leadT1ad

পশ্চিম তীরে দখলদারত্ব ও সহিংসতা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

গত ২৯শে অক্টোবর পশ্চিম তীরের সিলওয়াদে জলপাই ফসল কাটার সময় এক ফিলিস্তিনি কৃষকের (ছবিতে নেই) সাথে তর্ক করছেন এক ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী। ছবি: রয়টার্স।

গাজার মতো পশ্চিম তীর থেকেও ইসরায়েলিরা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনিদের নিজ ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করছে। গত সপ্তাহে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, এ বছর মাত্র তিনটি শরণার্থী শিবির থেকেই ৩২ হাজার ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া জেনিন, নুর শামস ও তুলকারেম শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি অভিযানে ১৯৬৭ সালের পর পশ্চিম তীরে সবচেয়ে বড় গণউচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।

একই সময়ে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সহিংসতা দ্রুত বাড়ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় গণহত্যামূলক হামলা শুরুর পর পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অবৈধ বসতিতে থাকা ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনিদের ওপর আরও ঘনঘন ও সহিংস আক্রমণ চালাচ্ছে।

পশ্চিম তীরের এরিয়া সি-তে ফিলিস্তিনি প্রশাসনের কোনো কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নেই। জাতিসংঘ নভেম্বরের শুরুতে জানায়, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সেখানে বাড়িঘর ধ্বংস করে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করেছে। দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমেও আরও ৫০০ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। ইসরায়েল বাড়িঘর ভাঙার কারণ হিসেবে অনুমতিপত্রের অভাব দেখালেও এসব এলাকায় ফিলিস্তিনিদের জন্য অনুমতি পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

এসব কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েল এখনো তেমন কোনো জবাবদিহিতার মুখোমুখি হয়নি। অথচ মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলি সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছে। বিশেষ করে শরণার্থী শিবিরে অভিযানের সময় বেসামরিক মানুষকে জোরপূর্বক উৎখাতের অভিযোগ উঠেছে।

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বিটসেলেমের নির্বাহী পরিচালক ইউলি নোভাক বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনি জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীনতা দেখছি। পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। কোনো অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। তাই জাতিগত নিধনের এই নীতি চলতেই থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ইসরায়েলের দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে।’

ইসরায়েলের লক্ষ্য কী

ইসরায়েলের অনেক সিনিয়র সরকারি নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, লক্ষ্য হলো পুরো পশ্চিম তীর দখল করে নেওয়া। গত অক্টোবরে ইসরায়েলের সংসদ একটি প্রস্তাবের প্রাথমিক অনুমোদন দেয়, যেখানে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব সম্প্রসারণের কথা বলা হয়। এটি আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইসরায়েলের কঠোরপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ—যিনি নিজেই অবৈধ এক বসতিতে থাকেন—পশ্চিম তীর নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি তার দল রিলিজিয়াস জায়নিজম–এর এক সভায় বলেন, তিনি ‘মাঠে বাস্তবতা তৈরি করে জুদিয়া-সামারিয়াকে (পশ্চিম তীর) ইসরায়েলের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানাতে চান।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রথমে মাঠে, পরে আইনি প্রক্রিয়ায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করব। আমি অবৈধ আউটপোস্টগুলোকে বৈধ ঘোষণা করতে চাই।’ স্মোত্রিচের ভাষায়, তার ‘জীবনের মিশন’ হলো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা থামিয়ে দেওয়া।

বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে সাত লাখের বেশি ইসরায়েলি অবৈধ বসতিতে বসবাস করছে। চলতি বছরের আগস্টে স্মোত্রিচ ‘ই-১’ নামে নতুন একটি বসতি প্রকল্প ঘোষণা করেন। এতে প্রায় তিন হাজার বাড়ি তৈরি হবে, যা দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। স্মোত্রিচের দাবি, এ প্রকল্প ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণাকে ‘চিরতরে সমাধিস্থ করবে।’

ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীদের সহিংসতা

পশ্চিম তীরে অবৈধভাবে বসবাসকারী ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীদের সহিংসতা ক্রমাগত বাড়ছে। এর পেছনে একটি কারণ হলো—ইসরায়েলি সরকারের শীর্ষস্থানীয় পদে বর্তমানে বহু কট্টরপন্থী রয়েছেন।

অক্টোবরে ওসিএইচএ জানায় যে সে মাসে ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীদের আক্রমণের সংখ্যা ২৬০ ছাড়িয়েছে। গড়ে প্রতিদিন আটটি ঘটনা ঘটেছে, যা ২০০৬ সালে তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর সর্বোচ্চ। জলপাই সংগ্রহের মৌসুমে এসব সহিংসতা আরও বেড়েছে। অনেক ঘটনায় ইসরায়েলি সেনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হামলা দেখেছে।

ফিলিস্তিনি কৃষক ইউনিয়ন জানিয়েছে, এসব হামলা গ্রামীণ ফিলিস্তিনিদের জীবিকা ধ্বংসের পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। ফিলিস্তিনিদের মতে, ইহুদি বসতিস্থাপনকারীদের লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনিদের জীবনকে এতটাই অসহনীয় করে তোলা যেন তারা একসময় এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত