leadT1ad

বড়দিন ও তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন: রাজধানীতে ৬ স্তরের নিরাপত্তা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ১০
নিরাপত্তা টহল। ছবি: সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। একই দিনে দেশে ফিরছেন বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান। দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা স্ট্রিমকে জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে ‘কাভার্ট অ্যান্ড ওভার্ট’ (দৃশ্যমান ও গোপন) নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ, ডিবি ও সোয়াট সদস্যদের সমন্বয়ে এই বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।

তারেক রহমানের আগমনের আগে ও পরে বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত পথ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ পাহারায় থাকবে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসার, বিএনপির নিজস্ব ‘চেয়ারপারসনস সিকিউরিটি ফোর্স’ (সিএসএফ) ও দলীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর বাইরেও থাকছে অদৃশ্য গোয়েন্দা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘বড়দিন এবং তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে রাজধানীজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা এলাকাভেদে পুরো রাজধানীকে তিনটি জোনে ভাগ করে নিরাপত্তাকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। সেই মোতাবেক মাঠে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যদের।’ তিনি আরও বলেন, ‘বড়দিন উপলক্ষে নিরাপত্তার পাশাপাশি তারেক রহমানকে সর্বোচ্চ স্তরের পুলিশি প্রটোকল দেওয়া হবে।’

পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তারেক রহমানের ব্যবহারের জন্য দলীয়ভাবে বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় থাকবে বিএনপির নিজস্ব সিএসএফ। এর পরের স্তরগুলোতে পর্যায়ক্রমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা—পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, আনসার ও সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েনের মাধ্যমে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুরো নিরাপত্তার কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সরাসরি তদারক করা হচ্ছে।

‘বড়দিনে’র নিরাপত্তায় র‍্যাবের বিশেষ ব্যবস্থা
বুধবার র‍্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করছে র‍্যাব ফোর্সেস। একই সঙ্গে বড়দিনকে কেন্দ্র করে র‍্যাব বিশেষ নিরাপত্তাকৌশল গ্রহণ ও মোতায়েন করেছে।

বড়দিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও র‍্যাব ফোর্সেস বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে র‍্যাব ২৩ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ পর্যাপ্তসংখ্যক র‍্যাব সদস্য মোতায়েন করেছে। র‍্যাব ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ গির্জা, উপাসনালয় ও অনুষ্ঠানস্থলে প্রয়োজনীয় সুইপিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‍্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব মেট্রোপলিটন শহর, জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে চার্চ ও গির্জাসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসমূহে চেকপোস্ট স্থাপন, পর্যাপ্তসংখ্যক টহল মোতায়েন এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সব মেট্রোপলিটন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরসমূহে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয়সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে।

চক্রান্তকারী, উসকানিদাতা এবং সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বিষয়ে আগাম তথ্য সংগ্রহপূর্বক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

ভার্চুয়াল জগতে যেকোনো ধরনের গুজব বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে র‍্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। যারা সাইবার জগতে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে উসকানি দেওয়ার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা করবে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ গির্জা, উপাসনালয় ও অনুষ্ঠানস্থলে অপতৎপরতাকারীদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বড়দিন উদযাপন কমিটি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করছে। এ ছাড়া উদযাপন কমিটির স্বেচ্ছাসেবক এবং কর্তব্যরত র‍্যাব সদস্যদের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোনো দুষ্কৃতকারী গির্জা ও অনুষ্ঠান এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গুরুত্বপূর্ণ চার্চ, উপাসনালয় এবং অনুষ্ঠানস্থলসমূহে আগত নারীদের উত্ত্যক্ত, ইভ টিজিং ও যৌন হয়রানি রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গির্জাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় সেখানে দায়িত্বরত র‍্যাব সদস্যদের সর্বদা সহায়তা করার জন্য গির্জা কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাসেবক টিমকে অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ গির্জাগুলোতে নিরাপত্তা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষের স্থাপন করা সিসিটিভিগুলো যথাযথভাবে মনিটরিং করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছে র‍্যাব।

ব্যাটলিয়নসমূহ নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। র‍্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের (হটলাইন নম্বর: ০১৭৭৭৭২০০২৯) মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হচ্ছে। বড়দিনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে কেউ নাশকতার চেষ্টা করছে—এমন কোনো তথ্য পেলে র‍্যাবকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বড়দিনের উৎসবকে কেন্দ্র করে চক্রান্তকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নিয়ে জনস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ নিতে না পারে, তার জন্য কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‍্যাব। এ ছাড়া বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা, ভিআইপি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও ধর্মযাজকদের নিরাপত্তার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহপূর্বক ঝুঁকি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বড়দিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান—বিশেষ করে ঢাকার বনানী, গুলশান, উত্তরা, পূর্বাচল, ৩০০ ফিট, হাতিরঝিল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের অভিজাত হোটেল ও ক্লাবগুলোতে এবং কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের আড়ালে অশ্লীল কর্মকাণ্ড, ইভ টিজিং ও নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা রোধকল্পে বড়দিন উদযাপন কমিটিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বঙ্গভবন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা, বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার অফিস এবং গণভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও কেপিআই-এর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন স্ট্রিমকে জানান, একই দিনে দুটি বড় ইভেন্ট। একটি ধর্মীয়, আরেকটি রাজনৈতিক। দুটো বড় ইভেন্টের ভিন্ন ভিন্ন ন্যাচার (ধরন) অনুযায়ী আমরা আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজিয়েছি। এ–সংক্রান্ত সমন্বয়ের জন্য গতকালও একটি মিটিং হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সেই মোতাবেক তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে পুরো নিরাপত্তার বিষয় ডিএমপি মনিটরিং করবে। আর বড়দিনের নিরাপত্তার জন্য সারা দেশেই আমাদের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। দুটি অনুষ্ঠানই শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য আমরা সবাইকে পটকা, আতশবাজিসহ আগুন দ্বারা পরিচালিত ফানুস উড়ানো বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। তল্লাশি ও চেকপোস্টও বাড়ানো হয়েছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত