leadT1ad

আবারও গোপালগঞ্জ যাব, প্রত্যেক গ্রামে কর্মসূচি করব: নাহিদ ইসলাম

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৫: ২২
নাহিদ ইসলাম। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা আবারও গোপালগঞ্জে যাব। জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রত্যেক উপজেলায়, প্রত্যেক গ্রামে কর্মসূচি করব।’

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে নাহিদ এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গোপালগঞ্জের ঘরে ঘরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পতাকা উড়বে। গোপালগঞ্জ মুজিববাদীদের হবে না, বাংলাদেশপন্থীদের হবে।’

গতকাল বুধবার দেশজুড়ে ‘জুলাই পদযাত্রা’র ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ছিল এনসিপির। দলটির এ কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জে দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এদিন সকালে এনসিপি নেতারা গাড়িবহর নিয়ে শহরে ঢোকার আগেই পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে ইউএনওর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। দুপুর দেড়টার দিকে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে গিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় এনসিপির সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায়।

সংক্ষিপ্ত পথসভা শেষে এনসিপি নেতারা পুলিশি নিরাপত্তায় টেকেরহাট হয়ে মাদারীপুরের দিকে যান। তবে পথে বেলা পৌনে তিনটার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে আবার হামলা হয়। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষে গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

এসব ঘটনায় চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। গতকালই জেলায় কারফিউ জারি করা হয়, যা চলবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত। এর মধ্যে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে যৌথ বাহিনী।

ফেসবুক পোস্টে এনসিপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন নাহিদ। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর দাবি জানান তিনি।

নাহিদ লিখেছেন, ‘আমরা যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে যাইনি। আমাদের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্য সশস্ত্র হামলা চালায় আমাদের ওপরে। যে রকমটা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেও হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সব সময় একটা গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গোপালগঞ্জ নিয়ে আমাদের অবস্থান গতকালের বক্তব্যেই পরিষ্কার বলা হয়েছে। পুরো বাংলাদেশের প্রতি আমাদের যে কমিটমেন্ট, গোপালগঞ্জের প্রতিও আমাদের সে কমিটমেন্ট। গোপালগঞ্জের অধিবাসীদের প্রতি রাজনৈতিক বৈষম্য আমরা বিরোধিতা করি।’

গতকালের পরিস্থিতির দায় প্রশাসনকে নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, ‘আমরা চারজনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমরা সমর্থন করি না, প্রত্যাশা করি না। সন্ত্রাসীদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা যদি সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিত তাহলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না।’

পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। শুধু গোপালগঞ্জ নয়, সারা দেশে এ গ্রেপ্তার অভিযান চালাতে হবে বলেও দাবি করেন নাহিদ।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গোপালগঞ্জ ও পুরো বাংলাদেশকে আমরা মুজিববাদী সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করব। আওয়ামী লীগ যুগের পর যুগ ধরে গোপালগঞ্জের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বেইনসাফি করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাব।’

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ নাহিদের। তিনি লিখেছেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের এত হত্যাযজ্ঞের পরেও ৫ আগস্টের পরে অনেকে “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” আনতে চেয়েছিল। তাদের মনে রাখা উচিত, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।’

প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফ্যাসিবাদের দোসর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ঘাপটি মেরে আছে বলে অভিযোগ করেন নাহিদ ইসলাম।

নাহিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার নেতা-কর্মীরা গতকাল গোপালগঞ্জে ছিল। প্রশাসন ও নিরাপত্তাবাহিনী যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছে, সকালের নাশকতার পরেও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স পেয়েই আমরা গোপালগঞ্জে প্রবেশ করেছি। পদযাত্রা করিনি, পথসভা করেছি শুধু।’

গতকালের হামলার ঘটনায় যাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নাহিদ। তিনি বলেছেন, ফরিদপুরে পদযাত্রায় দেখা হবে।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা কমিট করেছিলাম, গোপালগঞ্জে যাব। আমরা গেছি এবং শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে ঘোষণা করছি, মুজিববাদকে গোপালগঞ্জ ও বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়াতে দেব না। শহীদ বাবু মোল্লার গোপালগঞ্জ, শহীদ রথীন বিশ্বাসের গোপালগঞ্জকে আমরা পুনরুদ্ধার করব। মকসুদপুরে কোটালীপাড়ায় আমাদের শহীদদের কবর রয়েছে। এ মাটি মুজিববাদীদের হতে দেব না। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও মুজিববাদীর হবে না, ইনশাআল্লাহ।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত