আজ অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন
আবদুল্লাহ এম আবু শাওয়েশ

১৯৪৮ সালের আল-নাকবার পর শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেওয়া এবং বড় হওয়া লাখ লাখ ফিলিস্তিনির মতো, আমার জীবনের কাহিনীতেও সংগ্রাম আর টিকে থাকার কয়েকটি অধ্যায় আছে। আমাদের প্রজন্ম একভাবে সৌভাগ্যবান ছিল। ফিলিস্তিনের সেই হারানো গ্রামগুলোতে যারা থাকত, তাদের গল্প শুনে বড় হয়েছি আমরা। তারা নিজের গ্রামের প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পাথর, প্রতিটি রাস্তাকে জানত। বিশ্বাস করত একদিন তারা ঘরে ফিরে আসবে। আমরা তাদের স্মৃতি, তাদের গল্প, এবং অন্যায়ের সেই গভীর অনুভূতিও উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছি।
আমরা বড় হয়েছি একটা বিশ্বাস নিয়ে। একদিন কোনো একজন বীর আসবে। সেই বীর আমাদের বাঁচাবে, মুক্ত করবে। ইয়াসির আরাফাত অবশ্যই আমাদের জন্য আইকনিক বীর ছিলেন। কিন্তু আমরা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম বিশ্ববিখ্যাত নেতাদের কাছ থেকেও — যেমন জওহরলাল নেহরু, চে গেভারা, প্যাট্রিস লুমুম্বা, আর অমিতাভ বচ্চন।
আমাদের প্রজন্মের কাছে অমিতাভ ছিলেন বীর, আইকনিক, চরম আকর্ষণীয় মানুষ। চলচ্চিত্রে তিনি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন। মাকে রক্ষা করতেন, পরিবারের অপমানের প্রতিশোধ নিতেন, দুর্নীতিপ্রবণ পুলিশকে মোকাবিলা করতেন, গরিবদের পাশে দাঁড়াতেন। প্রেম, আশা ও ভবিষ্যতের জন্য নাচতেন, গাইতেন। তিনি ছিলেন কখনো অনাথ ছেলে, এক মহৎ যোদ্ধা, অত্যাচারকে চ্যালেঞ্জ করা বিদ্রোহী, ছিলেন প্রেমের বিশুদ্ধ প্রতীক। তিনি আমাদের জন্য কথা বলতেন, আর আমরা স্বপ্ন দেখতাম, একদিন আমরা ওর মতো হব।
অমিতাভ দেখিয়েছিলেন শুভের জয়, ন্যায়বিচার সম্ভব। তিনি আমাদের পরিবারের মধ্যে মূল্যবোধ, ত্যাগ, সাহস এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ঢুকিয়ে দিতেন। সবকিছু মাত্র কয়েক ঘণ্টার সিনেমার মধ্য দিয়ে। সিনেমা শেষ হলে আমরা আবার ফিরে আসতাম ইসরায়েলি দখলের কঠোর বাস্তবতায়। তবে সেই সিনেমা দেখার কয়েক মুহূর্ত আমাদের সান্ত্বনা দিত, নির্বাসন, বাস্তুচ্যুতি এবং শরণার্থী শিবিরের জীবন কিছুটা সহজ করত।
অমিতাভের গল্পে আমরা নিজেদেরই দেখতে পেতাম। আমাদের মা-বাবা, দাদা-দাদী লাথি খেয়েছে, অপমানিত হয়েছে, মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছে। অমিতাভ যখন মায়ের প্রতি হওয়া অপমানের প্রতিশোধ নিতেন, আমরা অনুভব করতাম যেন তিনি আমাদের মায়ের হয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তিনি আমাদের গভীর যন্ত্রণায় এক স্বপ্নের মতো সান্ত্বনা। আর যখন তিনি দুর্বলের ওপর অত্যাচারী নেতার সঙ্গে লড়াই করতেনআমাদের পুরো সিনেমাহল গর্জন করে উঠত। আমরা হাত ব্যাথা হওয়া পর্যন্ত তালি দিতাম, গলা না ভাঙা পর্যন্ত হুইসেল দিতাম। এসে গেছে উদ্ধারকর্তা।
আমাদের চারপাশে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার ছিল সর্বত্র। লাল টি-শার্টের এংরি ইয়াংম্যান অমিতাভের ছবি। গাজার কিশোরদের ঘরে ঘরে কোন না কোন রকম পোস্টার থাকত। আর অমিতাভের চুলের মাঝখানে ভাগ করা ঢেউ সবাই নকল করত। কিন্তু অমিতাভ শুধু স্টাইল আইকন ছিলেন না। তিনি আমাদের দেশপ্রেমের অংশ হয়ে উঠেছিলেন।
ইসরায়েলি সৈন্যরা আমাদের দেখে চিৎকার করত। তারা কিশোরদের মারতে মারতে বলত, ‘অমিতাভ বচ্চন হওয়ার চেষ্টা করো?’ তারা ঘরে ঢুকে আমাদের দেওয়াল থেকে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলত। যেন অমিতাভের সিনেমা দেখাও একটা প্রতিরোধ। অমিতাভের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাই খুব গভীর। তবুও আমরা পোস্টারগুলো রেখেছি, মাঝখানে সিথি করে চুল আঁচড়েছি। তাঁর সিনেমার মাধ্যমে স্বপ্ন দেখেছি। কারণ তিনি আমাদের কাছে শুধু অভিনেতা নন, তিনি প্রমাণ যে শরণার্থী শিবিরেও, অন্যায়ের মাঝখানেও, আমরা নিজেদের বীর হিসেবে কল্পনা করতে পারি।
কয়েক মাস আগে, যখন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আমাকে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করলেন, গাজার বন্ধুরা মেসেজ করল, ‘তাহলে, তুমি যাচ্ছো অমিতাভ বচ্চনের দেশে!’ আমাদের প্রজন্ম ভ্রমণের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা বাস করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোলা জেলের মধ্যে।
সময় গেছে। আমার জীবন আমাকে গাজার সিনেমা হল থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। আমি আর আগের মতো সিনেমা দেখি না। আমাদের প্রজন্মকে যুদ্ধ বিনোদনের স্বপ্ন দেখার সময়ও দেয়নি। সিনেমার পর্দা এখন দূরের মনে হয়। তবুও আমরা এখনও বিশ্বাস করি।
অমর আকবর অ্যান্থনি এবং কালিয়া—এখনো আমাদের মধ্যে অমিতাভকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই সিনেমাগুলো সেই স্বপ্নকে ধারণ করেছিল যা আমরা একসময় দেখতাম। সেই স্বপ্নকে আমরা এখনও মূল্য দিই। আমরা বিশ্বাস করি যে ফিলিস্তিনের বোমায় বিধ্বস্ত ছাই হওয়া মাটি থেকে দেশপ্রেমিক এবং বীর মানুষ উঠে আসতে পারে। অমিতাভের গল্প এইভাবে ফিলিস্তিনেরও গল্প।
লেখক: ভারতে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত,
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ

১৯৪৮ সালের আল-নাকবার পর শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেওয়া এবং বড় হওয়া লাখ লাখ ফিলিস্তিনির মতো, আমার জীবনের কাহিনীতেও সংগ্রাম আর টিকে থাকার কয়েকটি অধ্যায় আছে। আমাদের প্রজন্ম একভাবে সৌভাগ্যবান ছিল। ফিলিস্তিনের সেই হারানো গ্রামগুলোতে যারা থাকত, তাদের গল্প শুনে বড় হয়েছি আমরা। তারা নিজের গ্রামের প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পাথর, প্রতিটি রাস্তাকে জানত। বিশ্বাস করত একদিন তারা ঘরে ফিরে আসবে। আমরা তাদের স্মৃতি, তাদের গল্প, এবং অন্যায়ের সেই গভীর অনুভূতিও উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছি।
আমরা বড় হয়েছি একটা বিশ্বাস নিয়ে। একদিন কোনো একজন বীর আসবে। সেই বীর আমাদের বাঁচাবে, মুক্ত করবে। ইয়াসির আরাফাত অবশ্যই আমাদের জন্য আইকনিক বীর ছিলেন। কিন্তু আমরা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম বিশ্ববিখ্যাত নেতাদের কাছ থেকেও — যেমন জওহরলাল নেহরু, চে গেভারা, প্যাট্রিস লুমুম্বা, আর অমিতাভ বচ্চন।
আমাদের প্রজন্মের কাছে অমিতাভ ছিলেন বীর, আইকনিক, চরম আকর্ষণীয় মানুষ। চলচ্চিত্রে তিনি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন। মাকে রক্ষা করতেন, পরিবারের অপমানের প্রতিশোধ নিতেন, দুর্নীতিপ্রবণ পুলিশকে মোকাবিলা করতেন, গরিবদের পাশে দাঁড়াতেন। প্রেম, আশা ও ভবিষ্যতের জন্য নাচতেন, গাইতেন। তিনি ছিলেন কখনো অনাথ ছেলে, এক মহৎ যোদ্ধা, অত্যাচারকে চ্যালেঞ্জ করা বিদ্রোহী, ছিলেন প্রেমের বিশুদ্ধ প্রতীক। তিনি আমাদের জন্য কথা বলতেন, আর আমরা স্বপ্ন দেখতাম, একদিন আমরা ওর মতো হব।
অমিতাভ দেখিয়েছিলেন শুভের জয়, ন্যায়বিচার সম্ভব। তিনি আমাদের পরিবারের মধ্যে মূল্যবোধ, ত্যাগ, সাহস এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ঢুকিয়ে দিতেন। সবকিছু মাত্র কয়েক ঘণ্টার সিনেমার মধ্য দিয়ে। সিনেমা শেষ হলে আমরা আবার ফিরে আসতাম ইসরায়েলি দখলের কঠোর বাস্তবতায়। তবে সেই সিনেমা দেখার কয়েক মুহূর্ত আমাদের সান্ত্বনা দিত, নির্বাসন, বাস্তুচ্যুতি এবং শরণার্থী শিবিরের জীবন কিছুটা সহজ করত।
অমিতাভের গল্পে আমরা নিজেদেরই দেখতে পেতাম। আমাদের মা-বাবা, দাদা-দাদী লাথি খেয়েছে, অপমানিত হয়েছে, মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছে। অমিতাভ যখন মায়ের প্রতি হওয়া অপমানের প্রতিশোধ নিতেন, আমরা অনুভব করতাম যেন তিনি আমাদের মায়ের হয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তিনি আমাদের গভীর যন্ত্রণায় এক স্বপ্নের মতো সান্ত্বনা। আর যখন তিনি দুর্বলের ওপর অত্যাচারী নেতার সঙ্গে লড়াই করতেনআমাদের পুরো সিনেমাহল গর্জন করে উঠত। আমরা হাত ব্যাথা হওয়া পর্যন্ত তালি দিতাম, গলা না ভাঙা পর্যন্ত হুইসেল দিতাম। এসে গেছে উদ্ধারকর্তা।
আমাদের চারপাশে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার ছিল সর্বত্র। লাল টি-শার্টের এংরি ইয়াংম্যান অমিতাভের ছবি। গাজার কিশোরদের ঘরে ঘরে কোন না কোন রকম পোস্টার থাকত। আর অমিতাভের চুলের মাঝখানে ভাগ করা ঢেউ সবাই নকল করত। কিন্তু অমিতাভ শুধু স্টাইল আইকন ছিলেন না। তিনি আমাদের দেশপ্রেমের অংশ হয়ে উঠেছিলেন।
ইসরায়েলি সৈন্যরা আমাদের দেখে চিৎকার করত। তারা কিশোরদের মারতে মারতে বলত, ‘অমিতাভ বচ্চন হওয়ার চেষ্টা করো?’ তারা ঘরে ঢুকে আমাদের দেওয়াল থেকে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলত। যেন অমিতাভের সিনেমা দেখাও একটা প্রতিরোধ। অমিতাভের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাই খুব গভীর। তবুও আমরা পোস্টারগুলো রেখেছি, মাঝখানে সিথি করে চুল আঁচড়েছি। তাঁর সিনেমার মাধ্যমে স্বপ্ন দেখেছি। কারণ তিনি আমাদের কাছে শুধু অভিনেতা নন, তিনি প্রমাণ যে শরণার্থী শিবিরেও, অন্যায়ের মাঝখানেও, আমরা নিজেদের বীর হিসেবে কল্পনা করতে পারি।
কয়েক মাস আগে, যখন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আমাকে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করলেন, গাজার বন্ধুরা মেসেজ করল, ‘তাহলে, তুমি যাচ্ছো অমিতাভ বচ্চনের দেশে!’ আমাদের প্রজন্ম ভ্রমণের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা বাস করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোলা জেলের মধ্যে।
সময় গেছে। আমার জীবন আমাকে গাজার সিনেমা হল থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। আমি আর আগের মতো সিনেমা দেখি না। আমাদের প্রজন্মকে যুদ্ধ বিনোদনের স্বপ্ন দেখার সময়ও দেয়নি। সিনেমার পর্দা এখন দূরের মনে হয়। তবুও আমরা এখনও বিশ্বাস করি।
অমর আকবর অ্যান্থনি এবং কালিয়া—এখনো আমাদের মধ্যে অমিতাভকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই সিনেমাগুলো সেই স্বপ্নকে ধারণ করেছিল যা আমরা একসময় দেখতাম। সেই স্বপ্নকে আমরা এখনও মূল্য দিই। আমরা বিশ্বাস করি যে ফিলিস্তিনের বোমায় বিধ্বস্ত ছাই হওয়া মাটি থেকে দেশপ্রেমিক এবং বীর মানুষ উঠে আসতে পারে। অমিতাভের গল্প এইভাবে ফিলিস্তিনেরও গল্প।
লেখক: ভারতে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত,
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ

জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের পর ওই এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
পর্যটকদের কাছে হিমালয় এবং কাঠমাণ্ডু আকর্ষণীয় স্থানের শীর্ষে। কিন্তু বন্যপ্রাণীতে ভরপুর, জাতীয় পার্ক এবং দৃষ্টিনন্দন অতিথিশালাসমৃদ্ধ নেপালের তেরাই নিম্নাঞ্চল সম্পর্কে পর্যটকরা খুব একটা জানে না।
৯ ঘণ্টা আগে
গত জানুয়ারিতে চীন জানায় যে তাদের পণ্য ও সেবাখাতে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে—যা বিশ্বে কোনো দেশের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। কিন্তু ২০২৫ সালের প্রথম ১১ মাসে চীন সেই সীমাও অতিক্রম করেছে। সোমবার প্রকাশিত কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর পর্যন্ত চীনের মোট বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮
১০ ঘণ্টা আগে
সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের পতনের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। গত বছর এই দিনে বাশার আল-আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধেরও সমাপ্তি ঘটে। আহমদ আল-শারা (সাবেক আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি) নেতৃত্বাধীন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) অন্তর্বর্তী সরকার এখন দেশ পরিচালনা করছে।
১৩ ঘণ্টা আগে