঞ্চম তফসিল অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। আর বর্ণিত আইনের ধারা ৯২ ও ৯৩ অনুযায়ী শাস্তি বা দণ্ড দেওয়া হবে। পুলিশের এএসআই অথবা এটিএসআইয়ের নিচে না; এমন কোনো পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তার সামনে আইন লঙ্ঘন করা হলে তারা জরিমানা ধার্য, আদায় ও ব্যবস্থাপনা করবেন।
চালকের বিমা ও সনদ বাধ্যতামূলক
ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমা নেওয়া চালকের জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে। তবে, অটোরিকশার মালিকের জন্য এটি ঐচ্ছিক। চালক বা মালিক যে-কেউ বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে পারবেন। বিমার কভারেজ চলমান আছে কি না তা নিরীক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশন সময়কালভিত্তিক পর্যালোচনা করতে পারবে।
এই বিমা সনদ নবায়নের কপি প্রতি বছর নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বরাবর জমা দিতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ও দাবি নিষ্পত্তির দায়িত্ব পালন করবে সংশ্লিষ্ট বিমা প্রতিষ্ঠান। বিমা গ্রহণ সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ড চালকের লাইসেন্স ফাইলে সংযুক্ত রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মালিক ইচ্ছুক হলে নিজ বা যানবাহনের জন্য অতিরিক্ত বিমা গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
বাধ্যতামূলক হচ্ছে নিবন্ধন
তিন চাকার স্বল্পগতির এই ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে; দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনকে। সিটি করপোরেশন এটির জন্য একটি ইউনিক রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নম্বর প্লেটও দেবে।
আগের বিধানে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুকূলে একটির বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন করা যাবে না বলা হয়েছিল। তবে, সংশোধিত বিধানে এই সংখ্যা বাড়িয়ে পাঁচটি করা হয়েছে।
নিবন্ধন নবায়নের জন্য প্রতি দুই বছর অন্তর ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক হতে ইচ্ছুক হলে সেটির জন্য উপযুক্ত বৈধ বিমা নিতে পারবেন, তবে এটি নিবন্ধনের আবশ্যিক শর্ত নয়। সিটি করপোরেশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রিকশা মালিক ও চালকদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় গড়ে তোলা হবে।
চালকের লাইসেন্সিং
চালকের ন্যূনতম বয়স আঠারো বছর হতে হবে এবং বাংলা লিখতে ও পড়তে জানতে হবে। তারা ট্রাফিক আইন, সড়ক নিরাপত্তা, রোড মার্কিং, ট্রাফিক সাইন ও ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্তে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত সরকারী হাসপাতাল থেকে চালকদের দৃষ্টিশক্তিসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ সংগ্রহ করতে হবে। লাইসেন্স নবায়নের জন্য পাঁচ বছর অন্তর চালকদের ড্রাইভিং পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
কেমন হবে রিকশার ডিজাইন ও গতি
প্রতিটি তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হবে ২৫০ সেমি। আর প্রস্থ হবে সর্বোচ্চ ১১০ সেমি। সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইন গাইডলাইন অনুযায়ী প্রতিটি মডেলের ই-রিকশার ডিজাইন সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন থেকে টাইপ-অনুমোদন নিতে হবে।
শুধু সিটি করপোরেশন অনুমোদিত কারখানা বা ওয়ার্কশপ নিজ ব্র্যান্ড নামে ই-রিকশা প্রস্তুত করতে পারবে। চালক ছাড়া একটি ই-রিকশা সর্বোচ্চ দুজন যাত্রী বহন করতে পারবে। আগের প্রবিধানে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার রাখা হয়েছিল। স্কুল জোনে গতিসীমা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ কিলোমিটার। তবে, সংশোধিত প্রবিধানে সব এলাকায় সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার করা হয়েছে।
রিকশাগুলো নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করতে পারবে না এবং এর জন্য গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র সংযুক্ত থাকতে হবে। ব্যাটারির ধরন হবে উচ্চ দক্ষতার লিথিয়াম-আয়ন বা লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি। ব্যাটারিতে ফায়ার কেসিং ও সঠিক ইলেকট্রিক ইনসুলেশন থাকবে।
অটোরিকশায় বসবে জিপিএস
অটোরিকশার গতি নিয়ন্ত্রণে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) বসানো হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকালে স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘বুয়েটের ডিজাইনের অনুমোদিত অটোরিকশা ও বর্তমানে যে অটোরিকশা রয়েছে সেগুলোকে ব্যাটারি বদলে দিয়ে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি লাগানো হবে, যেটা এসব রিকশার গতি নিয়ন্ত্রণ করবে।’
‘পাশাপাশি, এসব রিকশার জোনভিত্তিক সীমানা বেঁধে দেওয়া হবে; তারা সীমানার বাইরে যেতে পারবে না। এগুলোতে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) বসানো হবে। আর ব্যাটারির সঙ্গে এমন প্রোগ্রাম থাকবে যে তারা কোনোভাবেই গতিসীমা অতিক্রম করতে পারবে না। অতিক্রম করলেই ব্যাটারি বন্ধ হয়ে যাবে। ব্যাটারি বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে রিকশাও বন্ধ হয়ে যাবে,’ যোগ করেন তিনি।
আপাতত দুই সিটি করপোরেশনের চারটি জায়গায় অটোরিকশা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘দুই-দুই করে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণের চার জায়গায় আমরা পরীক্ষামূলকভাবে এটা চালাব। আমরা এ জন্যই বৈঠকটি করেছি। স্থানীয় সরকার বিভাগ, দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, পুলিশ ও আইসিটির কর্মকর্তাদের নিয়ে এরইমধ্যে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।’
কতদিনের মধ্যে এটা কার্যকর করা হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চালকদের প্রশিক্ষণ হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে নগরভবনে পরীক্ষামূলকভাবে আমরা এটা চালু করে দেখবো।’
জিপিএস সিস্টেমের সফলতা নিয়ে আশঙ্কা
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে রূপান্তরকে পরিবেশবান্ধব বললেও জিপিএস বসানোর সিদ্ধান্তকে অকার্যকর বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘এই জিপিএস নষ্ট হয়ে যেতে তিন দিনের বেশি লাগবে না। আমি ৫০ কিলোমিটারের গতির সক্ষমতা ধরে জিপিএস বসিয়ে বলি—১৫ কিলোমিটারের বেশি চলতে পারবে না; সেটা কোনো কথা হলো না। রিকশাগুলো এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে, যাতে সেটা ১৫ কিলোমিটারের বেশি চলতে না পারে।’
সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে যারা জিপিএস বিক্রি করবেন, তাদের একটা ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট তৈরি হবে বলে তিনি জানান, ‘এটা অপ্রয়োজনীয়। যেখানে বাসে আমরা বাসের স্পিড গভর্ন্যান্স সিস্টেম কাজে লাগাতে পারছি না, সেখানে রিকশায় সেটা কীভাবে দেব?’
রিকশাগুলো গতি মেনে চলছে কিনা সেটা মনিটরিং করায় আরেকটি ঝক্কি তৈরি হবে বলেও মনে করেন সাইফুন নেওয়াজ। তিনি বলেন, ‘যদি জিপিএস নষ্ট করে দেওয়া হয়, তখন সেটা কে দেখবে? এটা ট্রাফিক পুলিশের ওপর নতুন একটা চাপ তৈরি করবে। এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে একটি রিকশায় কোনোভাবেই ১৫ কিলোমিটার বেশি গতি উঠতে না পারে।’
সনদ পেয়েছেন ২৪ হাজার অটোচালক
এরইমধ্যে ২৪ হাজার চালকে সনদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। শনিবার স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘এখন বিষয়টি পাইলটিং করে দেখবো যে আমরা যেভাবে চাচ্ছি, সেভাবে বিষয়টি চলছে কিনা।’
‘মূলসড়কে কোনোভাবেই উঠতে পারবে না অটোরিকশা। বিভিন্ন ওয়ার্ডে আমরা সংখ্যা বেঁধে দেব, যে সর্বোচ্চ কতগুলো রিকশা চলবে। যারা বুয়েটের ডিজাইন অনুসারে রিকশা বানিয়েছেন, তাদেরও আমরা জায়গা করে দেব পাইলটিংয়ের জন্য। কারণ, ভবিষ্যতে মানুষ এই রিকশাগুলো কিনবে,’ যোগ করেন তিনি।
পেশা বদলে বেঁধে দেওয়া হবে সময়
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ট্রান্সফরমেশনের পর পুরো অটোরিকশাকে প্রায় বছরখানেক সময় বেঁধে দেওয়া যাবে; যাতে চালকরা তাদের পেশা বদল করতে পারেন বলেও জানান ডিএনসিসি প্রশাসক। তিনি বলেন, ‘পুরনোগুলো সংখ্যা নির্ধারণ করে দেব। এরপর লিথিয়াম ব্যাটারির ট্রান্সফরমেশনটা করে দেব। এক বছরের জন্য তারা এটা চালাবে। এরপর বিকল্প কর্মসংস্থানের দিকে যাওয়া হবে। আমরা এভাবে যুক্তিসঙ্গতভাবে এগোব। একটা বিধি তৈরি হয়েছে।’
নতুন বিধানে কী কী যুক্ত করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লিথিয়াম ব্যাটারির কথা বলা হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে, যাতে শহরটা নোংরা হয়ে না যায়। বর্তমানে যারা অটোরিকশা চালাচ্ছেন, তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।’
‘আমরা অটোরিকশার সংখ্যাটা কমিয়ে আনতে চাই। পাশাপাশি, সংখ্যা-রুটসহ সবকিছুকে যুক্তিসংগত নিয়মের মধ্যে আনতে চাই। এখন তো কোনো নিয়মনীতি নেই। যাচ্ছেতাইভাবে চলছে। এভাবে একটি শহর চলতে পারে না,’ বলেন মোহাম্মদ এজাজ।
গতি নিয়ন্ত্রণে সংশোধিত প্রবিধানে কী থাকতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটারের বেশি হতে পারবে না।’
কত সংখ্যক অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যতগুলো বলবে, আমরা ততগুলোর অনুমোদন দেব। পুরনো অটোরিকশাও কিছুটা চলতে দেব। আর নতুনগুলো নামলে পুরোনোগুলো তো চলতে পারবে না।’
কোনো একক কোম্পানিকে মনোপলি করতে দেওয়া হবে না বলেও দাবি করেন ডিএনসিসি প্রশাসক। তিনি বলেন, ‘ডিজাইন ওপেন রাখা আছে; সেই ডিজাইন অনুসারে রিকশা আনতে চাইলে সেটা বুয়েটে পরীক্ষা হবে। তারপর কারখানা পরিদর্শন করে যদি সক্ষমতা দেখা যায়, তাহলে আমরা চলতে দেব।’
রিকশার মূল্য নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিএনজির ক্ষেত্রে যেমন মূল্য নিয়ে একটা সিন্ডিকেট হয়েছে, অটোরিকশার ক্ষেত্রে যাতে সেটা না ঘটে তা কড়াভাবে দেখা হবে।’
বিদ্যুৎনির্ভরতা কমাতে হবে
অটোরিকশার ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎনির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ। তিনি বলেন, ‘অটোরিকশার বিদ্যুৎনির্ভরতা কমিয়ে মেকানিক্যাল হুইল ব্যবহার করতে হবে। যাতে অল্প-চাপে রিকশা অনেক দূর যেতে পারে। এতে চালকের কষ্ট কমে যাবে।’
সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘ঢাকার রাস্তায় অটোরিকশার গতি যেমন কমাতে হবে, সংখ্যাটাও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কম গতির একটি ডিজাইন নির্ধারণ করতে হবে—বিদ্যুৎনির্ভরতা না-থাকাই ভালো। বিদ্যুৎনির্ভরতার কারণে বিদ্যুৎ অপচয় যেমন হয়, তেমনি দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। আর ব্যাটারিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে না পারলে বিদ্যুৎ অপচয় হবেই।’
‘পাশাপাশি, ঢাকার দুই সিটির অটোরিকশার জন্য আলাদা-আলাদা রং নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে। অথবা ঢাকাকে কয়েকটি জোনে ভাগ করেও রং ঠিক করা যেতে পারে; যাতে এক এলাকার রিকশা অন্য এলাকায় যেতে না পারে,’ বলেন এই বুয়েট শিক্ষক।
তিনি বলেন, অটোরিকশার গতি বেশি হলে রিকশা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।
রিকশার ডিজাইন নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রিকশার কাঠামোটা যেন বর্তমানের মতোই ওপেন (উন্মুক্ত) থাকে। অর্থাৎ কাঠামোগতভাবে রিকশা ও সিএনজির মধ্যে যেন স্পষ্ট পার্থক্য থাকে।’