leadT1ad

পেরির প্রেমে মত্ত ট্রুডোর টান প্রাক্তনে

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোডকৃত কেটি পেরি ও জাস্টিন স্ট্রুডোর ছবি। সংগৃহীত ছবি

কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও মার্কিন পপ তারকা কেটি পেরির প্রেমের গুঞ্জন অবশেষে বাস্তবে রূপ পেল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে এই সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছেন কেটি পেরি নিজেই। তবে এই নতুন সম্পর্কের আলোচনার মধ্যেই ফিরে আসছে ট্রুডোর ১৮ বছরের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ এবং তাঁর সাবেক স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ারের প্রসঙ্গ।

ইনস্টাগ্রামে ট্রুডোর সঙ্গে ছবি পোস্ট পেরির

সম্প্রতি ট্রুডো ও পেরি জাপান ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেই ভ্রমণের যৌথ ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন পেরি। এর মধ্যে একটি ছবিতে দুজনকে বেশ ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গেছে; গালে গাল ঠেকিয়ে সেলফি তুলেছেন তাঁরা।

পোস্ট করা অন্য একটি ভিডিওতে এই জুটিকে একসঙ্গে খাবার খেতে ও সময় কাটাতে দেখা যায়। ক্যাপশনে কেটি পেরি লিখেছেন, ‘টোকিও টাইমস অন ট্যুর অ্যান্ড মোর’।

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং তাঁর স্ত্রী ইউকোর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ট্রুডো। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেটি পেরি। এই ঘটনার পরপরই পেরি তাঁর ইনস্টাগ্রামে ছবিগুলো প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক পোস্টে কিশিদাও পেরিকে ট্রুডোর ‘সঙ্গিনী’ (পার্টনার) হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

গত ২৫ অক্টোবর প্যারিসে কেটি পেরির ৪১তম জন্মদিনে এই জুটিকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা যায়। তবে এর আগে জুলাই মাসে কানাডায় কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হলে তাঁদের একসঙ্গে প্রথম দেখা গিয়েছিল।

অবশ্য বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে মন্ট্রিলে সাক্ষাতের পর থেকেই পেরির প্রতি আগ্রহী ছিলেন কানাডার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

প্রাক্তন স্ত্রী সোফির সঙ্গেও রয়েছে বন্ধুত্ব

ট্রুডো ও সোফির সম্পর্কের শুরুটা ছিল অনেকটা সিনেমার মতো। ছোটবেলায় সোফি ছিলেন ট্রুডোর ছোট ভাই মিশেলের সহপাঠী। সেই সুবাদে ট্রুডোর সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এরপর দীর্ঘ সময় যোগাযোগ না থাকলেও ২০০৩ সালে একটি চ্যারিটি অনুষ্ঠানে পুনরায় দেখা হয় তাঁদের। সেই দেখাই প্রেমে রূপ নেয়। ২০০৪ সালে বাগদান এবং পরের বছর ২০০৫ সালের মে মাসে মন্ট্রিলে ধুমধাম করে বিয়ে করেন তাঁরা।

এই দম্পতির ঘরে রয়েছে তিন সন্তান—জেভিয়ার, এলা-গ্রেস ও হ্যাড্রিয়েন। রাজনীতির মাঠে ট্রুডোর উত্থানের সময় সোফি ছিলেন তাঁর অন্যতম বড় শক্তি। ২০১৫ সালে ট্রুডো যখন কানাডার প্রধানমন্ত্রী হন, তখন সোফিও ফার্স্ট লেডি হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করেন। বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য ও নারীদের অধিকার নিয়ে তাঁর কাজ প্রশংসিত হয়।

প্রাক্তন স্ত্রী সোফির সঙ্গে জাস্টিন ট্রুডো। সংগৃহীত ছবি
প্রাক্তন স্ত্রী সোফির সঙ্গে জাস্টিন ট্রুডো। সংগৃহীত ছবি

যে কারণে ভেঙেছিল ১৮ বছরের সম্পর্ক

২০০৫ সালে মন্ট্রিলে ধুমধাম করে বিয়ে করেছিলেন ট্রুডো ও সোফি। তাঁদের প্রেমের শুরুটা ছিল অনেকটা রূপকথার মতো। ২০১৫ সালে ভোগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রুডো বলেছিলেন, ‘আমি ৩১ বছর ধরে তোমার (সোফি) জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’

কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই আবেগে ভাটা পড়ে। বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় তাঁরা জানিয়েছিলেন, এই সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া হয়নি। বরং দুজনের মধ্যে ‘অনেক অর্থবহ ও কঠিন আলাপ-আলোচনার’ পরই তাঁরা আলাদা হওয়ার পথ বেছে নেন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের ব্যস্ততা, ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন এবং দুজনার ভিন্ন পথে হাঁটার আকাঙ্ক্ষা—সব মিলিয়েই এই বিচ্ছেদ ত্বরান্বিত হয় বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

বিচ্ছেদের পরেও অটুট বন্ধুত্ব ট্রুডো-সোফির

২০২৩ সালে বিচ্ছেদের ঘোষণার পর জানা যায়, সোফি সরকারি বাসভবন ‘রিডো কটেজ’ ছেড়ে অটোয়াতেই অন্য একটি বাড়িতে থাকা শুরু করেছেন। তবে সন্তানদের কথা ভেবে ট্রুডো ও সোফি ‘কো-প্যারেন্টিং’ বা যৌথ অভিভাবকত্বের পথ বেছে নিয়েছেন। ছুটির দিনগুলোতে বা পারিবারিক ভ্রমণে তাঁদের এখনো একসঙ্গে দেখা যায়। বিচ্ছেদের পরেও সন্তানদের নিয়ে এক ছাদের নিচে বড়দিনের উৎসব পালন করতেও দেখা গেছে তাঁদের।

বিচ্ছেদের পর সোফি নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘ক্লোজার টুগেদার’-এ তিনি নিজের মানসিক স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যা (ইটিং ডিসঅর্ডার) এবং নিজের সত্তাকে খুঁজে পাওয়ার লড়াইয়ের কথা খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন। এক সাক্ষাৎকারে সোফি বলেছিলেন, ‘আমরা এখন সমান্তরাল পথে হাঁটছি, কিন্তু আমাদের গন্তব্য এক—আমাদের সন্তানদের ভালো রাখা।’

ট্রুডোর পারিবারিক ইতিহাসে বিচ্ছেদের ঘটনা এই প্রথম নয়। কানাডার ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে স্ত্রী বিচ্ছেদের ঘটনা প্রথম ঘটেছিল ট্রুডোর বাবা পিয়েরে ট্রুডোর জীবনে। ১৯৭৭ সালে পিয়েরে ও মার্গারেট ট্রুডোর বিচ্ছেদ হয়েছিল। কাকতালীয়ভাবে, ছেলে জাস্টিন ট্রুডোও বাবার মতোই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন।

ট্রুডোর এই নতুন সম্পর্কের চাকচিক্যের আড়ালে ১৮ বছরের স্মৃতিমাখা অধ্যায়টিও তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েই রইল।

Ad 300x250

সম্পর্কিত