leadT1ad

খালেদা জিয়ার প্রয়াণ

সুস্থ হলে আবার বগুড়ায় আসবেন বলেছিলেন তিনি, সেই স্মৃতিতে মুহ্যমান বগুড়ার নেতাকর্মীরা

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৫
বগুড়া শহরের নবাববাড়ী সড়কে জেলা কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা। স্ট্রিম ছবি

সুস্থ হলে আবার বগুড়ায় আসবেন বলেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন আগে রাজধানীর গুলশানে নিজস্ব বাসভবনে বগুড়ার নেতাদের সঙ্গে এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা। বেশ অসুস্থ থাকার পরও সেদিন দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই আসা হলো না আর। তাঁর মৃত্যুতে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছেন বগুড়ার নেতাকর্মীরা।

খালেদা জিয়ার হাজারো স্মৃতিবিজড়িত জেলা বগুড়া। তিনি বগুড়ার সন্তান শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানে সহধর্মিণী তিনি। এছাড়া বগুড়া-৬ (সদর) আসনে তিনবার ও ৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর) আসনে পাঁচবার সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাই এলাকার পুত্রবধূ ও এমপি হিসেবে তাঁকে ঘিরে বগুড়ার মানুষেরও আবেগের কমতি নেই। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তাঁর মৃত্যুর খবরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপি কার্যালয়ে এসেছিলেন সাধারণ মানুষও।

তরুণ ব্যবসায়ী শফিউল আলম সাফি, ক্ষুদে ব্যবসায়ী বিপুল বলেন, খালেদা জিয়ার আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁরা বাকরুদ্ধ। দেশের স্বার্থের তাঁর আরও কিছুদিন বেঁচে থাকা জরুরি ছিল। তাঁরা (স্থানীয়রা) আশা করেছিলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাঁর হাত ধরে বগুড়ায় আবারও উন্নয়ন হতো। এই জেলার সব উন্নয়নের সঙ্গেই তিনি জড়িত। তাই তাঁকে ঘিরে স্থানীয়দের আবেগও বেশি।

শোকের প্রকাশ হিসেবে শহরের নবাববাড়ী সড়কে অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আজ কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিএনপির নেতারা জানান, বগুড়ার সঙ্গে খালেদা জিয়ার সম্পর্ক দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি ছিল। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যেমন হৃদ্যতা ছিল, সাধারণ মানুষের কাছেও ছিলেন প্রিয় নেত্রী। তাই তাঁর মৃত্যুর খবরে দলের নেতাকর্মীসহ শোকে ভেঙে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাই আগামীকাল তাঁর জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য অনেকেই রাজধানীতে যাচ্ছেন।

সকালে শহরের জেলা বিএনপির কার্যালয় গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই কার্যালয়ে আসা শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। কালো ব্যাচ ধারণ করেছেন তাঁরা। শোক বইয়ে স্বাক্ষর করছেন। খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কার্যালয়ের পাশে নবাববাড়ী সড়কে দোকান বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে খালেদা জিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনায় বগুড়ায় দোয়া মাহফিল করেছে জেলা বিএনপি। আজ বাদ জোহর শহরের বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদে এই মাহফিল হয়। এতে খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ জিয়া পরিবারের জন্য দোয়া করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি-ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন এলাকার নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন।

খালেদা জিয়া দেশের সংকটে পথপ্রদর্শক ছিলেন উল্লেখ করে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ‘বগুড়াবাসী সবচেয়ে বেশি কাছে পেয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়াকে। তিনি আবার বগুড়ায় আসবেন, সেই অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। শত নির্যাতন সহ্য করেও তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে গেছেন। তিনি সব সময় দেশের মানুষের চিন্তা করতেন, কীভাবে মানুষের ভালো হয়। তিনি পরিবার, ঘর ছাড়া হলেও কখনো জনগণকে ছাড়েননি, জনগণও তাঁকে ছাড়েনি। তাঁর মৃত্যুতে শুধু বগুড়া নয়, গোটা দেশ অভিভাবক হারিয়েছেন।’

খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে। ১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮৩ সালে বিএনপির নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। টানা ৩৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে মারা যান ‘গণতন্ত্রের আপোশহীন নেত্রী’ খ্যাত খালেদা জিয়া।

Ad 300x250

সম্পর্কিত