leadT1ad

আমদানী নিষিদ্ধ ই-সিগারেট পণ্যের প্রসার ও নিকোটিন পাউচ কারখানার অনুমোদন উদ্বেগজনক

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৭
সংগৃহীত ছবি

দেশে ই-সিগারেট, ভেপ এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ হলেও বাজারে সেগুলোর উপস্থিতি উদ্বেগজনক। বুধবার বনানীতে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) আয়োজিত ‘নিকোটিন পাউচ ও ই-সিগারেট: বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ ও করণী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সম্প্রতি টিসিআরসি পরিচালিত এক গবেষনায় ৮টি বিভাগীয় শহরের ৩৬০টি এলাকায় ৩২৬টি দোকানে ই-সিগারেট বিক্রির তথ্য উঠে এসেছে। শনাক্ত করা দোকানের ৭৫% ঢাকায় অবস্থিত। বিনিয়োগের নামে নিকোটিন পাউচ উৎপাদন কারখানা অনুমোদন দেশে বিদ্যমান তামাক আসক্তির হার, মৃত্যু ও ক্ষয়-ক্ষতি বৃদ্ধি করবে। জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে, ভবিষ্যত প্রজন্ম রক্ষায় নিকোটিন পাউচের কারখানা অনুমোদন বাতিল, ই-সিগারেটের অবৈধ আমদানী, বিপণন বন্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ হেলাল আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার সভাপতি অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মো. শফিকুল ইসলাম, আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, গবেষক আমিনুল ইসলাম বকুল, ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ প্রমুখ। টিসিআরসি’র প্রকল্প পরিচালক মো. বজলুর রহমান এর সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মো. জুলহাস আহমেদ।

গবেষণা তথ্যনির্ভর প্রবন্ধে মো. জুলহাস আহমেদ বলেন, ই-সিগারেটের বাজারটি স্পষ্টভাবে ঢাকাকেন্দ্রিক। মোট শনাক্ত বিক্রয়স্থানের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই ঢাকায় অবস্থিত। রাজধানীতে ই-সিগারেটের বিশেষায়িত দোকানের সংখ্যা ১৩৫টি, যেখানে শুধুমাত্র ই-সিগারেট ও ই-সিগারেট-সংক্রান্ত ডিভাইস বিক্রি করা হয়। বিপরীতে, ঢাকার বাইরে এ ধরনের বিশেষায়িত দোকানের সংখ্যা মাত্র ১৯টি, যা মোটের প্রায় ৬ শতাংশ। এছাড়া ই-সিগারেট শুধু বিশেষায়িত দোকানেই নয়, ঘড়ি ও চশমা, বেল্ট ও মানিব্যাগ, কসমেটিকস এবং বিভিন্ন আনুষঙ্গিক পণ্যের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাইরে এই ধরনের অন্যান্য দোকানে ই-সিগারেট বিক্রির উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে সীমিত- মাত্র ৫৭টি ক্ষেত্রে, যা মোট অন্যান্য দোকানের প্রায় ১৯ শতাংশ। চট্টগ্রামে কিছুটা উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও (৩০টি), অবশিষ্ট ছয়টি বিভাগীয় শহরে ই-সিগারেটের দোকানের সংখ্যা অত্যন্ত কম, অনেক ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। গবেষণায় দেখা যায়, ই-সিগারেট ক্রেতাদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যা মোট ক্রেতার প্রায় ৯৮ শতাংশ। প্রায় সব দোকানেই ই-সিগারেটের ডিভাইস, ই-লিকুইড এবং নানা ধরনের ফ্লেভারের জুস পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ‘ফল’ ও ‘আইস’ ফ্লেভারের ই-লিকুইড সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে, যা তরুণদের লক্ষ্য করে বাজারজাতকরণের প্রবণতাকে স্পষ্ট করে তোলে।

জুলহাস আহমেদ আরো বলেন টিসিআরসি পরিচালিত নিকোটিন পাউচের প্রাপ্যতা পর্যবেক্ষণ গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরের কোনো দোকানে নিকোটিন পাউচ বিক্রি হয়না; অনলাইনে মাত্র তিনটি প্ল্যাটফর্মে এর বিক্রির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। নিকোটিন পাউচে নিকোটিনসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ই-সিগারেটের মতো এই ক্ষতিকর পণ্যকেও অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। আপিলেট ডিভিশনের নির্দেশনার প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের জন্য দেওয়া অনুমোদন দ্রুত বাতিল করতে হবে।

অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, জনস্বার্থে গৃহিত পদক্ষেপসমূহের পক্ষে চাপ বৃদ্ধি করতে হবে। ই-সিগারেট নিষিদ্ধে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এ উদ্যোগ একটি ইতিবাচক ও অত্যন্ত প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। আপিলেট ডিভিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে নিকোটিন পাউচও নিষিদ্ধ করতে হবে।

ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ বলেন, বেজা কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করে নিকোটিন পাউচ কারখানা অনুমোদ দিয়েছে। বিনিয়োগ ও উন্নয়নের নাম করে এ ধরনের অনৈতিক কাজ মানুষের সুস্থ্যভাবে বাঁচার অধিকার খর্ব করে। এই অবৈধ অনুমোদনের বিরুদ্ধে বর্তমানে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।

অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, তামাকের ভয়ানক ক্ষতি সম্পর্কে মানুষ সচেতন হচ্ছে, ঠিক এমন সময়ে তামাক কোম্পানি নতুন মৃত্যুপণ্য আনছে, যা কৌশলে কিশোর-তরুণদের মধ্যে পরিচিত করানো হচ্ছে। কিশোর-তরুণদের মস্তিস্ক ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মস্তিস্ক পরিপূর্ণ গঠনে ২৬ বছর সময় লাগে। অথচ, তামাক কোম্পানিগুলো আমাদের সন্তানদের অপরিণত মস্তিস্ক ধ্বংসে উঠেপড়ে লেগেছে।

সভাপতির বক্তব্যে হেলাল আহমেদ বলেন, সরকার তামাকসহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, অন্যদিকে সরকারেরই একটি সংস্থা বিদেশি কোম্পানিকে নেশাজাত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য দেশে আনতে চাচ্ছে এই দ্বিমুখী অবস্থান জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থের জন্য অগ্রহণযোগ্য। পাশাপাশি ই-সিাগরেট বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তিনি।

বিষয়:

Ad 300x250

সম্পর্কিত