leadT1ad

খুলনায় আদালত পাড়ায় জোড়া খুন: হয়নি মামলা, আটক যুবককে ফাঁসানোর অভিযোগ

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
খুলনা

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৩
৩০ নভেম্বর খুলনা আদালতপাড়ায় খুন হন দুজন। সংগৃহীত ছবি

খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে গুলিতে দুই যুবক নিহতের ঘটনার তিন দিন পরও মামলা করেনি তাঁদের পরিবার। পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাজি না হওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হাই।

আজ বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টা পর্যন্ত খুলনা সদর থানায় খোঁজ নিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।

গত রোববার (৩০ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে হাসিব হাওলাদার (৪১) ও ফজলে রাব্বি রাজন (৩৭) গুলিতে নিহত হন। তাঁদের মধ্যে হাসিব নগরের নতুনবাজার ওয়াপদা বেড়িবাঁধের মিনারা গলি ও রাব্বি রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসার বাগমারা এলাকার বাসিন্দা।

মামলা না করার বিষয়ে হাসিব হাওলাদারের ভাই সুমন হাওলাদার বলেন, ‘কারা হত্যা করেছে, আমরা জানি না। তার ওপর আমরা আতঙ্কে আছি। মারা যাওয়া বড় ভাই ও আমার সন্তানসহ সবার নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

পরিবারের নিরাপত্তায় প্রশ্নে উদ্বেগ জানিয়ে সুমন বলেন, ‘পরিবারে এখন একমাত্র ছেলে আমি। আমাদের ওপর যদি আক্রমণ আসে, তাই আমরা কোনো মামলায় যেতে চাই না। বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হাসিব হাওলাদার ও ফজলে রাব্বির বিরুদ্ধে ছয়টি করে মামলা আছে। তাঁরা ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ পলাশের সহযোগী ছিলেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি চৌধুরী ওরফে ‘গ্রেনেড বাবু’র সহযোগীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।

আটক রিপনকে ফাঁসানোর অভিযোগ

এদিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে রিপন শেখ (৩৩) নামের গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গত সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে নগরের নতুনবাজার চরের স্কুল গলি এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর আটক বিষয় পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ‘রিপনকে সদর থানায় নিয়ে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলায় তাঁর সম্পৃক্ততা পেলে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’

রিপন নতুনবাজার মাছ গলির বাসিন্দা আবদুল জলিলের ছেলে। তাঁকে ফাঁসিয়ে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। এ বিষয়ে আজ বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিপনের স্ত্রী আঁখি বলেন, ‘রিপন মাছ ব্যবসায়ী, অহেতুক হয়রানির জন্য তাঁকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে। অথচ ঘটনার দিন তিনি ফকিরহাটের ফলতিতা বাজারে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাছ কিনছিলেন। এ বিষয়ে ভিডিও ও চালান বই আছে।’

আঁখির দাবি, রিপন কোনো গ্যাং, সন্ত্রাসী গ্রুপ বা মাদক চক্রের সঙ্গে কখনো যুক্ত ছিলেন না।

তবে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আটক রিপন বিলুপ্ত হওয়া ‘ইহুদি বাহিনী’র শীর্ষ সদস্যদের একজন ছিলেন। ওই বাহিনীর প্রধান বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর ২০০৩ সালে বাহিনীটি বিলুপ্ত হয়। তবে তখনকার সদস্যরা অন্য গ্রুপে যুক্ত হয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।

এই অভিযোগ প্রসঙ্গে আঁখি বলেন, বাহিনীটি ২০০৩ সালে বিলুপ্ত হয়েছে। এখন রিপনের বয়স ৩৩। ২২ বছর আগে তার বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। এ ধরনের ‘হাস্যকর গল্প’ এলাকায় অস্বস্তি তৈরি করেছে।

এসআই আবদুল হাই বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (দক্ষিণ) সুদর্শন কুমার রায় বলেন, পুলিশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে হত্যাকাণ্ড-গুলো তদন্ত করছে। এসব হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারও আছে। নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে জন্য সতর্ক হয়ে কাজ করছে পুলিশ। এতে তদন্ত শেষ করতে সময় বেশি লাগছে।

নগরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিরির অবনতি

খুলনায় দিনের বেলাতেও প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যা নামলেই নগরীতে ভর করে অজানা আতঙ্ক। নগরবাসী বলছেন, প্রতি রাতেই শহরের কোথাও না কোথাও গোলাগুলি, অস্ত্রের মহড়া, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা বা সংঘর্ষে ঘটনা ঘটছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ১৬ মাসে খুলনা নগরে ৪৮টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে, যা পূর্ববর্তী ১ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে খুলনা জেলায় ৪৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া নৌ-পুলিশের সামগ্রিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১ বছরে খুলনা অঞ্চলের নদ-নদী থেকে মোট ৫০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (সিটিএসবি) ত. ম. রোকনুজ্জামান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর অনেকের বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে। সেগুলো সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। এ ছাড়া খুলনা অঞ্চলে আগে থেকেই পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আধিপত্য ছিল। তাদের কাছেও কাটা রাইফেলসহ বেশ কিছু অস্ত্র রয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত থেকে পাচার হয়ে বিদেশি পিস্তল, রিভলভার আসছে। পুলিশ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় রয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, খুনিরা সব সময় শহরে চলাফেরা করে না। তাদের টার্গেট কিলিংয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে খুন বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘সম্প্রতি যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে, এর বেশিরভাগই “টার্গেট কিলিং”। তিনি বলেন, প্রতিটি ঘটনায় আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। অপরাধীরা জায়গা বদল করে। ফলে অনেক সময় তাদের ধরা কঠিন হয়ে পড়ে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত