বিশ্বরাজনীতির অস্থির প্রেক্ষাপটে ভারত, রাশিয়া ও চীনের ত্রিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্রমেই বাড়ছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির চাপ উপেক্ষা করে ২০২৩ সালে এই তিন দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। তেল–গ্যাস থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য ও ভোক্তা সামগ্রী—কে কার কাছ থেকে কী কিনছে, সেই বাণিজ্য প্রবাহই এখন বৈশ্বিক অর্থনীতির ভারসাম্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
স্ট্রিম ডেস্ক

গত রোববার (৩১ আগস্ট) চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে ২০টিরও বেশি দেশের নেতারা একত্রিত হয়েছিলেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) শেষ হওয়া এ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘গ্লোবাল সাউথ’কে (বৈশ্বিক দক্ষিণ) কেন্দ্রে রেখে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি নতুন রূপরেখা তুলে ধরেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে বৈশ্বিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে চীনের প্রেসিডেন্ট সম্মেলনের প্রতিনিধিদের বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে এবং প্রকৃত বহুপক্ষবাদকে (মাল্টিল্যাটারালিজম) চর্চা করতে হবে।’
এই সম্মেলনে ভারত ও রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল অর্থনীতির রাষ্ট্রের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যারা চীনের সঙ্গে মিলে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি দখলে রেখেছে।
অর্থনৈতিক জটিলতা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে চীন, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪৫২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের ৩৫১ বিলিয়ন ডলার থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসসিওকে প্রায়শই মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বিকল্প ক্ষমতাকেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়। ১০ সদস্যবিশিষ্ট এই সংস্থায় রাশিয়া, চীন, ভারত, ইরান, পাকিস্তান ও বেলারুশসহ মধ্য এশিয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশও রয়েছে। সম্মিলিতভাবে এই জোট বিশ্বের প্রায় ৪৩ শতাংশ মানুষ ও ২৩ শতাংশ জিডিপির প্রতিনিধিত্ব করে।
বহুপক্ষবাদের পক্ষে চীনের এই প্রচেষ্টা এমন সময়ে এলো যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে মার্কিন বাণিজ্য শুল্কনীতি এসসিও সদস্যদের একই কাতারে এনে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
চীনের বাণিজ্য অংশীদার বৈচিত্র্যময় হলেও এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে ৪৪২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা চীনের মোট রপ্তানির ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিকস, যন্ত্রপাতি, ভোক্তা সামগ্রী ও টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম।
আঞ্চলিকভাবে এশিয়ার দেশগুলোই চীনের প্রধান বাজার। ২০২৩ সালে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কাছে মোট ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে চীন। এর মধ্যে ভারত একাই চীনের কাছ থেকে ১২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনেছে, যা চীনের মোট রপ্তানির ৩ দশমিক ১ শতাংশ।

ইউরোপে ৮১৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে চীন। এর মধ্যে জার্মানি (১৫১ বিলিয়ন ডলার), রাশিয়া (১১০ বিলিয়ন ডলার) ও যুক্তরাজ্য (৯৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার) অন্যতম ক্রেতা।
ভারতেরও সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছ থেকে ৮১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা দেশটির মোট রপ্তানির ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস, মূল্যবান পাথর, যন্ত্রপাতি ও টেক্সটাইল।
আঞ্চলিকভাবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশও ভারতের প্রধান রপ্তানি বাজার। ২০২৩ সালে এশিয়ার দেশগুলোতে ভারত ১৭৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। ২০২৩ সালে ইউএইতে ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ভারত, যা তাদের মোট রপ্তানির ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে প্রধানত রয়েছে গয়না ও শোধিত পেট্রোলিয়াম।
ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার, যেখানে ২২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করেছে দেশটি। এর মধ্যে কেবল শোধিত পেট্রোলিয়ামই ১৫ বিলিয়ন ডলারের। চীন ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম বাজার।
চলতি বছরের ৬ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। ভারতের রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল ক্রয়ের নীতিকে এই অত্যাধিক শুল্কের কারণ হিসেবে তুলে ধরেন ট্রাম্প। ভারত এ শুল্ককে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অন্যায়’ আখ্যা দিয়ে কঠোর নিন্দা জানায় এবং নিজেদের প্রয়োজনে স্বাধীনভাবে জ্বালানি-নীতি নির্ধারণের সার্বভৌম অধিকার পুনর্ব্যক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়ার দেওয়া বিশেষ ছাড়ের কারণে ভারত রুশ তেল আমদানি অব্যাহত রাখে।
ইউক্রেন যুদ্ধের আগে রাশিয়ার বাণিজ্যের বাজার ছিল বেশ বৈচিত্র্যময়। ওইসি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বাজার ছিল চীন। ওই বছর চীনে ৭২.১ বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করেছিল রাশিয়া, যা দেশটির মোট রপ্তানির ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ৩৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার (৮ শতাংশ) পণ্য কিনে চীনের পরেই ছিল ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস। ২৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের (৫ দশমিক ৫ শতাংশ) পণ্য কিনে তৃতীয়স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে চালানো আগ্রাসনের পর কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে রাশিয়া। এরপরই পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ব্যাপকভাবে কমে যায়। ২০২৩ সালে চীন একাই রাশিয়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রপ্তানি (১২৯ বিলিয়ন ডলার) করেছে। ৬৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের (১৬ দশমিক ৮ শতাংশ) পণ্য কিনে এরপরেই ছিল ভারতের অবস্থান। তৃতীয়স্থানে ছিল তুরস্ক, ২০২৩ সালে দেশটি ৩১ বিলিয়ন ডলারের (৭ দশমিক ৯ শতাংশ) পণ্য কিনেছে রাশিয়ার কাছ থেকে। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রপ্তানির তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি অংশ নিয়ে এশিয়াই রাশিয়ার প্রধান বাজারে পরিণত হয়েছে।
২০২৩ সালে চীন রাশিয়ায় ১১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ছিল যন্ত্রপাতি ও পরিবহন সরঞ্জাম। ওইসি’র তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি রপ্তানি পণ্য ছিল গাড়ি।
অন্যদিকে, রাশিয়া চীনে ১২৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে, যার প্রায় সবই খনিজ দ্রব্য – বিশেষত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জ্বালানি পণ্য রপ্তানির কারণে রাশিয়া চীনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত অর্জন করছে।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারত বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে। ২০২৩ সালে রাশিয়া ভারতে ৬৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে, যার প্রায় ৮৮ শতাংশই জ্বালানি পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস, যা ভারত বিশেষ ছাড়ে কিনছে।
অন্যদিকে, ভারত রাশিয়ায় রপ্তানি করেছে মাত্র ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি ও ধাতব পণ্য।
চীনের সঙ্গেও ভারত বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে। ২০২৩ সালে চীন ভারতে ১২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে প্রধানত ছিল যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য। অন্যদিকে, ভারত চীনে মাত্র ১৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার বড় অংশ ছিল তেল ও জ্বালানি-সম্পর্কিত পণ্য।
ভারত, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য শুধু পরিসংখ্যানে নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এই বাণিজ্যের মধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অসমতা। তবুও গ্লোবাল সাউথের শক্তি হিসেবে এই তিন দেশের পারস্পরিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন শক্তির ভারসাম্য তৈরি করতে পারে বলেও ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা চাপ সত্ত্বেও এই ত্রিমুখী ঐক্য ভবিষ্যৎ বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র ধীরে ধীরে এশিয়ার দিকেই সরে আসারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আল-জাজিরার এক্সপ্লেইনার। অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ।

গত রোববার (৩১ আগস্ট) চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে ২০টিরও বেশি দেশের নেতারা একত্রিত হয়েছিলেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) শেষ হওয়া এ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘গ্লোবাল সাউথ’কে (বৈশ্বিক দক্ষিণ) কেন্দ্রে রেখে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি নতুন রূপরেখা তুলে ধরেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে বৈশ্বিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে চীনের প্রেসিডেন্ট সম্মেলনের প্রতিনিধিদের বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে এবং প্রকৃত বহুপক্ষবাদকে (মাল্টিল্যাটারালিজম) চর্চা করতে হবে।’
এই সম্মেলনে ভারত ও রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল অর্থনীতির রাষ্ট্রের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যারা চীনের সঙ্গে মিলে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি দখলে রেখেছে।
অর্থনৈতিক জটিলতা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে চীন, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪৫২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের ৩৫১ বিলিয়ন ডলার থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসসিওকে প্রায়শই মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বিকল্প ক্ষমতাকেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়। ১০ সদস্যবিশিষ্ট এই সংস্থায় রাশিয়া, চীন, ভারত, ইরান, পাকিস্তান ও বেলারুশসহ মধ্য এশিয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশও রয়েছে। সম্মিলিতভাবে এই জোট বিশ্বের প্রায় ৪৩ শতাংশ মানুষ ও ২৩ শতাংশ জিডিপির প্রতিনিধিত্ব করে।
বহুপক্ষবাদের পক্ষে চীনের এই প্রচেষ্টা এমন সময়ে এলো যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে মার্কিন বাণিজ্য শুল্কনীতি এসসিও সদস্যদের একই কাতারে এনে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
চীনের বাণিজ্য অংশীদার বৈচিত্র্যময় হলেও এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে ৪৪২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা চীনের মোট রপ্তানির ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিকস, যন্ত্রপাতি, ভোক্তা সামগ্রী ও টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম।
আঞ্চলিকভাবে এশিয়ার দেশগুলোই চীনের প্রধান বাজার। ২০২৩ সালে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কাছে মোট ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে চীন। এর মধ্যে ভারত একাই চীনের কাছ থেকে ১২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনেছে, যা চীনের মোট রপ্তানির ৩ দশমিক ১ শতাংশ।

ইউরোপে ৮১৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে চীন। এর মধ্যে জার্মানি (১৫১ বিলিয়ন ডলার), রাশিয়া (১১০ বিলিয়ন ডলার) ও যুক্তরাজ্য (৯৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার) অন্যতম ক্রেতা।
ভারতেরও সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছ থেকে ৮১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা দেশটির মোট রপ্তানির ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস, মূল্যবান পাথর, যন্ত্রপাতি ও টেক্সটাইল।
আঞ্চলিকভাবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশও ভারতের প্রধান রপ্তানি বাজার। ২০২৩ সালে এশিয়ার দেশগুলোতে ভারত ১৭৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। ২০২৩ সালে ইউএইতে ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ভারত, যা তাদের মোট রপ্তানির ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে প্রধানত রয়েছে গয়না ও শোধিত পেট্রোলিয়াম।
ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার, যেখানে ২২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করেছে দেশটি। এর মধ্যে কেবল শোধিত পেট্রোলিয়ামই ১৫ বিলিয়ন ডলারের। চীন ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম বাজার।
চলতি বছরের ৬ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। ভারতের রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল ক্রয়ের নীতিকে এই অত্যাধিক শুল্কের কারণ হিসেবে তুলে ধরেন ট্রাম্প। ভারত এ শুল্ককে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অন্যায়’ আখ্যা দিয়ে কঠোর নিন্দা জানায় এবং নিজেদের প্রয়োজনে স্বাধীনভাবে জ্বালানি-নীতি নির্ধারণের সার্বভৌম অধিকার পুনর্ব্যক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়ার দেওয়া বিশেষ ছাড়ের কারণে ভারত রুশ তেল আমদানি অব্যাহত রাখে।
ইউক্রেন যুদ্ধের আগে রাশিয়ার বাণিজ্যের বাজার ছিল বেশ বৈচিত্র্যময়। ওইসি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বাজার ছিল চীন। ওই বছর চীনে ৭২.১ বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করেছিল রাশিয়া, যা দেশটির মোট রপ্তানির ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ৩৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার (৮ শতাংশ) পণ্য কিনে চীনের পরেই ছিল ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস। ২৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের (৫ দশমিক ৫ শতাংশ) পণ্য কিনে তৃতীয়স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে চালানো আগ্রাসনের পর কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে রাশিয়া। এরপরই পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ব্যাপকভাবে কমে যায়। ২০২৩ সালে চীন একাই রাশিয়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রপ্তানি (১২৯ বিলিয়ন ডলার) করেছে। ৬৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের (১৬ দশমিক ৮ শতাংশ) পণ্য কিনে এরপরেই ছিল ভারতের অবস্থান। তৃতীয়স্থানে ছিল তুরস্ক, ২০২৩ সালে দেশটি ৩১ বিলিয়ন ডলারের (৭ দশমিক ৯ শতাংশ) পণ্য কিনেছে রাশিয়ার কাছ থেকে। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রপ্তানির তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি অংশ নিয়ে এশিয়াই রাশিয়ার প্রধান বাজারে পরিণত হয়েছে।
২০২৩ সালে চীন রাশিয়ায় ১১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ছিল যন্ত্রপাতি ও পরিবহন সরঞ্জাম। ওইসি’র তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি রপ্তানি পণ্য ছিল গাড়ি।
অন্যদিকে, রাশিয়া চীনে ১২৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে, যার প্রায় সবই খনিজ দ্রব্য – বিশেষত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জ্বালানি পণ্য রপ্তানির কারণে রাশিয়া চীনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত অর্জন করছে।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারত বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে। ২০২৩ সালে রাশিয়া ভারতে ৬৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে, যার প্রায় ৮৮ শতাংশই জ্বালানি পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস, যা ভারত বিশেষ ছাড়ে কিনছে।
অন্যদিকে, ভারত রাশিয়ায় রপ্তানি করেছে মাত্র ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি ও ধাতব পণ্য।
চীনের সঙ্গেও ভারত বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে। ২০২৩ সালে চীন ভারতে ১২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে প্রধানত ছিল যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য। অন্যদিকে, ভারত চীনে মাত্র ১৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার বড় অংশ ছিল তেল ও জ্বালানি-সম্পর্কিত পণ্য।
ভারত, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য শুধু পরিসংখ্যানে নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এই বাণিজ্যের মধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অসমতা। তবুও গ্লোবাল সাউথের শক্তি হিসেবে এই তিন দেশের পারস্পরিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন শক্তির ভারসাম্য তৈরি করতে পারে বলেও ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা চাপ সত্ত্বেও এই ত্রিমুখী ঐক্য ভবিষ্যৎ বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র ধীরে ধীরে এশিয়ার দিকেই সরে আসারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আল-জাজিরার এক্সপ্লেইনার। অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ।

ইসরায়েল গাজাকে নিরাপত্তা সমস্যা হিসেবে দেখছে, আর ফিলিস্তিনিরা একে দেখছে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে। এই দুই দৃষ্টিভঙ্গির মেরুকরণ যতদিন না কমবে, ততদিন যেকোনো যুদ্ধবিরতিই হবে ক্ষণস্থায়ী।
২ ঘণ্টা আগে
ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শুধু বিনোদন নয়—মত প্রকাশ, পরিচয় নির্মাণ ও বিশ্বসংযোগেরও প্রধান মাধ্যম। এমন এক সময়ে অস্ট্রেলিয়া ১৬ বছরের নিচের ব্যবহারকারীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার ঐতিহাসিক আইন পাস করেছে।
৮ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে। এটি বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অধ্যাদেশের ফলে সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠিত হয়। এতে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সরাসরি প্রধান বিচারপতির অধীনে আসে।
১ দিন আগে
ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারছেন কিনা, কোনো কারচুপি হচ্ছে কিনা কিংবা নির্বাচনী কর্মকর্তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা—এসব বিষয় তদারকি করে প্রতিবেদন দেওয়াই তাদের কাজ।
২ দিন আগে