leadT1ad

এআই ও অর্থনৈতিক কূটনীতিতে এক নতুন যুগের সুচনা

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের সরবরাহ শৃঙ্খল নিশ্চিত করাতে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদের সাথে একটি চুক্তি ঘোষণা করেছে। ছবি: সংগৃহীত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্যাক্স সিলিকা উদ্যোগ চালু করেছে। এ উদ্যোগের লক্ষ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক প্রযুক্তির বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থাকে আধুনিক, শক্তিশালী এবং নিরাপদ করা। বৃহস্পতিবার ঘোষিত এই কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মিত্র দেশগুলোর একটি জোট গঠন করেছে, যা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, সেমিকন্ডাক্টর, উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি এবং এআই অবকাঠামোয় সমন্বিত বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদার করবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর ২০২৫) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অর্থনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জ্যাকব হেলবার্গ, জাপান, ইসরায়েল, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে প্যাক্স সিলিকা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে তারা প্যাক্স সিলিকা ডিক্লারেশন–এ স্বাক্ষর করবেন।

একই দিন পরে, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, ইসরায়েল, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা ওয়াশিংটন ডিসিতে প্যাক্স সিলিকা সম্মেলনে অংশ নেবেন। এ বৈঠককে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ঐকমত্যের সূচনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাই জাতীয় নিরাপত্তা, এবং জাতীয় নিরাপত্তাই অর্থনৈতিক নিরাপত্তার উপাদান।

এই ঘোষণা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের সেই আহ্বানকে এগিয়ে নেবে, যা বেসরকারি বিনিয়োগ, মুক্ত বাজার এবং অর্থনৈতিক শক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা উন্নয়নের নতুন যুগ সূচনা করতে চায়। আরও কয়েকটি দেশ পরবর্তীতে এতে যোগ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্যাক্স সিলিকা একটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক জোট ও অংশীদারত্ব। এর উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তির দেশগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে একত্রিত করা, যাতে নতুন এআই যুগের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ব্যবহার করা যায়। প্রথমবারের মতো দেশগুলো কম্পিউটিং সক্ষমতা, সিলিকন, খনিজ সম্পদ এবং জ্বালানিকে যৌথ কৌশলগত সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে সংগঠিত হচ্ছে।

এটিকে মার্কিন ‘এআই কূটনীতির’ সর্বোত্তম উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে—যেখানে জোট গঠন, বাজার বিন্যাস, এবং জাতীয় স্বার্থ অগ্রসর করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সেক্রেটারি রুবিও অনেক আগেই উপলব্ধি করেছিলেন যে এআই ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক শক্তির মেরুদণ্ড। এ ঘোষণার মাধ্যমে সেই ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া হচ্ছে।

হেলবার্গ বলেন, ‘প্যাক্স সিলিকা এক নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম। এটি এআই অর্থনীতিকে চালিত করে এমন কৌশলগত সম্পদ—কম্পিউটিং ক্ষমতা, সিলিকন, খনিজ এবং জ্বালানিকে কেন্দ্র করে বিশ্বসঙ্গত সহযোগিতা নিশ্চিত করবে। বিশ্বস্ত দেশগুলো যেন বৃহৎ পরিসরে রূপান্তরমূলক প্রযুক্তি তৈরি ও ব্যবহার করতে পারে, এ উদ্যোগ তা নিশ্চিত করবে।’

‘প্যাক্স সিলিকা’ নামটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ প্যাক্স অর্থাৎ শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং সিলিকা থেকে, যা সিলিকনে পরিশোধিত হয়ে কম্পিউটার চিপের মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই নামকরণ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়—যেখানে ‘এআই কূটনীতি’কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

হেলবার্গ বলেন, ‘এআই বিশ্ব অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করছে। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক মূল্য এআই সরবরাহব্যবস্থার ওপর আরও নির্ভরশীল হবে। তাই আমাদের একটি টেকসই ও উদ্ভাবন-চালিত ইকোসিস্টেম গড়তে হবে, যা আমাদের যৌথ মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে।’

প্যাক্স সিলিকা উদ্যোগটি এমন সময়ে গৃহীত হলো যখন বহু দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীরতর অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চায়। এ উদ্যোগ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৃহত্তর কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার লক্ষ্য হলো চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিকল্প একটি উন্নয়ন মডেল গড়ে তোলা। এ ঘোষণায় বিরল খনিজ ও সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে চীনের প্রাধান্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

ভবিষ্যতে খনিজ পরিশোধন, সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন এবং এআই হার্ডওয়্যার স্থাপনে যৌথ প্রকল্প শুরু হতে পারে। হেলবার্গ বলেন, ‘অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এখন জাতীয় নিরাপত্তারই অংশ। প্যাক্স সিলিকা সেই নিরাপত্তা যা আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত