স্ট্রিম ডেস্ক

নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি নানা দিক থেকে অনন্য। তিনি হবেন ১৮৯২ সালের পর শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র, প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া প্রথম ব্যক্তি যিনি এই পদে আসীন হবেন।
গত বছর তিনি প্রায় অচেনা এক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামেন। তাঁর প্রচারণায় তহবিল ছিল সীমিত, আর দলের প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনও তেমন পাননি। তবুও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে তাঁর জয় এক বিস্ময়কর ঘটনা।
মামদানি এমন এক প্রজন্মের প্রতিনিধি, যাকে ডেমোক্র্যাট দলের প্রগতিশীল অংশ বহুদিন ধরে খুঁজছিল। তিনি তরুণ, আকর্ষণীয় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দক্ষ। তাঁর জাতিগত পরিচয় দলটির বৈচিত্র্যময় ভিত্তির প্রতিফলন। তিনি রাজনৈতিক বিতর্ক এড়িয়ে যাননি; বরং গর্বের সঙ্গে বামপন্থী নীতি যেমন বিনামূল্যে শিশুসেবা, গণপরিবহন সম্প্রসারণ ও বাজার ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
তবে একই সঙ্গে তিনি শ্রমজীবী ভোটারদের আর্থিক উদ্বেগকেও গুরুত্ব দিয়েছেন—যে শ্রেণি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেমোক্র্যাটদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি সাংস্কৃতিক ইস্যুতে দলের প্রগতিশীল নীতির প্রতি অনুগত থেকেছেন।
সমালোচকেরা বলছেন, মামদানির মতো প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে টিকতে পারবেন না। রিপাবলিকানরাও তাঁকে ‘চরম বামপন্থার মুখ’ হিসেবে তুলে ধরছে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্ক সিটিতে তিনি স্পষ্ট বিজয়ী। কুওমোর মতো প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিককে পরাজিত করে মামদানি কার্যত দলীয় অভ্যন্তরীণ প্রভাবশালী গোষ্ঠীর আধিপত্য ভেঙেছেন—যাদের অনেকেই সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন বলে সমালোচিত ছিলেন।
এই কারণে মামদানির প্রচারণা জাতীয় পর্যায়েও ব্যাপক মিডিয়া মনোযোগ কেড়েছে। ফলে এখন তাঁর প্রতিটি সাফল্য ও ব্যর্থতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষিত হবে।
বারো বছর আগে ডেমোক্র্যাট বিল ডি ব্লাসিও নিউইয়র্কে সামাজিক বৈষম্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর প্রতি প্রগতিশীল আমেরিকানদেরও তেমনই আশা ছিল। কিন্তু আট বছর পর তিনি সীমিত ক্ষমতা ও রাজনৈতিক জটিলতার কারণে জনপ্রিয়তা হারিয়ে অফিস ছাড়েন। মামদানিকেও একই ধরনের সীমাবদ্ধতা ও প্রত্যাশার মুখোমুখি হতে হবে।
অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হোকুল ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, মামদানির উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কর বাড়ানোর প্রস্তাব তিনি সমর্থন করবেন না। এমনকি অর্থায়ন নিশ্চিত হলেও, মামদানি এককভাবে এসব প্রকল্প চালু করতে পারবেন না।
তিনি প্রচারণায় নিউইয়র্কের কর্পোরেট ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু কার্যকরভাবে শাসন করতে হলে তাঁদের সঙ্গে কোনো না কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে—যা তিনি ইতিমধ্যে শুরু করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে মামদানি ঘোষণা দিয়েছেন—প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে পা রাখলে তাঁকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হবে। এই প্রতিশ্রুতি তাঁর মেয়াদকালে বড় পরীক্ষা হতে পারে।
তবে এসব চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতের বিষয়। আপাতত তাঁর সামনে প্রধান কাজ হলো—নিজেকে জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা, যাতে প্রতিপক্ষরা আগে থেকেই তাঁকে সংজ্ঞায়িত করতে না পারে। যদিও তাঁর প্রচারণা জাতীয় মনোযোগ কেড়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নাগরিকের কাছেই মামদানি এখনো এক অজানা নাম।
সিবিএস-এর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন ‘একেবারেই ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেননি।’ এই তথ্য মামদানি ও আমেরিকার বাম রাজনীতির জন্য একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ।
রক্ষণশীলরা—প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ—মামদানিকে ‘বিপজ্জনক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবে। তারা বলবে, তাঁর নীতি ও কর্মসূচি আমেরিকার বৃহত্তম শহরকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিতে পারে এবং জাতীয় পর্যায়ে তা অনুসরণ করা হলে দেশও ঝুঁকির মুখে পড়বে। মামদানির সামান্য ভুল বা নেতিবাচক অর্থনৈতিক সূচক তারা বড় করে প্রচার করবে। অপরাধের হার সামান্য বাড়লেও সেটিকে তাঁকে আক্রমণের হাতিয়ার বানাবে।
ট্রাম্প, যার সঙ্গে নিউইয়র্কের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সম্পর্ক গভীর, নিশ্চয়ই মামদানির সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাতে আগ্রহী হবেন। তাঁর হাতে এমন বহু উপায় রয়েছে যা নতুন মেয়রের কাজকে জটিল করে তুলতে পারে।
একই সময়ে মামদানিকে দলে নিজের অবস্থানও শক্ত করতে হবে। বিশেষত নিউইয়র্কের সিনেটর ও সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারের মতো প্রভাবশালী নেতাদের আস্থা অর্জন করা তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ—যারা তাঁর প্রচারণায় সরাসরি সমর্থন দেননি।
তবে মামদানির জন্য বড় সুযোগ হলো—তিনি অতীতের রাজনৈতিক বোঝা বহন করেন না। প্রচারণার সময় প্রতিপক্ষরা তাঁর ব্যক্তিগত ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তা প্রভাব ফেলেনি। জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার পর তাঁর সামনে থাকবে নিজের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নতুনভাবে গড়ার সুযোগ। ট্রাম্প যদি তাঁর সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়ান, তবে তা মামদানিকে আরও বড় জনমঞ্চ ও জাতীয় পরিচিতি এনে দিতে পারে।
রাজনীতিতে এ পর্যন্ত তাঁর সাফল্য কোনো তুচ্ছ বিষয় নয়, তবে সামনের বছরগুলোতে তাঁকে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।
নিউইয়র্কবাসীরা মনে করেন তাঁদের শহরই বিশ্বের কেন্দ্র, কিন্তু মঙ্গলবারের নির্বাচনে শুধু এখানেই ভোট হয়নি। ওইদিন নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়াতেও গভর্নর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুটি রাজ্যই গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কমলা হ্যারিস অল্প ব্যবধানে জিতেছিলেন। এবার উভয় রাজ্যেই ডেমোক্র্যাটরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে বিজয় অর্জন করে।
এর মধ্যে নিউ জার্সির প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি ছিল। তবে ফলাফল দেখায়, গত বছর ট্রাম্প যে শ্রমজীবী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের কিছুটা আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন, এবার তাঁর অনুপস্থিতিতে সেই প্রভাব টেকেনি।
মামদানির বিপরীতে, নিউ জার্সির মিকি শেরিল ও ভার্জিনিয়ার অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার ছিলেন দলীয় প্রতিষ্ঠানের সমর্থিত মধ্যপন্থী প্রার্থী। তাঁদের নীতিও ছিল তুলনামূলকভাবে বাস্তববাদী। তবু তিনজনই জীবন-যাপনের ব্যয়, সাশ্রয়ী আবাসন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রধান ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছেন। এক্সিট পোল দেখায়, অর্থনীতি এখনো ভোটারদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়।
বাম ও মধ্যপন্থী—দুই ধারার ডেমোক্র্যাটই এবার জয়ী হওয়ায় ভবিষ্যতের নির্বাচনে কোন ধরনের নীতি বা প্রার্থী সফল হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসা কঠিন।
তবে গত সপ্তাহে মামদানি বলেছিলেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে নানা মতের জন্য জায়গা থাকা জরুরি। তাঁর ভাষায়, ‘এই দলটি এমন হতে হবে যাতে সাধারণ আমেরিকানরা নিজেদের প্রতিফলন দেখতে পায়, কেবলমাত্র কিছু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকের প্রতিচ্ছবি নয়। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে রাখে একটাই বিষয়—আমরা কাদের জন্য লড়ছি, আর তা হলো শ্রমজীবী মানুষ।’
আগামী বছর কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে সেই দৃষ্টিভঙ্গিই পরীক্ষায় পড়বে। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ভিন্নমত ও পুরোনো বিভাজন আবারও সামনে আসতে পারে।
(বিবিসির উত্তর আমেরিকা করসপনডেন্ট এনথনি জুরখারের প্রতিবেদন থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ)

নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি নানা দিক থেকে অনন্য। তিনি হবেন ১৮৯২ সালের পর শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র, প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া প্রথম ব্যক্তি যিনি এই পদে আসীন হবেন।
গত বছর তিনি প্রায় অচেনা এক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামেন। তাঁর প্রচারণায় তহবিল ছিল সীমিত, আর দলের প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনও তেমন পাননি। তবুও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে তাঁর জয় এক বিস্ময়কর ঘটনা।
মামদানি এমন এক প্রজন্মের প্রতিনিধি, যাকে ডেমোক্র্যাট দলের প্রগতিশীল অংশ বহুদিন ধরে খুঁজছিল। তিনি তরুণ, আকর্ষণীয় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দক্ষ। তাঁর জাতিগত পরিচয় দলটির বৈচিত্র্যময় ভিত্তির প্রতিফলন। তিনি রাজনৈতিক বিতর্ক এড়িয়ে যাননি; বরং গর্বের সঙ্গে বামপন্থী নীতি যেমন বিনামূল্যে শিশুসেবা, গণপরিবহন সম্প্রসারণ ও বাজার ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
তবে একই সঙ্গে তিনি শ্রমজীবী ভোটারদের আর্থিক উদ্বেগকেও গুরুত্ব দিয়েছেন—যে শ্রেণি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেমোক্র্যাটদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি সাংস্কৃতিক ইস্যুতে দলের প্রগতিশীল নীতির প্রতি অনুগত থেকেছেন।
সমালোচকেরা বলছেন, মামদানির মতো প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে টিকতে পারবেন না। রিপাবলিকানরাও তাঁকে ‘চরম বামপন্থার মুখ’ হিসেবে তুলে ধরছে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্ক সিটিতে তিনি স্পষ্ট বিজয়ী। কুওমোর মতো প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিককে পরাজিত করে মামদানি কার্যত দলীয় অভ্যন্তরীণ প্রভাবশালী গোষ্ঠীর আধিপত্য ভেঙেছেন—যাদের অনেকেই সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন বলে সমালোচিত ছিলেন।
এই কারণে মামদানির প্রচারণা জাতীয় পর্যায়েও ব্যাপক মিডিয়া মনোযোগ কেড়েছে। ফলে এখন তাঁর প্রতিটি সাফল্য ও ব্যর্থতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষিত হবে।
বারো বছর আগে ডেমোক্র্যাট বিল ডি ব্লাসিও নিউইয়র্কে সামাজিক বৈষম্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর প্রতি প্রগতিশীল আমেরিকানদেরও তেমনই আশা ছিল। কিন্তু আট বছর পর তিনি সীমিত ক্ষমতা ও রাজনৈতিক জটিলতার কারণে জনপ্রিয়তা হারিয়ে অফিস ছাড়েন। মামদানিকেও একই ধরনের সীমাবদ্ধতা ও প্রত্যাশার মুখোমুখি হতে হবে।
অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হোকুল ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, মামদানির উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কর বাড়ানোর প্রস্তাব তিনি সমর্থন করবেন না। এমনকি অর্থায়ন নিশ্চিত হলেও, মামদানি এককভাবে এসব প্রকল্প চালু করতে পারবেন না।
তিনি প্রচারণায় নিউইয়র্কের কর্পোরেট ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু কার্যকরভাবে শাসন করতে হলে তাঁদের সঙ্গে কোনো না কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে—যা তিনি ইতিমধ্যে শুরু করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে মামদানি ঘোষণা দিয়েছেন—প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে পা রাখলে তাঁকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হবে। এই প্রতিশ্রুতি তাঁর মেয়াদকালে বড় পরীক্ষা হতে পারে।
তবে এসব চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতের বিষয়। আপাতত তাঁর সামনে প্রধান কাজ হলো—নিজেকে জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা, যাতে প্রতিপক্ষরা আগে থেকেই তাঁকে সংজ্ঞায়িত করতে না পারে। যদিও তাঁর প্রচারণা জাতীয় মনোযোগ কেড়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নাগরিকের কাছেই মামদানি এখনো এক অজানা নাম।
সিবিএস-এর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন ‘একেবারেই ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেননি।’ এই তথ্য মামদানি ও আমেরিকার বাম রাজনীতির জন্য একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ।
রক্ষণশীলরা—প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ—মামদানিকে ‘বিপজ্জনক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবে। তারা বলবে, তাঁর নীতি ও কর্মসূচি আমেরিকার বৃহত্তম শহরকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিতে পারে এবং জাতীয় পর্যায়ে তা অনুসরণ করা হলে দেশও ঝুঁকির মুখে পড়বে। মামদানির সামান্য ভুল বা নেতিবাচক অর্থনৈতিক সূচক তারা বড় করে প্রচার করবে। অপরাধের হার সামান্য বাড়লেও সেটিকে তাঁকে আক্রমণের হাতিয়ার বানাবে।
ট্রাম্প, যার সঙ্গে নিউইয়র্কের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সম্পর্ক গভীর, নিশ্চয়ই মামদানির সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাতে আগ্রহী হবেন। তাঁর হাতে এমন বহু উপায় রয়েছে যা নতুন মেয়রের কাজকে জটিল করে তুলতে পারে।
একই সময়ে মামদানিকে দলে নিজের অবস্থানও শক্ত করতে হবে। বিশেষত নিউইয়র্কের সিনেটর ও সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারের মতো প্রভাবশালী নেতাদের আস্থা অর্জন করা তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ—যারা তাঁর প্রচারণায় সরাসরি সমর্থন দেননি।
তবে মামদানির জন্য বড় সুযোগ হলো—তিনি অতীতের রাজনৈতিক বোঝা বহন করেন না। প্রচারণার সময় প্রতিপক্ষরা তাঁর ব্যক্তিগত ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তা প্রভাব ফেলেনি। জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার পর তাঁর সামনে থাকবে নিজের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নতুনভাবে গড়ার সুযোগ। ট্রাম্প যদি তাঁর সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়ান, তবে তা মামদানিকে আরও বড় জনমঞ্চ ও জাতীয় পরিচিতি এনে দিতে পারে।
রাজনীতিতে এ পর্যন্ত তাঁর সাফল্য কোনো তুচ্ছ বিষয় নয়, তবে সামনের বছরগুলোতে তাঁকে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।
নিউইয়র্কবাসীরা মনে করেন তাঁদের শহরই বিশ্বের কেন্দ্র, কিন্তু মঙ্গলবারের নির্বাচনে শুধু এখানেই ভোট হয়নি। ওইদিন নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়াতেও গভর্নর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুটি রাজ্যই গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কমলা হ্যারিস অল্প ব্যবধানে জিতেছিলেন। এবার উভয় রাজ্যেই ডেমোক্র্যাটরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে বিজয় অর্জন করে।
এর মধ্যে নিউ জার্সির প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি ছিল। তবে ফলাফল দেখায়, গত বছর ট্রাম্প যে শ্রমজীবী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের কিছুটা আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন, এবার তাঁর অনুপস্থিতিতে সেই প্রভাব টেকেনি।
মামদানির বিপরীতে, নিউ জার্সির মিকি শেরিল ও ভার্জিনিয়ার অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার ছিলেন দলীয় প্রতিষ্ঠানের সমর্থিত মধ্যপন্থী প্রার্থী। তাঁদের নীতিও ছিল তুলনামূলকভাবে বাস্তববাদী। তবু তিনজনই জীবন-যাপনের ব্যয়, সাশ্রয়ী আবাসন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রধান ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছেন। এক্সিট পোল দেখায়, অর্থনীতি এখনো ভোটারদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়।
বাম ও মধ্যপন্থী—দুই ধারার ডেমোক্র্যাটই এবার জয়ী হওয়ায় ভবিষ্যতের নির্বাচনে কোন ধরনের নীতি বা প্রার্থী সফল হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসা কঠিন।
তবে গত সপ্তাহে মামদানি বলেছিলেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে নানা মতের জন্য জায়গা থাকা জরুরি। তাঁর ভাষায়, ‘এই দলটি এমন হতে হবে যাতে সাধারণ আমেরিকানরা নিজেদের প্রতিফলন দেখতে পায়, কেবলমাত্র কিছু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকের প্রতিচ্ছবি নয়। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে রাখে একটাই বিষয়—আমরা কাদের জন্য লড়ছি, আর তা হলো শ্রমজীবী মানুষ।’
আগামী বছর কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে সেই দৃষ্টিভঙ্গিই পরীক্ষায় পড়বে। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ভিন্নমত ও পুরোনো বিভাজন আবারও সামনে আসতে পারে।
(বিবিসির উত্তর আমেরিকা করসপনডেন্ট এনথনি জুরখারের প্রতিবেদন থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ)

জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের পর ওই এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
পর্যটকদের কাছে হিমালয় এবং কাঠমাণ্ডু আকর্ষণীয় স্থানের শীর্ষে। কিন্তু বন্যপ্রাণীতে ভরপুর, জাতীয় পার্ক এবং দৃষ্টিনন্দন অতিথিশালাসমৃদ্ধ নেপালের তেরাই নিম্নাঞ্চল সম্পর্কে পর্যটকরা খুব একটা জানে না।
৯ ঘণ্টা আগে
গত জানুয়ারিতে চীন জানায় যে তাদের পণ্য ও সেবাখাতে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে—যা বিশ্বে কোনো দেশের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। কিন্তু ২০২৫ সালের প্রথম ১১ মাসে চীন সেই সীমাও অতিক্রম করেছে। সোমবার প্রকাশিত কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর পর্যন্ত চীনের মোট বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮
১০ ঘণ্টা আগে
সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের পতনের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। গত বছর এই দিনে বাশার আল-আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধেরও সমাপ্তি ঘটে। আহমদ আল-শারা (সাবেক আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি) নেতৃত্বাধীন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) অন্তর্বর্তী সরকার এখন দেশ পরিচালনা করছে।
১৩ ঘণ্টা আগে