জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কীভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের দমন-পীড়নের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রেখেছিল, সে বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ ও জবানবন্দি দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার মুখোমুখি হয়েছেন ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম। তাঁর অভিযোগ মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য (ভিসি) মাকসুদ কামাল ও তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ ও ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহ।
তদন্ত সংস্থার কাছে জবানবন্দি দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সাদিক কায়েম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশে বহিরাগতদের নিয়ে আমাদের ভাই-বোনদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছেন তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামাল। আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময়ও দফায় দফায় হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। হাসিনার প্রশাসন, যাদের ইন্ধনে আমাদের ভাই-বোনদের শহীদ করা হয়েছে এবং রক্তাক্ত করা হয়েছে; তাদের বিরুদ্ধে আজ সাক্ষ্য দিতে এসেছি।’
প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে, তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি পৃথক মামলায় সাদিক কায়েম তাঁর জবানবন্দি দিতে পারেন।
জিয়াউল আহসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির
এদিকে আজ ট্রাইব্যুনালের দুটি কক্ষেই ছিল গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের মামলার কার্যক্রম চলে। এ মামলায় গুম-খুনের অন্যতম অভিযুক্ত ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে আজ সকালে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আজ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। এর আগে গত ২৬ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও জিয়াউল আহসানসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমার সময় বাড়িয়েছিলেন।
হানিফের মামলায় ‘ক্যামেরা ট্রায়াল’
অপরদিকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এই মামলার অন্যতম আসামি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
প্রসিকিউশন জানিয়েছে, সাক্ষীদের জীবনের নিরাপত্তা ও ভীতির পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে আদালত ‘ক্যামেরা ট্রায়াল’ বা রুদ্ধদ্বার কক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন। আজ মামলার দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। এর আগে প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দিও গোপনীয়তা রক্ষা করে নেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী, সাক্ষীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আদালত প্রকাশ্যে শুনানির পরিবর্তে ইন-ক্যামেরা প্রসিডিংয়ের আদেশ দিতে পারেন।