leadT1ad

তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে ইসির বৈঠক

নির্বাচনে মাঠে থাকবে ১ এক লাখ সেনাসদস্য, প্রস্তুত তিন বাহিনী

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৩
সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় নির্বাচন কমিশনে বৃহস্পতিবার বৈঠক হয়। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে তিন বাহিনী সমন্বিতভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বিষয়টি জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মাঠে মোতায়েন করা হবে।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে নির্বাচনপূর্ব প্রথম বৈঠকে বসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।

দুপুর ১২টায় রাজধানীর নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন চার নির্বাচন কমিশনার—আব্দুর রহমানেল মাছউদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, বেগম তাহমিনা আহমেদ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ।

আজ সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, তিন বাহিনীর প্রধানরা নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি জানান, নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর প্রায় এক লাখ সদস্য মোতায়েন করা হবে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সেনাসদস্য ইতোমধ্যে মাঠে রয়েছেন। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ ধাপে ধাপে মোতায়েন করা হবে। শুধু নির্বাচনের শেষ পাঁচ দিন নয়, তার আগেই পুরো এক লাখ সেনাসদস্য মাঠে থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘তিন বাহিনী আশ্বস্ত করেছে যে মাঠপর্যায়ে তারা সমন্বিতভাবে কাজ করছে এবং সারা দেশে যেসব স্থানে বাহিনী মোতায়েন রয়েছে, সেখানে একজন সদস্যও কমানো হয়নি। বরং প্রয়োজনে মোতায়েন আরও বাড়ানো হবে। বাহিনীগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করছে।’

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান (অপারেশন) জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ের সমন্বয় সেলের মাধ্যমে বাহিনীগুলোকে কাজ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কমান্ড ও কন্ট্রোল ব্যবস্থার সমন্বয় এবং একাধিক বাহিনী একসঙ্গে অভিযানে অংশ নিলে একটি লিড বা প্রধান নিয়ন্ত্রকের অধীনে অপারেশন পরিচালনার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক

এদিন বিকেলে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত আরেকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এতে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।

এ বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছয়টি বিষয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড সহ্য না করার কঠোর নির্দেশনা, গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে পৃথক বৈঠকের মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ, যৌথ বাহিনীর অভিযান পুনরায় জোরদার ও অস্ত্র উদ্ধার, প্রার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আচরণবিধি প্রতিপালনে সন্তোষ প্রকাশ এবং সাম্প্রতিক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পৃক্ততা পর্যালোচনা।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ বিকৃত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না। বাহিনীগুলোকে এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচনী আমেজ: শোক থেকে উৎসবে ফেরার প্রত্যয়

নির্বাচনী পরিবেশ ও উৎসবের আমেজ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কারণে দেশব্যাপী একটি শোকাবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী উৎসবের পরিবেশকে কিছুটা ব্যাহত করেছে।

তিনি বলেন, শহীদ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জাতি হিসেবে আমরা গভীরভাবে ব্যথিত। তবে এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যারা পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, তারা ব্যর্থ হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্টে লিখিত অভিযোগের আহ্বান

অভিযোগ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, সাম্প্রতিক দুটি অভিযোগের বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে একজন রাজনৈতিক নেতা কোনো থানায় বা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি।

তিনি জানান, অভিযোগ আচরণবিধি লঙ্ঘন কিংবা অন্য যেকোনো নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে হতে পারে। এসব অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তদন্ত কমিটি (ইনকোয়ারি কমিটি), রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা অথবা সরাসরি নির্বাচন কমিশনের কাছেও লিখিতভাবে দাখিল করা যাবে।

তিনি বলেন, ‘টপ-ডাউন বা বটম-আপ—যেকোনো পর্যায় থেকে অভিযোগ এলে তা যথাযথ কমিটির কাছে তদন্তের জন্য পাঠানো হবে এবং তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘যাদের কোনো অভিযোগ আছে, তারা যেন লিখিতভাবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা দাখিল করেন। আমরা নিশ্চিত করতে চাই—প্রতিটি অভিযোগের ওপর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পোস্টাল ভোট ও প্রার্থী নিরাপত্তা

পোস্টাল ভোট প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ জানান, নিবন্ধনের জন্য এখনো চার দিন সময় রয়েছে। আজ রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৭৬ জন পোস্টাল ভোটার হিসেবে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ২৯ হাজার ৬২১ জন এবং নারী ৩৫ হাজার ৩৫৩ জন।

সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন হয়েছে সৌদি আরব থেকে—১ লাখ ৩৬ হাজার ৯১৭ জন। এরপর রয়েছে কাতার (৫১ হাজার ৭৩১), ওমান (৩৭ হাজার ৯৬১), মালয়েশিয়া (৩৬ হাজার ২০১) এবং বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ৮৩৪ জন।

তিনি আরও জানান, নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় তাদের জন্য পোস্টাল ভোট নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।

প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ ইতোমধ্যে একটি প্রোটোকল তৈরি করেছে বলেও জানান তিনি। ওই প্রোটোকল অনুযায়ী নিরাপত্তা চাওয়া প্রার্থীদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে কেউ নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বা সংবেদনশীলতা অনুভব করলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত