১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর একাধিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি। মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেপ্তার করা অথবা তাঁদের যাতে নিশ্চিতভাবে ধরা যায় এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে তথ্য দিলে ১৪ মণ আমন চালের সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যেত। আর সর্বোচ্চ ২৭০-২৮৫ মণ চালের সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যেত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার অথবা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীর ধরার জন্য তথ্য দিলে।
গৌতম কে শুভ

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়লে, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পত্রিকায় নগদ পুরস্কার ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি দেয়। এটিকে সরকারি গণবিজ্ঞপ্তি আকারে ‘নগদ পুরস্কার’ শিরোনামে একাধিক পত্রিকায় (যেমন দৈনিক পূর্বদেশ, ইত্তেফাক, আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, সংগ্রাম ইত্যাদি) ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ছাপা হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তির মূল কথা ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিন, তাঁদের তথ্য নিকটতম থানায় জানান আর নগদ পুরস্কার নিন। ‘দুষ্কৃতিকারী’ শব্দটি ব্যবহার করে চেষ্টা করা হয়েছিল এমন একটি ধারণা ছড়ানোর যেন স্বাধীনতার জন্য লড়ে যাওয়া মুক্তিকামীরা আসলে দেশের অশান্তির কারণ।
সরকারি বিজ্ঞপ্তির প্রথম লাইনেই ঘোষণা ছিল, ‘যেসব ব্যক্তি দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করার জন্য বিশ্বস্ত তথ্য সরবরাহ করিবেন অথবা যাহারা দুষ্কৃতিকারীদের ধরিয়া আইন-শৃংখলারক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির করিবেন তাহাদের নিম্নোক্ত নগদ পুরস্কারগুলি দেওয়া হইবে।’ তারপর একের পর এক পুরস্কারের তালিকা। তবে পুরস্কারের অঙ্কটা দেখলেই বোঝা যায়, মানুষকে কীভাবে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল ‘দুষ্কৃতিকারীদের ধরে দেওয়া অথবা দুষ্কৃতিকারীদেরকে ধরার ব্যাপারে তাদের অবস্থান সম্পর্কে এমন তথ্য সরবরাহ করা যাতে করে কৃতকার্যভাবে দুষ্কৃতিকারীদের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়।’ অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেপ্তার করা অথবা তাঁদের যাতে নিশ্চিতভাবে ধরা যায়, এ ব্যাপারে তথ্য দিলে ৫০০ টাকা পাওয়া যাবে।
আরেক ধাপ ওপরে ছিল ভারতের মাটিতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। তাঁদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কার ৭৫০ টাকা। ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দক্ষতা পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ছিল আতঙ্কের কারণ। তাই টাকার টোপ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর রাইফেল, গ্রেনেড বা কোনো আগ্নেয়াস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কারের অঙ্ক পৌঁছে যেত ১০০০ টাকায়।
আরও ভয়ংকর ছিল পরের অংশ। নেতাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল, ‘দুষ্কৃতিকারীদের কোন একজন নেতা অথবা কতিপয় গ্রুপের নেতাকে ধরার জন্য ২০০০ টাকা।’ বিজ্ঞপ্তিতে এমনও উল্লেখ ছিল যে, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের মতো ঘটনা অথবা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীদের ধরতে পারলে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার দেওয়ার বিবেচনা করা যেতে পারে।
সেই সময় দৈনিক ইত্তেফাকের দাম ছিল ২৫ পয়সা। একই দিনের চাকরির বিজ্ঞাপন পাতা খুললে দেখা যায় ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটিতে ‘এসিস্টেন্ট এস্টেট অফিসার’ পদের জন্য বেতন ঠিক করা আছে ৩০০ টাকা। গ্রাজুয়েশন লাগবে, পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে। সেখানে শুধুমাত্র একজন মুক্তিযোদ্ধার অবস্থান জানালে যে অর্থ পাওয়া যেত, তা একজন গ্রাজুয়েটসহ পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সরকারি কর্মকর্তার প্রায় দুই মাসের বেতনের প্রায় কাছাকাছি।

দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধান চাউলের মূল্য হ্রাস’ সংবাদে জানা যায় ‘বর্তমানে নুতন আমন চাউল প্রকারভেদে ৩৫ টাকা হইতে ৩৭ টাকা দরে প্রতি মণ বেচাকেনা হইতেছে।’ সেই হিসাবে মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেপ্তার করা অথবা তাঁদের যাতে নিশ্চিতভাবে ধরা যায় এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে তথ্য দিলে ১৪ মণ আমন চালের সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যেত। আর সর্বোচ্চ ২৭০-২৮৫ মণ চালের সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যেত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার অথবা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীর ধরার জন্য তথ্য দিলে।
অঙ্কের হিসাব যতই বড় হোক, বাস্তবতা ছিল এ ধরনের পুরস্কার ঘোষণা সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। তাই এসব বিজ্ঞপ্তি ইতিহাসে রয়ে গেছে এক ধরনের ব্যর্থ প্রচেষ্টার উদাহরণ হিসেবে। মানুষকে বিভক্ত করার চেষ্টা ছিল, কিন্তু সেটি কার্যকর হয়নি। ইতিহাসবিদদের মতে, এটি ছিল স্বদেশি লোকজনকে নিজের দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে উদ্ধুদ্ধ করার চেষ্টা।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়লে, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পত্রিকায় নগদ পুরস্কার ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি দেয়। এটিকে সরকারি গণবিজ্ঞপ্তি আকারে ‘নগদ পুরস্কার’ শিরোনামে একাধিক পত্রিকায় (যেমন দৈনিক পূর্বদেশ, ইত্তেফাক, আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, সংগ্রাম ইত্যাদি) ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ছাপা হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তির মূল কথা ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিন, তাঁদের তথ্য নিকটতম থানায় জানান আর নগদ পুরস্কার নিন। ‘দুষ্কৃতিকারী’ শব্দটি ব্যবহার করে চেষ্টা করা হয়েছিল এমন একটি ধারণা ছড়ানোর যেন স্বাধীনতার জন্য লড়ে যাওয়া মুক্তিকামীরা আসলে দেশের অশান্তির কারণ।
সরকারি বিজ্ঞপ্তির প্রথম লাইনেই ঘোষণা ছিল, ‘যেসব ব্যক্তি দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করার জন্য বিশ্বস্ত তথ্য সরবরাহ করিবেন অথবা যাহারা দুষ্কৃতিকারীদের ধরিয়া আইন-শৃংখলারক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির করিবেন তাহাদের নিম্নোক্ত নগদ পুরস্কারগুলি দেওয়া হইবে।’ তারপর একের পর এক পুরস্কারের তালিকা। তবে পুরস্কারের অঙ্কটা দেখলেই বোঝা যায়, মানুষকে কীভাবে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল ‘দুষ্কৃতিকারীদের ধরে দেওয়া অথবা দুষ্কৃতিকারীদেরকে ধরার ব্যাপারে তাদের অবস্থান সম্পর্কে এমন তথ্য সরবরাহ করা যাতে করে কৃতকার্যভাবে দুষ্কৃতিকারীদের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়।’ অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেপ্তার করা অথবা তাঁদের যাতে নিশ্চিতভাবে ধরা যায়, এ ব্যাপারে তথ্য দিলে ৫০০ টাকা পাওয়া যাবে।
আরেক ধাপ ওপরে ছিল ভারতের মাটিতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। তাঁদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কার ৭৫০ টাকা। ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দক্ষতা পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ছিল আতঙ্কের কারণ। তাই টাকার টোপ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর রাইফেল, গ্রেনেড বা কোনো আগ্নেয়াস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কারের অঙ্ক পৌঁছে যেত ১০০০ টাকায়।
আরও ভয়ংকর ছিল পরের অংশ। নেতাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল, ‘দুষ্কৃতিকারীদের কোন একজন নেতা অথবা কতিপয় গ্রুপের নেতাকে ধরার জন্য ২০০০ টাকা।’ বিজ্ঞপ্তিতে এমনও উল্লেখ ছিল যে, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের মতো ঘটনা অথবা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীদের ধরতে পারলে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার দেওয়ার বিবেচনা করা যেতে পারে।
সেই সময় দৈনিক ইত্তেফাকের দাম ছিল ২৫ পয়সা। একই দিনের চাকরির বিজ্ঞাপন পাতা খুললে দেখা যায় ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটিতে ‘এসিস্টেন্ট এস্টেট অফিসার’ পদের জন্য বেতন ঠিক করা আছে ৩০০ টাকা। গ্রাজুয়েশন লাগবে, পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে। সেখানে শুধুমাত্র একজন মুক্তিযোদ্ধার অবস্থান জানালে যে অর্থ পাওয়া যেত, তা একজন গ্রাজুয়েটসহ পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সরকারি কর্মকর্তার প্রায় দুই মাসের বেতনের প্রায় কাছাকাছি।

দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধান চাউলের মূল্য হ্রাস’ সংবাদে জানা যায় ‘বর্তমানে নুতন আমন চাউল প্রকারভেদে ৩৫ টাকা হইতে ৩৭ টাকা দরে প্রতি মণ বেচাকেনা হইতেছে।’ সেই হিসাবে মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেপ্তার করা অথবা তাঁদের যাতে নিশ্চিতভাবে ধরা যায় এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে তথ্য দিলে ১৪ মণ আমন চালের সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যেত। আর সর্বোচ্চ ২৭০-২৮৫ মণ চালের সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যেত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার অথবা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীর ধরার জন্য তথ্য দিলে।
অঙ্কের হিসাব যতই বড় হোক, বাস্তবতা ছিল এ ধরনের পুরস্কার ঘোষণা সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। তাই এসব বিজ্ঞপ্তি ইতিহাসে রয়ে গেছে এক ধরনের ব্যর্থ প্রচেষ্টার উদাহরণ হিসেবে। মানুষকে বিভক্ত করার চেষ্টা ছিল, কিন্তু সেটি কার্যকর হয়নি। ইতিহাসবিদদের মতে, এটি ছিল স্বদেশি লোকজনকে নিজের দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে উদ্ধুদ্ধ করার চেষ্টা।

আজ ৮ ডিসেম্বর জন লেননের মৃত্যুদিন। দুনিয়া কাঁপানো ব্যান্ড বিটলস-এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য লেনন ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, চিত্রশিল্পী, লেখক ও শান্তিকর্মী। ‘ইমাজিন’ তাঁর বিখ্যাত গান। এই গানে তিনি কোন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন? কেন গানটি আজও এত প্রাসঙ্গিক?
৩ ঘণ্টা আগে
বর্তমান বিশ্বে সাহসী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যাঁর নাম সবার আগে আসে, তিনি নোম চমস্কি। ৭ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন। একদিকে তিনি আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের স্থপতি, অন্যদিকে শোষিতের পক্ষে দাঁড়ানো এক অকুতোভয় যোদ্ধা। খুঁজে দেখা যাক আধুনিক সময়ের অন্যতম প্রধান চিন্তক ও জনবুদ্ধিজীবী নোম চমস্কির বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম।
৫ ঘণ্টা আগে
শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনাই ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়। যদিও ইতিহাসের পাতায় কচুরিপানা নিয়ে খুব কমই লেখা হয়েছে, কিন্তু কচুরিপানার অবদান অস্বীকার কোনো উপায় নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেবল বারুদ আর রক্তের ইতিহাস নয়। এটি ছিল বাংলার মাটি, জল ও প্রকৃতির এক সম্মিলিত সংগ্রাম।
৬ ঘণ্টা আগে
‘আমরা বর্ষার অপেক্ষায় আছি… তাঁরা পানিকে ভয় পায়, আর আমরা হচ্ছি জলের রাজা। প্রকৃতি হবে আমাদের দ্বিতীয় বাহিনী।’ নিউইয়র্ক টাইমসের খ্যাতিমান সাংবাদিক সিডনি শনবার্গের ‘ডেটলাইন বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছিলেন এক বাঙালি অফিসার।
৬ ঘণ্টা আগে