গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরভাবে এগোতে পারছে না বলে জানিয়েছে হামাস। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৭৭ জন নিহত হয়েছেন। খবর আল জাজিরা।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) হামাসের কর্মকর্তা হুসাম বদরান বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যতক্ষণ না দখলদার বাহিনী যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন বন্ধ করছে ও তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হামাস মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধ করেছে যেন তারা ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়িয়ে প্রথম ধাপের বাস্তবায়ন সম্পন্ন নিশ্চিত করে।’
প্রথম ধাপের বাস্তবায়নে গতি নেই
১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে গাজায় থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর আংশিক প্রত্যাহার ছিল প্রধান লক্ষ্য। তবে পরবর্তী ধাপ গাজার প্রশাসন কাঠামো, আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী নিয়োগ এবং ‘শান্তি বোর্ড’ গঠন—এ বিষয়ে অগ্রগতি নেই।
গাজা কর্তৃপক্ষের দাবি, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে অন্তত ৭৩৮ বার ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তারা বলছে, এসব হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল।
আলোচনা এগোচ্ছে, তবে বহু বাধা রয়ে গেছে: যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা এগোলেও ‘গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ’ এখনও কাটেনি। তিনি জানান, ২০২৬ সালের শুরুতেই একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তুতি চলছে। কোন দেশ এই বাহিনীতে অংশ নেবে, কমান্ড কাঠামো কেমন হবে এবং নিয়ম-কানুন কী হবে—তা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ‘শান্তি বোর্ড’ থেকে সাবেক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ইসরায়েলের গাজা থেকে পূর্ণ প্রত্যাহার ও হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি স্পষ্ট রয়েছে। পাশাপাশি গাজায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে একটি পুলিশ বাহিনী গঠনের বিষয়েও আলোচনা চলছে।
‘হলুদ রেখা’ নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
ইসরায়েল বর্তমানে ‘হলুদ রেখা’ বলে চিহ্নিত গাজা অঞ্চলের প্রায় ৫৮ শতাংশ অংশে অবস্থান করছে। ইসরায়েলি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির দাবি করেছেন এটি নাকি ‘নতুন সীমান্ত’।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক বলেন, যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় এমন কোনো সীমান্ত নির্ধারণের কথা নেই।
নতুন হামলা, ভাঙচুর অব্যাহত
ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিমান ও গোলাবর্ষণ করেছে। হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। উত্তর গাজায় বেইত লাহিয়ায় ভবন ভাঙার কাজও অব্যাহত রয়েছে।
গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব কর্মকাণ্ড ‘যুদ্ধবিরতির মানবিক প্রোটোকলকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করছে।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০ হাজার ৩৬৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করা হয়।