দেশজুড়ে নির্বিচারে পাখি শিকার এখন জীববৈচিত্র্যের জন্য মহাবিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার কলাতিয়া সংলগ্ন এলাকায় ফটোওয়াক ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেছেন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার, বার্ডওয়াচার ও পরিবেশবাদীরা। তাঁরা বলেন, এখনই প্রতিরোধ গড়ে না তুললে বাংলাদেশ দ্রুত ধ্বংসের দিকে যাবে।
সকাল ৯টায় নিউভিশন ইকোসিটি এলাকায় আয়োজিত এই কর্মসূচিতে প্রকৃতিপ্রেমীরা ধুপনি বক, নিশিবক, পানকৌড়ি ও মুনিয়াসহ ৫০টিরও বেশি প্রজাতির পাখি পর্যবেক্ষণ করেন। একই সঙ্গে দেশব্যাপী পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
পাখি শিকার এখন জাতীয় সংকট
আয়োজকরা বলেন, পরিযায়ী হাঁস থেকে শুরু করে স্থানীয় বক—কোনো পাখিই শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, নওগাঁসহ সব অঞ্চলে পাখি শিকার মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ফাঁদ, জাল, বিষটোপ ও এয়ারগান দিয়ে নির্বিচারে পাখি মারা হচ্ছে।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য তারেক অনু বলেন, বুনো পাখি শিকার করা মানে নিজের ক্ষতি করা। পৃথিবী থেকে পাখি বিলুপ্ত হলে মানুষও বিলুপ্ত হবে।
বিবিসিএফ-এর সাধারণ সম্পাদক মো. আরাফাত রহমান বলেন, আইন থাকলেও এয়ারগান নিষিদ্ধ হয়নি। আইনের কার্যকর প্রয়োগ ছাড়া পাখিকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
ন্যাট-সেভের (Nat-Save) সাধারণ সম্পাদক আসকার রুশো বলেন, প্রান্তিক অঞ্চলে পাখি শিকার মহামারি আকার ধারণ করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া শিকারিরাই দেশ থেকে পাখি শেষ করে দেবে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ জানান, রংপুর অঞ্চলে বিষটোপ দিয়েও পাখি শিকার করা হয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সচেতনতা—দুটোই জরুরি।
সিলেটের ফটোগ্রাফার শামীম খান অভিযোগ করেন, হরিপুর হাওরে বিরল প্রজাতির পাখি মেরে হোটেলে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শিকারিদের বেপরোয়া করে তুলেছে।
জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ড. সাফিকুল ইসলাম বলেন, পাখির মৃত্যু মানে আমাদের ভবিষ্যৎ নীরব হয়ে যাওয়া।
অঞ্চলে অঞ্চলে ভয়াবহ চিত্র
নওগাঁর ফটোগ্রাফার সঞ্জয় কুমার জানান, সেখানকার বিলগুলোতে এয়ারগান ও কারেন্ট জাল দিয়ে প্রতিনিয়ত পাখি মারা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার জহিরুল ইসলাম বলেন, জীবননগর পাখির স্বর্গ হলেও এখন শিকারিদের অত্যাচারে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফলের বাগানে কারেন্ট জালে প্রচুর উপকারী প্যাঁচা মারা যাচ্ছে, যা কৃষির জন্য বড় ক্ষতি বলে জানান মোহাম্মদ তারিক হাসান।
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আদনান আজাদ, বাংলাদেশ ফিমেল ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা মৌসুমী সিরাজ, রাজশাহী ও চলনবিল অঞ্চলের ফটোগ্রাফার এবং বার্ডস বাংলাদেশ গ্রুপের অ্যাডমিন শাহরিয়ার কবীর রুশদীসহ অনেকে। তাঁরা সবাই পাখি শিকার বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ ও জাতীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।