leadT1ad

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিল ভারত

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’র ব্যানারে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী লঙ্ঘনের চেষ্টা করা হয়নি বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটি জানিয়েছে, তারা কোনো নিরাপত্তা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেনি; বরং কয়েক মিনিট পর পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ভ্রান্তিমূলক প্রচারণায় লিপ্ত হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বিভিন্ন অংশ ভ্রান্তিমূলক প্রচারণায় লিপ্ত হয়েছে বলে আমরা লক্ষ্য করছি। বিষয়টি হচ্ছে, ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ২০ থেকে ২৫ জন তরুণ জড়ো হয়ে ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিয়েছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ সময় বাংলাদেশের সব সংখ্যালঘুর সুরক্ষার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী লঙ্ঘন কিংবা কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়নি। কয়েক মিনিট পরই বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেখানে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ। এই ঘটনাগুলোর দৃশ্যমান প্রমাণ সবার দেখার জন্য প্রকাশ্যে রয়েছে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী—নিজেদের ভূখণ্ডে অবস্থিত বিদেশি মিশন ও পোস্টগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রেখে চলেছে ভারত। আমাদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় আমাদের গভীর উদ্বেগ তাদের জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্যও আমরা আহ্বান জানিয়েছি।’

এর আগে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের বাসভবন ‘বাংলাদেশ হাউস’-এর বাইরে একদল লোক জড়ো হয়ে ‘হুমকি’ দিয়েছেন। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার মধ্যে তিনটি গাড়িতে করে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশ ভবনের প্রধান ফটকের সামনে এসে স্লোগান দিতে থাকেন।

হাইকমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা বাংলা ও হিন্দির মিশ্রণে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর মধ্যে ছিল—‘হিন্দুদের রক্ষা করতে হবে’ এবং ‘বাংলাদেশে যদি ভারতীয় হাইকমিশনে আঘাত করা হয়, এখানে একই কাজ করা হবে’। প্রথমে তাঁরা ফটকের বাইরে থেকে স্লোগান দেন। পরে মূল প্রবেশদ্বারের কাছাকাছি গিয়ে কিছুক্ষণ মৌখিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। এরপর তাঁরা এলাকা ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো শারীরিক হামলা হয়নি এবং ভবনের দিকে কোনো কিছু নিক্ষেপ করা হয়নি। পরিস্থিতি মৌখিক আগ্রাসনের বাইরে আর বাড়েনি। সবকিছু স্বাভাবিক আছে এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’র ব্যানারে বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’র ব্যানারে বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার ফয়সল মাহমুদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে আগেই হাইকমিশনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। দেশটির কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশের (সিআরপিএফ) প্রায় ৪০ জন সদস্য মিশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে দিতে চলে যায়।

এর আগে গত বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যে টানাপোড়েন চলছে, সেটিকে ‘বাস্তবতা’ হিসেবে মেনে নেওয়াই ভালো।

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ভালো কার্যকর সম্পর্ক চাই। তবে আমরা চাইলেই সেটা হবে, এমন কোনো কথা নেই।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তাদের হাইকমিশনারকে ডেকেছি। সেখানে আমরা যা বলেছি, সবকিছু তারা গ্রহণ করেনি; তাদের কিছু দ্বিমত আছে। একইভাবে আমাদের হাইকমিশনারকেও তারা ডেকেছে। এমনটা সাধারণত ঘটে।’

কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দেশ নতুন একটি ধাপে পৌঁছেছে কি না—জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা বলা কঠিন—নতুন একটি ধাপ শুরু হয়েছে কি না। বাস্তবতাকে মেনে নেওয়াই ভালো যে, সরকারের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত টানাপোড়েন আছে।’

তিনি যোগ করেন, ‘ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েন ছিল—এটা মেনে নিয়েই আমরা সবসময় বলে এসেছি—আমরা একটি ভালো কার্যকর সম্পর্ক চাই। আমরা চাইলেই সেটা হবে, এমন কোনো কথা নেই।’

দুপক্ষ থেকেই সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, আমরা দুপক্ষ মিলেই হয়তো অতটা এগোতে পারিনি, টানাপোড়েনটা রয়েই গেছে। ইদানীং কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে, তাদেরও নিজস্ব অবস্থান আছে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতে বসে শেখ হাসিনা আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য দিতেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেখলাম, মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও তাঁর বক্তব্য এসেছে। সেই বক্তব্যের মধ্যে প্রচুর উসকানি রয়েছে, যা আমরা দেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আদালতের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সাজা পেয়েছেন। আমাদের পাশের দেশে বসে তিনি এখানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন—এতে আমরা আপত্তি করব কিংবা তাঁকে ফেরত পাঠাতে সহায়তা চাইব, এটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তারা (ভারত) সেদিকে যায়নি।’

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ভারত নসিহত দিচ্ছে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সর্বশেষ বক্তব্যে তারা আমাদের নসিহত করেছেন। সেই নসিহতের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে—সেটা নিয়ে প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না। প্রথম দিন থেকেই আমরা স্পষ্টভাবে বলে আসছি, মানুষ যাতে ভোট দিতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যা গত ১৫ বছর ছিল না। আমরা জানি, আমরা কী করব।’

তিনি বলেন, ‘এখন ভারত যে উপদেশ দিচ্ছে, সেটিকে আমরা অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করি এই কারণে যে, গত ১৫ বছর যে সরকার ছিল, তাদের সঙ্গে ভারতের মধুর সম্পর্ক ছিল। তখনকার নির্বাচনগুলো প্রহসনমূলক হলেও তারা একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত