leadT1ad

পানগাঁও পরিচালনার দায়িত্ব পেল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৫৮
পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল (পিআইটিসি) পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেডলগ। এ বিষয়ে আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২২ বছর মেয়াদি একটি কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সুইস প্রতিষ্ঠানটি।

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এবং মেডলগ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম আনিসুল মিল্লাত চুক্তিতে সই করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন।

অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্দর ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে আজ একটি স্মরণীয় দিন। এই চুক্তি বাংলাদেশের লজিস্টিক ও বাণিজ্য অবকাঠামো উন্নয়নে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। এর মূল সুফলভোগী হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আজকের এই বিনিয়োগ আমাদের স্বপ্নবান তরুণ প্রজন্মের জন্য। বাংলাদেশের লজিস্টিক খাতের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে এই চুক্তি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেডলগের বিশ্বব্যাপী দক্ষতা কাজে লাগিয়ে এবং আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব এবং অভ্যন্তরীণ লজিস্টিকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের শীর্ষস্থানে নিয়ে যেতে পারব।’

চুক্তি অনুযায়ী, মেডলগ তার স্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেডলগ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে পানগাঁও টার্মিনালের কার্যক্রম, সরবরাহ ও অটোমেশন তত্ত্বাবধান করবে। প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনালের বার্ষিক হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজার টিইইউ-তে (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) উন্নীত করবে। মাল্টিমোডাল সংযোগ জোরদার করার লক্ষ্যে পানগাঁওকে অন্যান্য নৌ ও সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে অভ্যন্তরীণ বার্জ ভাড়া করবে মেডলগ।

এদিকে দেশীয় বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া এবং বিশেষ করে চুক্তি স্বাক্ষরের দিনটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার দিনে এই চুক্তি স্বাক্ষরকে সরকারের একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন সমালোচকরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘বেছে বেছে ১৭ই নভেম্বর, সকাল ১০ টায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এপিএম টার্মিনালসের সাথে চুক্তির তারিখ বেছে নেয়া হলো। এইদিনই সকাল ১১ টায় শেখ হাসিনার মামলার রায়। আবার আগেরদিনই পুলিশ দেখা মাত্র ককটেল বিস্ফোরণ বা আগুন দেওয়া ব্যক্তিকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘যেকোনো কিছু যাচাই-বাছাই করে, সময় নিয়ে চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী কিনা দেখা উচিৎ, অথচ কত দ্রুততার সাথে চালাকি করে একই দিনে কাজ সেরে ফেলার চেষ্টা চলছে, সন্দেহ করবো না তো কী? যথেষ্ট আলাপ-আলোচনার কোনো সুযোগই রাখেনি। ছি অন্তর্বর্তী সরকার। ছিহ। কিছুই সংস্কার করলেন না, বরং সংস্কারের অজুহাতে নিজেদের ইচ্ছামত কাজ সম্পাদন করলেন। স্বৈরাচারীর চেয়েও বড়ো স্বৈরাচারী এই চালাকি।’

তার এই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি নিজের ওয়ালে শেয়ার করে সরকারের এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদও।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক কল্লোল মোস্তফা লিখেছেন, ‘এরকম তাড়িঘড়ি করে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরের কি যুক্তি থাকতে পারে! খেয়াল করে দেখেন, কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হয়েছে একদিনে। আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হয়েছে একদিনে। তারপর নেগোসিয়েশান হয়েছে দুই দিনে, সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে শুক্র ও শনিবারে। যে চুক্তির মেয়াদ কমপক্ষে ৩৩ বছর, সে চুক্তির আর্থিক ও কারিগরী দিক খুঁটিয়ে দেখতে এবং বিভিন্ন অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে যথাযথ সময় দিতে হবে না! এখন এই চুক্তিতে যে দেশের স্বার্থ বিরোধী কিছু নেই এটা কে নিশ্চিত করবে! নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্টের কথা বলে তো সবকিছু প্রকাশও করা হবে না।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত