leadT1ad

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে ফের সংঘর্ষ, নিহত ২

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৬
সোমবার সকালে কম্বোডিয়ায় বিমান হামলা চালায় থাইল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত

ফের সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। থাইল্যান্ড বলেছে, কম্বোডিয়ার সীমান্তরক্ষীদের গুলির জবাবে তারা দেশটির ভেতরে সামরিক অবস্থানগুলোতে বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে কম্বোডিয়াও থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।

থাইল্যান্ড জানিয়েছে, হামলায় অন্তত দুই থাই সেনা নিহত হয় এবং আরও কয়েকজন আহত হয়। কম্বোডিয়ার কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সংঘর্ষের মূল কেন্দ্র প্রাহ ভিহিয়ার মন্দির অঞ্চলের নিকটবর্তী এলাকা।

এতে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনা হঠাৎ করে তীব্র আকার নিয়েছে। বছরের শুরুর দিকে করা যুদ্ধবিরতির পর উত্তেজনা কিছুটা কমলেও আগুন নেভেনি।

এর আগে জুলাই মাসেও বড় ধরনের সংঘর্ষ হয় এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, অব্যাহত উত্তেজনা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় আরও বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধ বহু দিনের। মূল বিরোধ ১১ শতকের প্রাহ ভিহিয়ার মন্দিরকে ঘিরে, যা ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত কম্বোডিয়ার মালিকানায় দেয়। থাইল্যান্ড মন্দিরের আশপাশের কিছু ভূখণ্ডের দাবিতে এখনো অটল। এ কারণে সময় সময়ে সংঘর্ষ হয়।

২০২৫ সালের জুলাই মাসে টানা পাঁচ দিনের লড়াইয়ে অন্তত ৪৮ জন নিহত হয়। প্রায় তিন লাখ মানুষ সীমান্ত অঞ্চল থেকে স্থানান্তরে বাধ্য হয়। পরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।

অক্টোবর মাসে কুয়ালালামপুরে আসিয়ান সম্মেলনে ট্রাম্পের উপস্থিতিতে একটি বিস্তৃত শান্তি চুক্তিও হয়। কম্বোডিয়া পরে এ উদ্যোগের জন্য ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেয়।

তবে গত মাসে সীমান্তে এক ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে দুই থাই সেনা আহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে শুরু করে। থাইল্যান্ড যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে। কম্বোডিয়া দাবি করে, বিস্ফোরকটি পূর্ববর্তী যুদ্ধের সময়ের পুরনো মাইন।

এরপর গতকাল রবিবার (৭ ডিসেম্বর ২০২৫) থাইল্যান্ডের সিসাকেত প্রদেশে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। থাই সেনারা জানায়, কম্বোডিয়ান সেনারা রাস্তা নির্মাণে নিয়োজিত থাই প্রকৌশলীদের সুরক্ষায় থাকা সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। প্রায় ১৫–২০ মিনিটের গোলাগুলিতে দুই থাই সেনা মারা যায়। কম্বোডিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে এবং দাবি করে থাইল্যান্ডই আগে গুলি চালায়।

আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর ২০২৫) সকালে চং বক এলাকায় আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। লড়াই ছড়িয়ে পড়ে প্রাহ ভিহিয়ার ও ওদর মিনচে প্রদেশ পর্যন্ত। থাইল্যান্ড অভিযোগ করে, কম্বোডিয়ান বাহিনী বেসামরিক এলাকায় রকেট নিক্ষেপ করে এবং ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। কম্বোডিয়া পাল্টা দাবি করে থাইল্যান্ডই আগ্রাসন শুরু করে।

পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় থাই বাহিনী কম্বোডিয়ান সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়। স্থানীয়ভাবে অস্ত্র পরিবহনে ব্যবহৃত বলে অভিযোগ থাকা একটি কেবল কার ধ্বংস করা হয়। সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে হামলা শুরু হয়। কম্বোডিয়া পাল্টা হামলা চালায়নি, তবে ঘটনাকে গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মানচিত্রে অবস্থান। ছবি: সংগৃহীত।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মানচিত্রে অবস্থান। ছবি: সংগৃহীত।

রবিবারের সংঘর্ষে থাইল্যান্ডের অন্তত দুই সেনা নিহত হয়েছে। আর সোমবারের সংঘর্ষে চারজন থাই সেনা আহত হয়। রকেট হামলায় কোনো বেসামরিক ব্যক্তি হতাহত হয়নি।

কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে কোনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তারা জানিয়েছে, থাইল্যান্ড তাদের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে।

সংঘাত বাড়ার পর থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী চারটি প্রদেশ থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। প্রায় ৩৫ হাজার বাসিন্দা আশ্রয়কেন্দ্রে যায়। এটি জুলাইয়ের বাস্তুচ্যুতির ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলে মনে করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের উপর ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে।

থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র উইনথাই সুবারি বলেন, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং বেসামরিক নিরাপত্তার স্বার্থে বিমান হামলা জরুরি ছিল। তাঁর দাবি, কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে রকেট হামলা চালিয়েছে। থাইল্যান্ড যুদ্ধবিরতির প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেও দায় কম্বোডিয়ার ওপর চাপায়।

অন্যদিকে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচিয়া ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন দাবি করেন, থাইল্যান্ডই আগে আক্রমণ করেছে। তারা বলেন, কম্বোডিয়া কোনো পাল্টা হামলা চালায়নি এবং উসকানিতে পা না দিয়ে শান্তি চুক্তির প্রতি অঙ্গীকার বজায় রেখেছে। হুন সেন সতর্ক বার্তা দিয়ে বলেন, উত্তেজনা বাড়লে ‘রেড লাইন’ অতিক্রম হতে পারে, তবে তিনি সংযমের আহ্বান জানান।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই সমঝোতায় সরাসরি যুক্ত থাকায় ঘটনাটি ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ ট্রাম্পের যুদ্ধ বন্ধের আগের দাবিকে ব্যঙ্গ করে মন্তব্যও করেছেন।

বিশ্লেষকেরা বলেছেন, জুলাইয়ের চুক্তি শুরু থেকেই ভঙ্গুর ছিল। আবার কেউ কেউ প্রাহ ভিহিয়ার মন্দির অঞ্চলকে সংঘাতের মূল কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া বা আসিয়ান থেকে সঙ্গে সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনা দীর্ঘদিনের বিরোধ মীমাংসায় তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা কতটা কঠিন তা আবারও দেখিয়েছে।

এই উত্তেজনা কয়েক মাসের শান্তি কূটনীতি ব্যর্থ করে দিতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে আঞ্চলিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। দুই দেশের অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগ ও নিরপেক্ষ তদন্তের অভাব সমস্যাকে আরও জটিল করছে। ট্রাম্পের সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপকে আবারও সক্রিয় করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা দ্রুত আসিয়ানের মাধ্যমে সংলাপ শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে জুলাইয়ের মতো সহিংসতা ফের না ফিরে আসে। পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ হলেও নতুন হামলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে দুই পক্ষেই সামরিক সতর্কতা জারি রয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত