ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে মারা যাওয়া বাসের চালক জুলহাস মিয়ার বাড়িতে বইছে শোকের ছায়া। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ভালুকজান এলাকার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের মা-বোন ও স্ত্রীর কান্না যেন থামছেই না। তাঁদের সান্ত্বনা দিতে আশাপাশের বাড়ির লোকজন ভিড় করেছেন সেখানে।
বছরখানেক আগে উপজেলার ভালুকজান এলাকায় মায়ের কেনা ৪ শতক জমিতে প্রায় ছয় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন জুলহাস। তিনটি এনজিও থেকে তিন লাখ ও স্বজনদের কাছ থেকে আরও তিন লাখ টাকা ধার করেন। মাসে অন্তত ১৫ হাজার টাকা করে তাঁকে কিস্তি দিতে হয়। জুলহাস বাস চালিয়ে একাই পুরো সংসারের টানছিলেন। সেই ঋণ এখনো শোধ হয়নি। এর আগেই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে এই চালকের।
জুলহাসের মৃত্যুতে এই ঋণ কীভাবে মেটাবেন, তা নিয়ে পরিবারটির দুর্ভাবনার যেন অন্ত নেই। বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তাঁর মা সাজেদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার পুতেরে কেরা পুড়াইড়া মারল গো। আমারে অহনা কেরা খাওয়াইয়া দিবো। আমার এই ঋণ এহন কেরা বহন করব গো। আনহেগো বুগলো বিচার চাই।’
জুলহাস মিয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামের আবদুল বারেক ও সাজেদা আক্তারের ছেলে। সোমবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে ফুলবাড়িয়া-কেশরগঞ্জ সড়কের ভালুকজান এলাকায় দুর্বৃত্তদের আগুনে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই সময় তিনি আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে ঘুমিয়ে ছিলেন।
জুলহাসের ছোট বোন ময়না আক্তার বলেন, গত মঙ্গলবার সর্বশেষ তার ভাই বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি এক সপ্তাহ বা ১৫ দিন পরপর বাড়িতে যেতেন। বাড়িতে এক-দুই দিন থেকে আবার বাস চালাতে বের হতেন। তিনি বলতে থাকেন, ‘আমার ভাই আমগর সংসারের একমাত্র ভরসা। যারা আমার ভাইডারে পুড়ে মারছে, তাগর আমি দেখবার চাই। তাগর বিচার চাই।’
মামাতো বোনকে বিয়ে করে মাত্র এক বছর আগে সংসার পেতেছিলেন জুলহাস মিয়া। স্বামীর মৃত্যুতে নির্বাক স্ত্রী জাকিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনেই কেন এমন হইল। আমার স্বামীকে কেন এমনে মরতে হইল। আমি অহনা কারে লইয়া বাঁচমু? যারা আমার জামাইরে মারছে তাগর ফাঁসি চাই।’
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুকনুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে কাজ চলছে।