leadT1ad

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

অভিভাবক হারানো শোক ফেনীতে

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সংগৃহীত ছবি

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ তাঁর পৈতৃক জেলা ফেনী। এখান থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে অভিভাবক হারানোর বেদনায় ডুকরে কাঁদছে সর্বস্তরের মানুষ।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মানুষকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে। তাঁর পৈতৃক ভিটা জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুরের মজুমদার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সকালে ওই বাড়ি গিয়ে শোকসন্তপ্ত লোকজনের ভিড় দেখা যায়।

কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘পরম শ্রদ্ধেয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদে আমি গভীর শোকাহত ও মর্মাহত। তিনি আজীবন লড়েছেন এই দেশের মানুষের অধিকার আর গণতন্ত্রের জন্য। স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু বা কারাগারের অন্ধকার, কোনোকিছুই তাকে টলাতে পারেনি। তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় হয়ে।’

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সন্তান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি তাবিথ আওয়াল বলেন, ‘আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম শোকাবহ দিন। আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় আপোশহীন দেশনেত্রী, গণতন্ত্রের বাতিঘর বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) কেবল একটি দলের প্রধান ছিলেন না, তিনি ছিলেন কোটি কোটি মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তাঁর ত্যাগ, সাহসিকতা ও অবিচল নেতৃত্ব আমাদের চিরকাল ঋণী করে রেখেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি আজ আমার একজন অভিভাবককে হারালাম।’

ফেনীর সন্তান বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুনিয়ার সফর শেষ করেছেন। কায়মানো বাক্যে মহান রবের দরবারে এই মহীয়সী নেত্রীর জান্নাত কামনা করছি।’

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাউদ্দিন আলাল বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) সঙ্গে রাজনীতি করার সুযোগ এবং তাঁর স্নেহধন্য হওয়া আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলোর একটি।’

ফুলগাজী গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) আলেমদের যথেষ্ট সম্মান করেছেন। তাঁর জন্য মন থেকে দোয়া হবে, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতি মেহমান বানায় নিও। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কুরআন খতম করেছি। আল্লাহ মরহুমাকে মাফ করে জান্নাত দান করেন।’

স্থানীয় বিএনপি কর্মী আসিফ রানা বলেন, ‘বেগম জিয়া আরও আগেই ইহলোক ত্যাগ করতে পারতেন, কিন্তু আল্লাহ সোবহানাল্লাহ তাঁকে জীবিত রেখেছিলেন, যাতে তিনি নিজের জীবদ্দশায় রাজনীতির উত্থান পতন, বিশ্বাসঘাতকতা ও সত্যের পরীক্ষাগুলো নিজ চোখে দেখে যেতে পারেন। এগুলো ইতিহাসের অংশ, আর ইতিহাস দেখারও যোগ্যতা সবাই পায় না।’

বিভিন্ন নথি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম পুতুল। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে তাঁর জন্ম। তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়িতে। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদারের সন্তান তিনি। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমানকে বিয়ের পর থেকে তিনি খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী ছিলেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮৩ সালে বিএনপির নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।

বিগত আওয়ামী শাসনকালে একাধিকবার জেলে থাকতে হয় খালেদা জিয়াকে। সেই সময় থেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। টানা ৩৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

Ad 300x250

সম্পর্কিত