leadT1ad

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা পূর্বপরিকল্পিত, ধারণা পুলিশের

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা পূর্বপরিকল্পিত বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। নৃশংসতা ও খুনির প্রস্তুতি বিশ্লেষণ করে এমন কথা জানিয়েছেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ডিবির ওই কর্মকর্তা স্ট্রিমকে বলেন, ‘খুনের মোটিভ যাই থাকুক, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ খুন করার জন্য মেয়েটি (গৃহকর্মী) তার আসল নামপরিচয় গোপন করেছে। যতবার ওই বাসায় ঢুকেছে প্রত্যেকবারই বোরকা পরে ছিল। তার ফেস (চেহারা) ভবনের কেউ দেখতে পাননি। তার ফোন নম্বরের সঙ্গে লায়লা আফরোজের (নিহত গৃহকর্ত্রী) কথাবার্তা ছাড়া আর কারও সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়নি।’

এর আগে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুর শাহজাহান রোডের নিজ বাসায় খুন হন গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। এ ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন ওই বাসায় মাত্র চারদিন আগে কাজে যোগ দেওয়া আয়েশা নামের গৃহকর্মী।

মা-মেয়েকে অনেকটা ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, নিহত দুজনের গলায় ও শরীরে গভীর ক্ষত রয়েছে। এ ছাড়া তাদের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজন গৃহকর্মী বাইরে থেকে ছুরি এনেছিলেন। এ ছাড়া দুজনকে হত্যার পর ওই নারী বাথরুমে গোসলও সেরেছেন। পরে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বেরিয়ে যায়।

ভবনটির সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই গৃহকর্মীর পালানোর দৃশ্য দেখে বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। সাধারণ গৃহকর্মীরা যেভাবে হাঁটেন ওই নারীর ভঙ্গি তেমন নয়। তাদের ধারণা, কাজে যোগ দিয়ে প্রথম তিনদিন চারপাশ পর্যবেক্ষণ করেছে, এরপর চতুর্থ দিনে খুন করেছে।

এদিকে এ ঘটনায় সোমবার রাতেই মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন লায়লা আফরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, কথিত গৃহকর্মী আয়েশা কাজ করতে সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে তাঁর বাসায় ঢোকেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তাঁর মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বের হন। তার কাঁধে ছিল নাফিসার ব্যাগ। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ওই গৃহকর্মী মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, কিছু স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে।

বাসার দামি জিনিসপত্র লুট করতে ওই নারী গৃহকর্মীর ছদ্মবেশ নিতে পারেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার মহিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক তদন্তে লুণ্ঠনের তথ্য এসেছে। তবে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।

এখনও অধরা সেই ছদ্মবেশী গৃহকর্মী

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনে জড়িত নারীকে গ্রেপ্তারে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার অন্তত ১২টি টিম মাঠে কাজ করছে। ওই নারীর সঙ্গে অন্য কেউ থাকতে পারে। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে।

তবে মূল সমস্যা ওই গৃহকর্মীর পরিচয় সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, মেয়েটির মোবাইল ফোনের নম্বর কেউ জানেন না। তার কোনো পরিচয়পত্র নেই। কোথায় থাকেন তাও পাওয়া যায়নি।

কোনো তথ্য জানাতে পারেননি ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী থেকে বাসিন্দাদের কেউই। ইয়াসিন নামে ভবনটির এক নিরাপত্তাকর্মী আজ স্ট্রিমকে বলেন, ‘মেয়েটি মুখ ঢেকে বের হয়ে যায়। তখন আমার সন্দেহ হলে তাকে আবার ডাক দেই। জিজ্ঞাসা করি, কোন বাসা থেকে এসেছেন। তখন মেয়েটি বলে আমি সেভেন’বি এর মেহমান। দুদিন ধরে এসেছি।’

ওই নারীর নিয়োগে মধ্যস্থতাকারী নিরাপত্তাকর্মী মো. খালেক পুলিশকে জানিয়েছেন, ‘ম্যাডামের (লায়লা আফরোজ) বাসায় কাজের বুয়া ছিল না। আমাকে বলেছিলেন কাজের বুয়ার জন্য। মেয়েটি কাজ করার জন্য আমাকে বললে আমি ওই বাসায় ইন্টারকমে ফোন দিয়ে পাঠিয়ে দেই। তারপর থেকে আমার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না।’

ভবনের অষ্টম তলার বাসিন্দা আহসান-স্মরণিকা দম্পতি স্ট্রিমকে জানায়, ‘আমরাও আশপাশে থাকা ছুটা বুয়াদের দিয়ে কাজ করাই। ওরা বেশিরভাগই ক্যাম্পে (জেনেভা ক্যাম্প) থাকে। যে মেয়েটি বুয়ার কাজের জন্য এসেছিল, সেও বলেছিল ক্যাম্পে থাকে। কিন্তু এই ঘটনা ঘটিয়ে যাবে, কে জানে!’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত