মানিকগঞ্জে দুই শিশুসন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগেও মামলা না নিয়ে পুলিশ ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রবাসে থাকা স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে স্বামী রুবেল মিয়া (৪২) সন্তানদের গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করেন এবং সেই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করে স্ত্রীকে পাঠান বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
গত ৯ নভেম্বর এ ঘটনায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও পুলিশ সেটিকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে ‘পারিবারিক বিষয়’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরই মধ্যে অভিযুক্ত রুবেল পুলিশের উদ্ধার করা এক সন্তানকে পুনরায় ‘অপহরণ’ করলে বিষয়টি পুলিশ সুপার পর্যন্ত গড়িয়েছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সাত বছর আগে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া গ্রামের মুক্তা আক্তারের (২৫) সঙ্গে সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ এলাকার রুবেলের বিয়ে হয়। এটি ছিল মুক্তার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম সংসারে তাঁর আপন (৮) নামে একটি ছেলে রয়েছে এবং রুবেলের সংসারে জন্ম নেয় আলী হোসেন (৬)। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে মুক্তাকে নির্যাতন করতেন রুবেল। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রায় চার মাস আগে মুক্তা বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু এরপরও রুবেলের টাকার জন্য চাপ ও হুমকি অব্যাহত থাকে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৫ নভেম্বর মুক্তা টাকা পাঠাতে অস্বীকৃতি জানালে রুবেল দুই সন্তান আপন ও আলী হোসেনকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করেন। এতে শিশুরা অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং তাদের নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। রুবেল এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে মুক্তার কাছে পাঠিয়ে বার্তা দেন—‘টাকা না দিলে সন্তানদের মেরে ফেলব।’
বিদেশে থাকা মুক্তা বিষয়টি জানালে তাঁর বাবা আব্দুল আহাদ গত ৯ নভেম্বর সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমি থানায় সবকিছু খুলে বলার পর এসআই সিদ্দিকুর রহমান অভিযোগ নিলেও মামলা নেননি। তিনি নানা অজুহাতে বলেন, এটা পারিবারিক ব্যাপার।’
অভিযোগের পর পুলিশ বড় ছেলে আপনকে উদ্ধার করে তার দাদার জিম্মায় দিলেও ছোট ছেলে আলী হোসেনকে উদ্ধার করতে পারেনি। পরিবারের দাবি, রুবেল তাকে অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন।
এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রুবেল পুনরায় ভাড়ারিয়া গ্রামে এসে উদ্ধার হওয়া সন্তান আপনকে ‘অপহরণ’ করে নিয়ে যান। এরপর আব্দুল আহাদ মানিকগঞ্জ সদর থানায় আরেকটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সদর থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি পুলিশ সুপার ইয়াছমিন আক্তারকে জানানো হয়েছে। তাঁর নির্দেশে ভুক্তভোগীকে সিংগাইর থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে, সন্তান হত্যাচেষ্টার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। স্থানীয় আইনজীবীরা বলছেন, এত গুরুতর অভিযোগেও মামলা না নেওয়া পুলিশের দায়িত্বে চরম অবহেলা, যার কারণে আসামি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিংগাইর থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি আপনকে উদ্ধার করে দিয়েছি। আলী হোসেন রুবেলের নিজ সন্তান হওয়ায় তার কাছেই রেখেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘রুবেল জানিয়েছেন, স্ত্রী টাকা না দেওয়ায় ভয় দেখানোর জন্য তিনি এমনটা করেছেন।’
তবে হত্যাচেষ্টার ভিডিও ও অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির পরও কেন মামলা নেওয়া হয়নি—এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই সিদ্দিকুর বলেন, ‘এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। তবে আজ (বৃহস্পতিবার) বাদিকে থানায় ডাকা হয়েছে এবং মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে ও এম তৌফিক আজমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।