কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। আইনগত বিধিনিষেধের কারণে কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী সৈকত থেকে সেন্ট মার্টিনে কোনো জাহাজ চালুর সুযোগ নেই।
আজ (২৭ অক্টোবর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে পাঠানো এক চিঠিতে নীতিগত সম্মতি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে পাঁচটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। এ ইসিএ এলাকার মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা (রাজস্ব বিভাগের রেকর্ডভুক্ত সমুদ্রসৈকত, বালুচর, খাড়ি, বন ও জলাভূমি), ইনানী মৌজা ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ অন্তর্ভুক্ত।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)–এর ৫(৪) ধারা অনুযায়ী, ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন বলিয়া ঘোষিত এলাকায় কোনো ক্ষতিকর কর্ম বা প্রক্রিয়া চালু রাখা বা শুরু করা যাইবে না।’
এ ছাড়া প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬–এর ১৮(ক) বিধিতে বলা হয়েছে, ক্ষতিকর কাজ বা প্রক্রিয়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক অবস্থা, জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, সংরক্ষিত বন, নদ–নদী, খাল–বিল, হাওর–বাওড়, জলাভূমি, পাখির আবাসস্থল, মৎস্য ও জলজ প্রাণীর অভয়াশ্রম, উপকূলীয় বন ও ম্যানগ্রোভ এলাকার অবক্ষয়সহ সব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।
চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আগের নিয়মেই কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ।’
১২ দফা নির্দেশনায় নতুন বিধিনিষেধ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সরকার গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়া যাবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে; কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন। ভ্রমণের সময়সূচি ও পর্যটক উপস্থিতি এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা কেবল দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেওড়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়–বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক–ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
সৈকতে মোটরসাইকেল, সি–বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচলও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। দ্বীপে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক—যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সরকার আশা করছে, এই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠবে।