leadT1ad

ডাকাতিতে জড়িত সন্দেহে থানায় নির্যাতন, চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানা ভবন। সংগৃহীত ছবি

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে একটি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ধরে এনে থানায় নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার সময় এই অভিযোগ করেন ওই ডাকাতি মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি ও ভুক্তভোগী মো. খোকন (৩২)। পরে আদালতের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি।

গত শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ফরিদগঞ্জ থানায় এই মামলা করেন মো. খোকন। এতে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা বর্তমানে ফরিদগঞ্জ থানায় কর্মরত রয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এসব তথ্য নিশ্চিত করেন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ফখরুদ্দিন আহমেদ স্বপন।

এর আগে ২৮ নভেম্বর করা একটি চাঞ্চল্যকর ডাকাতি মামলায় আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকালে ফরিদগঞ্জ থানায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদ নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ২৭ ডিসেম্বর নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা গ্রহণ করেন ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন। ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফ ইফতেখারকে।

মামলার বাদী মো. খোকন ফরিদগঞ্জের গুপ্টি সরদার বাড়ির সন্তান। তিনি পেশায় একজন শ্রমিক। এর আগে চলতি বছরের ২৪ নভেম্বর ভোরের দিকে উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের সাইসাঙ্গা গ্রামের মিজি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ২৮ নভেম্বর ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মিজি বাড়ির গৃহবধূ (রহিম বাদশার স্ত্রী) পেয়ারা বেগম। ওই মামলায় ১৫ ডিসেম্বর রাতে নিজ বাড়ি থেকে আটকের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয় মো. খোকনকে। এনিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ফরিদগঞ্জ থানায় ৪ মামলা রয়েছে।

খোকনের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ ডিসেম্বর একটি ডাকাতি মামলায় তিনজন অজ্ঞাতনামা আসামিকে ফরিদগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও থানার এসআই মো. হুমায়ুন কবিরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামি খোকনের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এ সময় তিনি পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

এর আগে গ্রেপ্তারের সময় স্মারকপত্রে আসামিকে সুস্থ বলা হয়েছিল। এছাড়া পুলিশ ফরওয়ার্ডিংয়ে কোনো জখমের উল্লেখ ছিল না। এতে আসামির শরীর অবস্থঅ পরীক্ষা করে তাৎক্ষণিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেন ম্যাজিস্ট্রেট। একইসঙ্গে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। এছাড়া আসামিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন তিনি।

নির্যাতনের ঘটনায় মো. খোকনের লিখিত জবানবন্দি। সংগৃহীত ছবি
নির্যাতনের ঘটনায় মো. খোকনের লিখিত জবানবন্দি। সংগৃহীত ছবি

ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গত ১৭ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদর হাসপাতালে আসামি খোকনকে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেন চিকিৎসক রানা সাহা ও আসিবুল হাসান চৌধুরী। এতে আসামির উভয় পায়ের ঊরুর ওপর একাধিক নীলা-ফুলা জখম রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

এদিকে আদালতের মামলা দায়েরের নির্দেশের পর ২৩ ডিসেম্বর ঘটনার গুরুত্ব ও স্পর্শকাতরতার কথা উল্লেখ করে তদন্তের জন্য ১৫ দিন সময় প্রার্থনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা। তবে ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিকভাবে মামলা দায়েরের পূর্বের আদেশ বহাল রাখেন। এই আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনানুযায়ী এ ধরনের অপরাধে মামলা দায়ের ব্যতীত তদন্ত পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।

খোকন বর্তমানে চাঁদপুর জেলা কারাগারে আছেন। থানায় নির্যাতনের বর্ণনায় তিনি উল্লেখ করেন, হাজতে থাকাকালে মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় দুজন পুলিশ সদস্য তাঁর উরু, হাঁটু ও পশ্চাতে লাঠি পেটা করেন। এ সময় বুট পায়ে আরেকজন তাঁকে চেপে ধরেন, অন্যজন তাঁর পা চেপে ধরেছিলেন। এমনকি তাঁর আঙুলে ক্লিপ লাগিয়ে বৈদ্যুতিক শকও দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রবিউল হাসান স্ট্রিমকে বলেন, ‘আদালতের আদেশের পর ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত