স্ট্রিম ডেস্ক

৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১। প্যারিসের অরলি বিমানবন্দর। হাড়কাঁপানো শীতের দুপুর। রানওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বিশাল বোয়িং ৭২০ বিমান, ফ্লাইট ৭১২। গন্তব্য করাচি হয়ে ঢাকা। সিটবেল্ট বেঁধে তৈরি যাত্রীরা। ইঞ্জিনে থ্রাস্ট দেওয়ার অপেক্ষায় পাইলট। ঠিক এই মুহূর্তে বিমানটির ভেতরে ঘটে গেল এক অভাবনীয় ঘটনা।
২৮ বছর বয়সী এক ফরাসি যুবক। তাঁর চোখেমুখে এক অদ্ভুত উন্মাদনা। নিরাপত্তার সব বাধা টপকে আচমকা ককপিটে ঢুকে পড়লেন তিনি। এক হাতে একটি লোডেড ৯ এমএম রিভলবার, অন্য হাতে একটি কালো স্যুটকেস। যার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে কিছু বৈদ্যুতিক তার। পাইলটের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে শান্ত কিন্তু ইস্পাতকঠিন গলায় বললেন, ‘এই বিমান নড়বে না। আমি এই বিমান হাইজ্যাক করলাম।’
সাধারণত হাইজ্যাকাররা চায় বিপুল অংকের টাকা, সোনাদানা কিংবা কোনো রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি। কিন্তু এই যুবক যা চাইলেন, তা শুনে পাইলট তো বটেই, কন্ট্রোল টাওয়ারের কর্মকর্তারাও নিজেদের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
যুবকটি চিৎকার করে বললেন, ‘আমার টাকা চাই না। আমার চাই ২০ টন ওষুধ। পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) শরণার্থীদের জন্য এখনই এই বিমানে ২০ টন ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী লোড করতে হবে। অন্যথায় আমার ব্যাগে থাকা বোমা দিয়ে এই বিমান উড়িয়ে দেব।’

যুবকটির নাম জ্যঁ ইউজিন পল ক্যুয়ে। কোনো পেশাদার সন্ত্রাসী ছিলেন না তিনি। ছিলেন এক ‘মানবতাবাদী রবিনহুড’। টিভিতে দেখেছিলেন কলেরা ও ক্ষুধায় ধুঁকে মরা বাঙালি শিশুদের মুখ। সেই দৃশ্য তাঁর বিবেককে এতটাই দংশন করেছিল যে বেছে নিয়েছিলেন এই ভয়ংকর পথ।
অরলি বিমানবন্দরে তখন টানটান উত্তেজনা। বিমানটি ঘিরে ফেলেছে ফরাসি পুলিশ ও কমান্ডো বাহিনী। ভেতরে জ্যঁ ক্যুয়ে অনড়। সেদিন প্যারিসে পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর উইলি ব্র্যান্ডিটের আসার কথা ছিল। কিন্তু এই ঘটনায় সব ভিআইপি প্রটোকল ভেঙে পড়ে।
ফরাসি সরকার পড়ল মহাবিপদে। একদিকে হাইজ্যাকারের দাবি মেনে নেওয়া মানে সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া। অন্যদিকে হাইজ্যাকারের দাবিটি এতই মানবিক যে তাঁকে উপেক্ষা করাও কঠিন।
মুহূর্তেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল বিষয়টি। প্যারিসের সাধারণ মানুষ ভিড় করতে শুরু করল বিমানবন্দরের বাইরে। সবার মুখে এক কথা—ছেলেটা তো খারাপ কিছু চাইছে না!
টানা ৫ ঘণ্টা চলল এই স্নায়ুযুদ্ধ। জ্যঁ ক্যুয়ে এক হাতে পিস্তল আর অন্য হাতে তাঁর সেই ‘বোমা’ভর্তি সুটকেস ধরে রাখলেন। শেষমেশ জনমতের চাপে এবং পরিস্থিতির নাজুকতা বিচার করে ফরাসি সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলো। দ্রুত ১ টন ওষুধ বিমানবন্দরে নিয়ে এল ফরাসি রেড ক্রস। সরকার প্রতিশ্রুতি দিল, বাকি ১৯ টন ওষুধও দ্রুততম সময়ে পাঠানো হবে।
বিকেলে ওষুধের বাক্স তোলা হচ্ছিল বিমানে। জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখছিলেন জ্যঁ ক্যুয়ে। ঠিক এই অসতর্ক মুহূর্তেই ঘটে গেল ট্র্যাজেডি। ওষুধের কার্টন লোড করার ছলে মেকানিকের ছদ্মবেশে বিমানে উঠে পড়ে পুলিশ। কৌশলে ককপিটের দিকে এগিয়ে যায় তাঁরা। ঝাঁপিয়ে পড়ে জ্যঁ ক্যুঁয়ের ওপর। চলে ধস্তাধস্তি ও চিৎকার। শেষরক্ষা হয়নি। তাঁকে মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরানো হয়।

বিমানবন্দর থেকে যখন তাঁকে নামানো হচ্ছিল, তখন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখল বিশ্ববাসী। সাধারণত সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ার পর গালিগালাজ করে। কিন্তু জ্যঁ ক্যুয়ে পুলিশকে অনুনয় করে বলছিলেন, ‘দয়া করে ওষুধগুলো নামাবেন না। দয়া করে ওষুধগুলো বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবেন। ওরা মরে যাচ্ছে!’
গ্রেপ্তারের পর বোম ডিসপোজাল ইউনিট তাঁর সেই কালো সুটকেসটি পরীক্ষা করে স্তম্ভিত হয়ে যায়। সেখানে কোনো বোমা ছিল না। ছিল কিছু এলোমেলো বৈদ্যুতিক তার, একটি ইলেকট্রিক শেভার, কিছু বই এবং একটি ‘বাইবেল’। তিনি জানতেন তাঁর হাতে আসল বোমা নেই। এও জানতেন ধরা পড়লে তাঁর দীর্ঘ জেল হবে। কিন্তু কেবল একটি ‘ব্লাফ’ বা ধোকা দিয়ে বিশ্ববাসীর নজর বাংলাদেশের দিকে নিতে চেয়েছিলেন। সফল হয়েছিলেন তিনি।
বিচারে তাঁর ৫ বছরের জেল হলো। কিন্তু ততক্ষণে ফ্রান্সের মানুষের কাছে নায়ক হয়ে গেছেন তিনি। তাঁর এই কাজের উদ্দেশ্য জানার পর জনমত তাঁর পক্ষে চলে যায়। প্রবল জনচাপের মুখে ফরাসি সরকার তাঁকে ২ বছর পরেই মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
সবচেয়ে বড় কথা, জ্যঁ ক্যুঁয়ে জেলে গেলেও তাঁর দাবি বিফলে যায়নি। ফরাসি সরকার কথা রেখেছিল। সেই ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী বাংলাদেশে পৌঁছেছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে জ্যঁ ক্যুয়ে এক পাগলাটে বন্ধু। যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে লুট করতে চেয়েছিলেন ২০ টন জীবনরক্ষাকারী ওষুধ।

৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১। প্যারিসের অরলি বিমানবন্দর। হাড়কাঁপানো শীতের দুপুর। রানওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বিশাল বোয়িং ৭২০ বিমান, ফ্লাইট ৭১২। গন্তব্য করাচি হয়ে ঢাকা। সিটবেল্ট বেঁধে তৈরি যাত্রীরা। ইঞ্জিনে থ্রাস্ট দেওয়ার অপেক্ষায় পাইলট। ঠিক এই মুহূর্তে বিমানটির ভেতরে ঘটে গেল এক অভাবনীয় ঘটনা।
২৮ বছর বয়সী এক ফরাসি যুবক। তাঁর চোখেমুখে এক অদ্ভুত উন্মাদনা। নিরাপত্তার সব বাধা টপকে আচমকা ককপিটে ঢুকে পড়লেন তিনি। এক হাতে একটি লোডেড ৯ এমএম রিভলবার, অন্য হাতে একটি কালো স্যুটকেস। যার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে কিছু বৈদ্যুতিক তার। পাইলটের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে শান্ত কিন্তু ইস্পাতকঠিন গলায় বললেন, ‘এই বিমান নড়বে না। আমি এই বিমান হাইজ্যাক করলাম।’
সাধারণত হাইজ্যাকাররা চায় বিপুল অংকের টাকা, সোনাদানা কিংবা কোনো রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি। কিন্তু এই যুবক যা চাইলেন, তা শুনে পাইলট তো বটেই, কন্ট্রোল টাওয়ারের কর্মকর্তারাও নিজেদের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
যুবকটি চিৎকার করে বললেন, ‘আমার টাকা চাই না। আমার চাই ২০ টন ওষুধ। পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) শরণার্থীদের জন্য এখনই এই বিমানে ২০ টন ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী লোড করতে হবে। অন্যথায় আমার ব্যাগে থাকা বোমা দিয়ে এই বিমান উড়িয়ে দেব।’

যুবকটির নাম জ্যঁ ইউজিন পল ক্যুয়ে। কোনো পেশাদার সন্ত্রাসী ছিলেন না তিনি। ছিলেন এক ‘মানবতাবাদী রবিনহুড’। টিভিতে দেখেছিলেন কলেরা ও ক্ষুধায় ধুঁকে মরা বাঙালি শিশুদের মুখ। সেই দৃশ্য তাঁর বিবেককে এতটাই দংশন করেছিল যে বেছে নিয়েছিলেন এই ভয়ংকর পথ।
অরলি বিমানবন্দরে তখন টানটান উত্তেজনা। বিমানটি ঘিরে ফেলেছে ফরাসি পুলিশ ও কমান্ডো বাহিনী। ভেতরে জ্যঁ ক্যুয়ে অনড়। সেদিন প্যারিসে পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর উইলি ব্র্যান্ডিটের আসার কথা ছিল। কিন্তু এই ঘটনায় সব ভিআইপি প্রটোকল ভেঙে পড়ে।
ফরাসি সরকার পড়ল মহাবিপদে। একদিকে হাইজ্যাকারের দাবি মেনে নেওয়া মানে সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া। অন্যদিকে হাইজ্যাকারের দাবিটি এতই মানবিক যে তাঁকে উপেক্ষা করাও কঠিন।
মুহূর্তেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল বিষয়টি। প্যারিসের সাধারণ মানুষ ভিড় করতে শুরু করল বিমানবন্দরের বাইরে। সবার মুখে এক কথা—ছেলেটা তো খারাপ কিছু চাইছে না!
টানা ৫ ঘণ্টা চলল এই স্নায়ুযুদ্ধ। জ্যঁ ক্যুয়ে এক হাতে পিস্তল আর অন্য হাতে তাঁর সেই ‘বোমা’ভর্তি সুটকেস ধরে রাখলেন। শেষমেশ জনমতের চাপে এবং পরিস্থিতির নাজুকতা বিচার করে ফরাসি সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলো। দ্রুত ১ টন ওষুধ বিমানবন্দরে নিয়ে এল ফরাসি রেড ক্রস। সরকার প্রতিশ্রুতি দিল, বাকি ১৯ টন ওষুধও দ্রুততম সময়ে পাঠানো হবে।
বিকেলে ওষুধের বাক্স তোলা হচ্ছিল বিমানে। জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখছিলেন জ্যঁ ক্যুয়ে। ঠিক এই অসতর্ক মুহূর্তেই ঘটে গেল ট্র্যাজেডি। ওষুধের কার্টন লোড করার ছলে মেকানিকের ছদ্মবেশে বিমানে উঠে পড়ে পুলিশ। কৌশলে ককপিটের দিকে এগিয়ে যায় তাঁরা। ঝাঁপিয়ে পড়ে জ্যঁ ক্যুঁয়ের ওপর। চলে ধস্তাধস্তি ও চিৎকার। শেষরক্ষা হয়নি। তাঁকে মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরানো হয়।

বিমানবন্দর থেকে যখন তাঁকে নামানো হচ্ছিল, তখন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখল বিশ্ববাসী। সাধারণত সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ার পর গালিগালাজ করে। কিন্তু জ্যঁ ক্যুয়ে পুলিশকে অনুনয় করে বলছিলেন, ‘দয়া করে ওষুধগুলো নামাবেন না। দয়া করে ওষুধগুলো বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবেন। ওরা মরে যাচ্ছে!’
গ্রেপ্তারের পর বোম ডিসপোজাল ইউনিট তাঁর সেই কালো সুটকেসটি পরীক্ষা করে স্তম্ভিত হয়ে যায়। সেখানে কোনো বোমা ছিল না। ছিল কিছু এলোমেলো বৈদ্যুতিক তার, একটি ইলেকট্রিক শেভার, কিছু বই এবং একটি ‘বাইবেল’। তিনি জানতেন তাঁর হাতে আসল বোমা নেই। এও জানতেন ধরা পড়লে তাঁর দীর্ঘ জেল হবে। কিন্তু কেবল একটি ‘ব্লাফ’ বা ধোকা দিয়ে বিশ্ববাসীর নজর বাংলাদেশের দিকে নিতে চেয়েছিলেন। সফল হয়েছিলেন তিনি।
বিচারে তাঁর ৫ বছরের জেল হলো। কিন্তু ততক্ষণে ফ্রান্সের মানুষের কাছে নায়ক হয়ে গেছেন তিনি। তাঁর এই কাজের উদ্দেশ্য জানার পর জনমত তাঁর পক্ষে চলে যায়। প্রবল জনচাপের মুখে ফরাসি সরকার তাঁকে ২ বছর পরেই মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
সবচেয়ে বড় কথা, জ্যঁ ক্যুঁয়ে জেলে গেলেও তাঁর দাবি বিফলে যায়নি। ফরাসি সরকার কথা রেখেছিল। সেই ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী বাংলাদেশে পৌঁছেছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে জ্যঁ ক্যুয়ে এক পাগলাটে বন্ধু। যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে লুট করতে চেয়েছিলেন ২০ টন জীবনরক্ষাকারী ওষুধ।

আজ ৮ ডিসেম্বর জন লেননের মৃত্যুদিন। দুনিয়া কাঁপানো ব্যান্ড বিটলস-এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য লেনন ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, চিত্রশিল্পী, লেখক ও শান্তিকর্মী। ‘ইমাজিন’ তাঁর বিখ্যাত গান। এই গানে তিনি কোন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন? কেন গানটি আজও এত প্রাসঙ্গিক?
৩ ঘণ্টা আগে
বর্তমান বিশ্বে সাহসী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যাঁর নাম সবার আগে আসে, তিনি নোম চমস্কি। ৭ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন। একদিকে তিনি আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের স্থপতি, অন্যদিকে শোষিতের পক্ষে দাঁড়ানো এক অকুতোভয় যোদ্ধা। খুঁজে দেখা যাক আধুনিক সময়ের অন্যতম প্রধান চিন্তক ও জনবুদ্ধিজীবী নোম চমস্কির বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম।
৫ ঘণ্টা আগে
শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনাই ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়। যদিও ইতিহাসের পাতায় কচুরিপানা নিয়ে খুব কমই লেখা হয়েছে, কিন্তু কচুরিপানার অবদান অস্বীকার কোনো উপায় নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেবল বারুদ আর রক্তের ইতিহাস নয়। এটি ছিল বাংলার মাটি, জল ও প্রকৃতির এক সম্মিলিত সংগ্রাম।
৬ ঘণ্টা আগে
‘আমরা বর্ষার অপেক্ষায় আছি… তাঁরা পানিকে ভয় পায়, আর আমরা হচ্ছি জলের রাজা। প্রকৃতি হবে আমাদের দ্বিতীয় বাহিনী।’ নিউইয়র্ক টাইমসের খ্যাতিমান সাংবাদিক সিডনি শনবার্গের ‘ডেটলাইন বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছিলেন এক বাঙালি অফিসার।
৬ ঘণ্টা আগে