জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় প্রধান মোতালেব শিকদারকে গুলির ঘটনায় ‘আলোচিত’ তরুণী তনিমা ওরফে তন্বীকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে নগরের সদর থানার টুটপাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয় বলে খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তৈমুর ইসলাম জানান।
আটক তরুণী নিজেকে খুলনা জেলা যুব শক্তির ‘সদস্যসচিব‘ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি যুবশক্তির খুলনা জেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব।
যদিও এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি পুলিশ। তাকে আটক ও পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া সম্পর্কেও তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
ঘটনার শুরুতে মোতালেব শিকদার পুলিশকে জানান, মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তরা তাঁকে রাস্তায় গুলি করে পালিয়ে গেছে। তবে পরে তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়, ঘটনাটি বাসার ভেতরেই ঘটেছে। পুলিশ বলছে, তনিমা ওরফে তন্বীর ভাড়া বাসাতেই সোমবার বেলা ১১টার গুলিবিদ্ধ হন মোতালেব শিকদার। তার কানের পাশে গুলি লেগে বেরিয়ে যায়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঘটনার পর ওই ফ্ল্যাট থেকে ইয়াবা, মদের খালি বোতল ও গুলির খোসা পাওয়া গেছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, সঙ্গে থাকা সহযোগীরাই গুলি করেছে মোতালেবকে। মাদক-চাঁদাবাজির ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।
খুলনা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম জানান, সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে, রোববার রাত থেকে নগরের আল আকসা মসজিদ সরণির ১০৯ নম্বর রোডের মুক্তা হাউজের নিচতলায় ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করছিলেন মোতালেব শিকদার। সোমবার বেলা ১১টার আগে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি বাড়ি থেকে বের হন।
ঘটনার পর থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়া তনিমা ওরফে তন্বী পলাতক ছিলেন জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ওই ফ্ল্যাট থেকে একটি গুলির খোসা, পাঁচটি মদের বোতল, ইয়াবা ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে, তারা এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন এবং নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।’ এ ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
তনিমা ওরফে তন্বীর ভাড়া করা ফ্ল্যাট বাসা ‘মুক্তা হাউজের’ মালিকের স্ত্রী আশরাফুন নাহার বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী নামে এক তরুণী এক মাস আগে নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। তিনি নিজেকে এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন।’
আশরাফুন নাহার বলেন, ‘তার কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে এ মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। বাড়ি ছাড়ার আগেই এ ঘটনা ঘটল।’
এনসিপির খুলনা মহানগরের একজন সংগঠক সাইফ নেওয়াজ বলেন, ‘মোতালেব শিকদার এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক। কিছুদিনের মধ্যে খুলনায় দলের একটি বিভাগীয় শ্রমিক সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেটা নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন।’
ঘটনার প্রকৃত কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে বের করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন এনসিপির খুলনার সংগঠক হামীম আহম্মেদ রাহাত।
এনসিপির খুলনা জেলার সমন্বয়কারী মাহমুদুল হাসান ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। আমরা এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’
জানা যায়, নগরের সোনাডাঙ্গা শেখপাড়া পল্লীমঙ্গল স্কুল এলাকার মৃত মোসলেম শিকদারের ছেলে পেশায় ট্রাকচালক মোতালেব একসময় শ্রমিক লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কয়েক মাস আগে যোগ দেন এনসিপির সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তিতে।