leadT1ad

বিশেষ সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

যারা পার্লামেন্টে আসবেন, তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন এবং পথচলার অনেক বিষয়ই বাংলাদেশের মানুষের কাছেই জানা-অজানা। তিনি তাঁর জীবন, রাজনীতি এবং বিএনপির সামনের দিনের পথচলা, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, আসন্ন নির্বাচন, মনোনয়ন, জাতীয় সরকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ঢাকা স্ট্রিমের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকাটি নিয়েছেন ঢাকা স্ট্রিমের সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ। আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব।

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

স্ট্রিমের সাথে বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্ট্রিম ছবি

জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন বিশ্বাসভঙ্গ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর অভিযোগ, সনদ নিয়ে বিএনপি যে নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তিগুলো দিয়েছিল, সেগুলো পরে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটিকে ‘ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ বা বিশ্বাসভঙ্গ বলে অভিহিত করেন তিনি।

আজ রোববার (২ নভেম্বর) ঢাকা স্ট্রিমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল এই কথা বলেন। নিচে সাক্ষাৎকারটি দেওয়া হল।

ইফতেখার মাহমুদ: দেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে জুলাই সনদ নিয়ে একটি তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে, আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বওয়া শুরু হয়েছে। এই জায়গা থেকে আপনিও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে যদি জুলাই সনদের পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরে কিছু বলেন।

মির্জা ফখরুল: জুলাই সনদ সফলভাবে স্বাক্ষরিত হোক, এটা আমরা সবাই চেয়েছি। সব রজনৈতিক দলই চেয়েছে। যে কারণে ঐকমত্য কমিশন তৈরি হওয়ার পরে আমাদের প্রতিনিধিদল এবং আমি বলব বিশেষজ্ঞ দল নিয়মিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের প্রায় সব মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। তারা সেখানে যথেষ্ট ইতিবাচক অবদানও রেখেছেন। কিন্তু যেদিন জুলাই সনদ স্বাক্ষর হয়, সেদিন আমাদের সামনে যে বিষয়গুলো আনা হয়েছিল, সেগুলোতে স্বাক্ষর করেছি। যেসব বিষয়ে একমত হয়েছি, সেগুলোতে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু তারা যখন এটি সরকারের কাছে, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করলেন, তখন দেখা গেল, অন্যান্য দলসহ আমরা যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো নেই। অন্যদিকে, তারা (ঐকমত্য কমিশন) তাদের নিজস্ব কিছু চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এসেছে, যেসব আলোচনা আসলে ঐকমত্য কমিশনে হয়নি। এই বিষয়গুলো আমাদের কাছে মনে হয়েছে অনভিপ্রেত। এটা আমরা আশা করিনি। আমরা আশা করেছিলাম, এত বড় দায়িত্বশীল একটি বডি, তারা নিশ্চয়ই রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতগুলোকে সঠিকভাবে প্রতিফলন ঘটাবে এবং সেভাবেই বিষয়গুলো সামনে আসবে। যে কারণেই আমরা এখানে রিয়েক্ট করেছি। আমরা মনে করেছি ইট ওয়াজ এ সর্ট অফ ব্রিচ অফ ট্রাস্ট। যে কারণেই আমরা সেই কথাগুলো বলেছি। আমরা এখনো বিশ্বাস করি যে, সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে মূল বিষয়টাতে ফিরে আসা।

ইফতেখার মাহমুদ: জুলাই সনদ নিয়ে যে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল শুরু হয়েছে, এটা আসন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে?

মির্জা ফখরুল: না। নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না বলে আমি আশা করি। কিন্তু তারপরেও কথা হচ্ছে, এই বিষয়গুলো যদি সমাধান না হয়, তাহলে তো অবশ্যই সমস্যা তৈরি করবে। সেজন্যই আমরা আহ্বান করেছি যে সরকার ইমিডিয়েটলি এই বিষয়টি সমাধান করুক। তাদের বক্তব্য নিয়ে আসুক; যাতে করে সমস্যার সমাধান হয়। আমরা একটা সমাধান চাইছি, আশু সমাধান। খুব দ্রুত।

আমরা এখনো কোনো মনোনয়ন দিইনি কিন্তু। এটা কিন্তু ভুল মেসেজ যাবে। আমরা কোনো মনোনয়ন দিইনি এখন পর্যন্ত। আমরা মনোনয়ন দেব। খুব শীঘ্রই দেব। সেটা হবে প্রাথমিক মনোনয়ন। ইট মে চেইঞ্জ। পরে যদি দরকার হয়, পরিবর্তন হবে। আমাদের মূল ক্রাইটেরিয়াটা হচ্ছে, এই দীর্ঘ পনেরো বছরে যারা সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন এবং যারা পার্লামেন্টে যাওয়ার যোগ্য, এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে আমরা মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে প্রাধান্য দিচ্ছি।

ইফতেখার মাহমুদ: আপনাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা?

মির্জা ফখরুল: আমাদের প্রস্তাব আমরা তো আগেই দিয়েছি। আপনারা জানেন, সংস্কারের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত পজিটিভ। ২০১৬ সালে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’ দিয়েছিলেন। আমরা ২০২১-এ ৭ দফা দিয়েছিলাম, তারপরে আবার ২০২২-এ প্রথমে ২৭ দফা তারপর ৩১ দফা নিয়ে এসেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এই দফাগুলো দিয়েছি। আজকে যে বিষয়গুলোতে একমত হচ্ছি, ৩১ দফার মধ্যে প্রায় সবই সেখানে আছে। ৩১ দফার মধ্যে আরও বেশি কিছু আছে, ইকোনমি সম্পর্কে আছে, সোশ্যাল রিফর্ম সম্পর্কেও আছে। এডুকেশন, হেলথ সম্পর্কে আমাদের কথাবার্তা আছে। তো আমরা কিন্তু সংস্কারের ব্যাপারে সবসময় একটা পজিটিভ ভূমিকা পালন করেছি। আমরা মনে করি, যেগুলোতে একমত হয়েছি, অবিলম্বে সরকারের উচিত হবে সেগুলো সামনে নিয়ে এসে এই সমস্যাটার সমাধান করে দেওয়া।

ইফতেখার মাহমুদ: নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে যে কারা বিএনপির টিকেট পাচ্ছেন, বিএনপির নির্বাচনী মিত্র বা জোট কারা হচ্ছেন? আপনারা যাদেরকে মনোনয়ন দিচ্ছেন তারা কারা, কী বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তাদের মনোনয়ন দিচ্ছেন?

মির্জা ফখরুল: আপনাদেরকে পরিষ্কার করে বলে দেই, প্রায় পনেরো বছর দেশে নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন হয়েছে কিন্তু সেটা প্রহসন হয়েছে। তামাশা হয়েছে। আমরা পার্টিসিপেট করিনি। এখানে একটা বিশাল অংশ আছে একদম ইয়ং। তরুণ ভোটাররা আছে, যারা আগে কখনো ভোট দেয়নি। সব মিলিয়ে আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে সেইভাবে চেষ্টা করছি মনোনয়নটা দেওয়ার যাতে করে সবাই রিপ্রেজেন্টেড হয়। এটা তো এক নম্বর। দুই নম্বর, আমাদের একটা কমিটমেন্ট আছে। সেই কমিটমেন্টটা হচ্ছে, আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নির্বাচন করব। নির্বাচন করার পরে যারা পার্লামেন্টে আসবেন, তাদেরকে নিয়ে, সেই দলগুলোকে নিয়ে আমরা একটা জাতীয় সরকার গঠন করব। এখানে কিন্তু যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি তাদের সবাইকে নিয়েই একটা জাতীয় সরকার গঠন করার কথা বলেছি। দ্যাট ইজ আওয়ার কমিটমেন্ট।

ইফতেখার মাহমুদ: আপনাদের সঙ্গে যারা নির্বাচনী জোটে যেতে চান, তাদের অনেকেই আপনাদের মার্কা বা প্রতীক ধানের শীষ পেতে চাচ্ছেন বলে আলোচনা আছে। এই সম্পর্কে কী বলবেন।

মির্জা ফখরুল: বিষয়টা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যে নিয়মগুলো দেয় আর কি। তারা নতুন করে যেটা করেছে, প্রত্যেক দলকে তার নিজস্ব মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। এই জিনিসটা একটু সমস্যায় দাঁড়িয়ে আছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে এটা পরিবর্তন করার জন্য চিঠিও দিয়েছি। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর পাইনি। তবে আমাদের দলে যদি জয়েন করে কেউ করতে চায়, সেটা পার্টি ডিসিশন নেবে। তবে বেশিরভাগ দলই কিন্তু তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখেই তাদের নির্বাচনটা করতে চায়।

আমরা প্রফেসর ইউনূস সাহেবকে সবসময় অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে সমর্থন দিয়েছি এবং দিয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনেও দিয়ে যাব। ভুলত্রুটি থাকতেই পারে, সেটা ঠিকঠাক করে নেওয়ার চেষ্টা তিনি করেছেন, করবেন ভবিষ্যতেও। আর সেনাবাহিনী তো আমি মনে করি, সেনাবাহিনী সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব পালন করেছেন ৫ আগস্ট। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে যেটা হওয়া উচিত সেটাই তারা করছেন।

ইফতেখার মাহমুদ: যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, তাদের কী দেখে আপনারা মনোনয়ন দিলেন? কারণ এখানে তো তরুণ ভোটার একটা ফ্যাক্টর।

মির্জা ফখরুল: না, আমরা এখনো কোনো মনোনয়ন দিইনি কিন্তু। এটা কিন্তু ভুল মেসেজ যাবে। আমরা কোনো মনোনয়ন দিইনি এখন পর্যন্ত। আমরা মনোনয়ন দেব। খুব শীঘ্রই দেব। সেটা হবে প্রাথমিক মনোনয়ন। ইট মে চেইঞ্জ। পরে যদি দরকার হয়, পরিবর্তন হবে। আমাদের মূল ক্রাইটেরিয়াটা হচ্ছে, এই দীর্ঘ পনেরো বছরে যারা সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন এবং যারা পার্লামেন্টে যাওয়ার যোগ্য, এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে আমরা মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে প্রাধান্য দিচ্ছি। একই সঙ্গে যারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য মানুষ, সেই সব মানুষদের আমরা মনোনয়ন দেওয়ার কথা চিন্তা করছি।

ইফতেখার মাহমুদ: নানা ধরনের জরিপ করে তাদের গ্রহণযোগ্যতা, যোগ্যতা…।

মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ সেটা অবশ্যই করা হয়েছে।

ইফতেখার মাহমুদ: সর্বশেষ যে কয়েকটি নির্বাচন হয়ে গেল ছাত্র সংসদে, সেখানে আমরা দেখেছি, শিবিরসহ নানা ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো জয়ী হয়েছে। এগুলো নিয়ে নানা ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এগুলোকে জাতীয় নির্বাচনের ছায়া হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। আপনাদের দিক থেকে এই বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা মনে করি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় জীবনে খুব বেশি পড়বে না। পড়েও না। যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জয়ী হয়েছেন, তারা তাদের মতো করে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন ইজ কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট। আমরা অতীতে সরকার চালিয়েছি এবং আমরা বারবার আসছি। আজ আমরা প্রায় সাতচল্লিশ বছরের পুরনো একটা পার্টি। সংস্কার তো আমরাই সবচেয়ে বেশি করেছি। তো সেই কারণে আমরা জনগণের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য একটা রাজনৈতিক দল। আমরা মনে করি, আমরা অবশ্যই আগামী নির্বাচনে একটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হব।

ইফতেখার মাহমুদ: আপনি সম্প্রতি ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। দেশের নির্বাচন বানচালের প্রক্রিয়ার চেষ্টা চলছে সেটাও বলছেন। এটা কেন মনে হচ্ছে?

মির্জা ফখরুল: বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা, কিছু পত্রিকার রিপোর্ট, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কতগুলো বিষয় আসছে, যে বিষয়গুলো আমার কাছে মনে হয়েছে, কেউ কেউ দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়। একটা এনার্কি তৈরি করতে চায়। যেটাকে আমরা সবসময় মনে করি, গণতন্ত্র উত্তরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের কিছু কিছু রাজনৈতিক দল অথবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও এই ধরনের একটা প্রভাব সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। দেশে একটা অনৈক্য, একটা অস্থিরতা এবং সর্ট অফ এনার্কি আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে যেসব বিষয় প্রচার করা হচ্ছে, এগুলো গণতন্ত্রের জন্য কখনোই খুব একটা ভালো করবে না।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। আমরা মনে করি, এভরিবডি ইজ আওয়ার ফ্রেন্ড, নোবডি ইজ আওয়ার এনিমি। বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যথেষ্ট হৃদ্যতামূলক। নেইবারিং কান্ট্রি যারা আছে, তাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ভালো। তবে আমরা মনে করি, নেইবারিং কান্ট্রিগুলোর ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতার প্রয়োজন আছে। একই সঙ্গে নিজস্ব মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রেখে, বাংলাদেশের যে স্বার্থগুলো আছে, সেই স্বার্থটাকে রক্ষা করা, আদায় করা, একটা বড় কাজ বলে আমরা মনে করি।

ইফতেখার মাহমুদ: সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিশেষ করে প্রফেসর ইউনূস এবং ওয়াকার সাহেব, তাঁদের দুজনের বিষয়ে একটু যদি মূল্যায়ন করতেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা প্রফেসর ইউনূস সাহেবকে সবসময় অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে সমর্থন দিয়েছি এবং দিয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনেও দিয়ে যাব। ভুলত্রুটি থাকতেই পারে, সেটা ঠিকঠাক করে নেওয়ার চেষ্টা তিনি করেছেন, করবেন ভবিষ্যতেও। আর সেনাবাহিনী তো আমি মনে করি, সেনাবাহিনী সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব পালন করেছেন ৫ আগস্ট। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে যেটা হওয়া উচিত সেটাই তারা করছেন। যে সাপোর্টটা তারা দিচ্ছেন সিভিল গভর্মেন্টকে, বিশেষ করে ল অ্যান্ড ইনফোর্সিং এজেন্সি সিচুয়েশনটাকে কন্ট্রোল করার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত তারা মাঠে থেকে কষ্ট করে কাজগুলো করছেন। সুতরাং, সেখানে খুব বেশি সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয় না।

ইফতেখার মাহমুদ: বিএনপি নিয়ে আলোচনা উঠলেই তাদের আন্তর্জাতিক মিত্র, বিশেষ করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দলটির দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনায় উঠে আসে। ভারত, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীনের ব্যাপারে আপনাদের দলের আগের যে অবস্থান, বর্তমান মূল্যায়ন, কী দেখছেন ভবিষ্যতে?

মির্জা ফখরুল: আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। আমরা মনে করি, এভরিবডি ইজ আওয়ার ফ্রেন্ড, নোবডি ইজ আওয়ার এনিমি। বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যথেষ্ট হৃদ্যতামূলক। নেইবারিং কান্ট্রি যারা আছে, তাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ভালো। তবে আমরা মনে করি, নেইবারিং কান্ট্রিগুলোর ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতার প্রয়োজন আছে। একই সঙ্গে নিজস্ব মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রেখে, বাংলাদেশের যে স্বার্থগুলো আছে, সেই স্বার্থটাকে রক্ষা করা, আদায় করা, একটা বড় কাজ বলে আমরা মনে করি। বিশেষ করে পানির হিস্যা, গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ, তিস্তা নদীর মেয়াদ, অন্যান্য চুক্তিগুলো আমাদের জন্য খুবই ইম্পরট্যান্ট বলে আমি মনে করি। এরপর সীমান্তে হত্যা, এটাও বন্ধ হওয়া দরকার। ট্রেড ইমব্যালেন্স যেটা আছে সেটা ঠিক হওয়া দরকার। অন্য দেশের রাজনৈতিক বা আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, এটাও আমি মনে করি, ইটস আ ভেরি ইম্পরট্যান্ট ইস্যু।

ইফতেখার মাহমুদ: যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, চীনের ব্যাপারে কী বলবেন?

মির্জা ফখরুল: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছ। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের মোটামুটি একটা সম্পর্ক আছে। কথা হয়েছে এর মধ্যে। চীনের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক আছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই।

ইফতেখার মাহমুদ: অসংখ্য ধন্যবাদ। ঢাকা স্ট্রিমের দর্শক এবং পাঠকদের জন্য যদি কিছু বলতেন

মির্জা ফখরুল: ঢাকা স্ট্রিম একটি নতুন গণমাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। আমি মনে করি, এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে, বিশেষ করে যারা আগ্রহী দর্শক এবং পাঠকদের মধ্যে তারা একটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা তাদের ভূমিকা অক্ষুণ্ণ রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। তাদেরকে আমার অভিনন্দন, শুভেচ্ছা। তাদের চলার পথ সুন্দর হোক, এটাই আমি চাই।

Ad 300x250

সম্পর্কিত