leadT1ad

আজ কেউ গাধা ডাকলে রাগ করবেন না

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

সকালবেলা চায়ের দোকানে বসে রিপা তাঁর বন্ধু সৌভিকের অপেক্ষা করছিলো। দেরি হওয়ায় বিরক্তি বাড়ছিল তাঁর। ফোন করে সৌভিককে বললো ‘কিরে গাধা, তোর কোনো টাইম সেন্স নাই?’ পাশেই ছিল মালিহা। বললো, ‘আজ তো গাধা দিবস তাই গাধাটা দেরি করছে।’

আজ ৮ মে। বিশ্ব গাধা দিবস। ঠাট্টার ছলে আমরা প্রায়ই একে অপরকে গাধা বলে থাকি, বিশেষ করে যাদের বোকা ভেবে বসি তাদের। ‘গাধা’ শুধু আমাদের রোজকার মশকরা শব্দ নয়, সভ্যতা জুড়েও ঐতিহাসিক হয়ে আছে প্রাণীটি।

গাধা প্রায় ৫০০০ বছর আগে আফ্রিকার মরুভূমিতে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে মানুষের জীবনে প্রবেশ করে। প্রাচীন মিশর, গ্রিস, রোমান সাম্রাজ্যে গাধা ছিল বোঝা টানা, পানি বহন, কৃষিকাজ ও মালপত্র পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ উপায়। সোমালি বন্য গাধা ও নুবিয়ান বন্য গাধা হলো আধুনিক গাধার পূর্বপুরুষ। তাদের দৃঢ় সহনশীলতা, খারাপ আবহাওয়ায় টিকে থাকার ক্ষমতা এবং কম খাওয়ায়ও কাজ চালিয়ে নেওয়ার দক্ষতা মানুষকে বহু প্রতিকূল পরিবেশেও সঙ্গ দিয়েছে।

কিভাবে এলো গাধা দিবস 

বিশ্ব গাধা দিবসের ধারণাটি এসেছিল প্রাণীবিজ্ঞানী রাজিক আর্কের মাথা থেকে। তার আগ্রহ মূলত মরুভূমির প্রাণীদের নিয়ে। প্রায় দশ বছর আগে তিনি লক্ষ্য করেন, সারা বিশ্বের মানুষ গাধাকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করলেও এই প্রাণীটির পর্যাপ্ত মর্যাদা নেই। তাই প্রাণী হিসেবে গাধাকে মর্যাদা দিতে ও তাদের পরিশ্রমের মূল্যায়নে একটি ফেসবুক পেজ চালু করেছিলেন তিনি।

সেই পেজে তিনি এই প্রাণীটির বিভিন্ন প্রজাতির কথা লিখতেন। অবশেষে ২০১৮ সালে বিশ্ব গাধা দিবস উদযাপনের ধারণা আসে। তখন থেকে দিবসটি উদযাপন হয়ে আসছে। এ ছাড়া বিখ্যাত ফটোগ্রাফার ও চলচ্চিত্রনিমার্তা মার্ক মেয়ার্স ‘পিসফুল ভ্যালি ডাংকি রেসকিউ’ এর প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্দেশ্য ছিল গাধার কল্যাণ, তাদের প্রতি মানবিক আচরণ এবং মানুষকে এই প্রাণীর অবদান সম্পর্কে সচেতন করা। প্রতিবছর গাধা দিবসে এ সংস্থা প্রাণী অধিকার কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা বিভিন্ন রকম প্রচারণা, স্বাস্থ্য শিবির, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

গাধা কেন নির্বোধের প্রতীক

গাধা আর বোকাকে আমরা যেহেতু এক করে দেখলেও গাধার চরিত্র তেমন নয়। ঐতিহাসিকভাবেই গাধা পৃথিবীতে নিজেদের দৃঢ় অভিযোজন ক্ষমতা দিয়ে টিকে আছে। প্রতিকূল পরিবেশেও তারা মাইলের পর মাইল কার্গো টানতে সক্ষম। অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বেশি সময় পরিশ্রম করতে পারে। তাদের চলার গতি ঘণ্টায় ৩১ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। গড় আয়ু ৫০ থেকে ৫৪ বছরের মধ্যে জীবনের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত গাধা সক্ষম থাকে। সবথেকে মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর নানা জাতির লোকসংস্কৃতিতে নানা প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ কিংবা পূজিত হলেও গাধাকে নিয়ে এমন নজির নেই।

গাধাকে বোকা প্রাণী হিসেবে দেখার কারণ তার একগুঁয়েমি। গাধা খুব জেদি স্বভাবের, সহজে কারও আদেশ মানে না। অথচ কৃষি বা খামারের কাজে গাধা অনেক মূল্যবান ছিল, কারণ পোষ মানাতে কষ্ট হলেও কাজের ক্ষেত্রে গাধা ছিল অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।

ভার বহনের দিক থেকে গাধার তুলনা হয় না। আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ অনেক পাহাড়ি দেশে গাধাকে এখনও টানাগাড়ি টানতে বা ভার বহনে ব্যবহার করা হয়। গাধার স্মৃতিশক্তিও চমৎকার। একবার যে পথ ধরে চলে, সেটি গাধা সহজে ভোলে না। পরিচিত কোনো এলাকা সে প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত মনে রাখতে সক্ষম।

গাধা বিপজ্জনক কাজ করে না

গরু, মহিষ বা ঘোড়াকে যেমন সহজে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা যায়, গাধার ক্ষেত্রে তা প্রায় অসম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, কোনো প্রাণীকে একটি অজানা গভীরতার পানির মধ্য দিয়ে যেতে বলা হলে ঘোড়া সহজেই নির্দেশ মেনে পানিতে নেমে পড়ে, ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা না করেই। কারণ ঘোড়ার স্বভাবেই রয়েছে আজ্ঞাবহতা। কিন্তু গাধা বিপরীত; সে ঝুঁকি অনুভব করতে পারে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়।

গাধার পছন্দ-অপছন্দ অত্যন্ত দৃঢ়। বিপদ আঁচ করতে পারলে গাধাকে কোনোভাবেই সেই পথে ঠেলা যায় না। দাঁড়িয়ে থাকবে এক জায়গায়, যতই চাপ বা শাস্তি দেওয়া হোক, এক চুলও সরবে না। যেমন, একটি ঢালু পথের সামনে যদি সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কা থাকে—যেমন পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার সম্ভাবনা, তবে গাধা কোনোভাবেই সে পথে পা বাড়াবে না।

এরপরও কেউ গাধা ডাকলে রাগ করা উচিত হবে কি?

Ad 300x250

সম্পর্কিত