leadT1ad

তারেক রহমানের ফেরাকে ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে বর্ণনা আল-জাজিরায়

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

বৃহস্পতিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: আল-জাজিরা/এপি।

কাতারভিত্তিক প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকে একটি ঐতিহাসিক ও প্রতীকী রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। প্রায় ১৭ বছর লন্ডনে নির্বাসনে থাকার পর বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর ২০২৫) তাঁর দেশে ফেরা নিয়ে সংবাদমাধ্যমটি একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই ঘটনাকে তারেক রহমান ও বিএনপির রাজনীতির জন্য এক ধরনের বিজয়ী প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক রূপান্তরের বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও তুলে ধরা হয়েছে।

আল জাজিরা বারবার এই প্রত্যাবর্তনকে ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ এবং ‘নির্ধারণী মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যাপক জনসমাগমের আয়োজন করা হয়। বিমানবন্দর ও ঢাকার বিভিন্ন সড়কে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতির কথা উঠে আসে। প্রকাশিত ছবি ও বর্ণনায় দেখা যায়, তারেক রহমান জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এতে পুরো আয়োজনের উৎসবমুখর পরিবেশ স্পষ্ট হয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র এবং বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিএনপি নতুন করে রাজনৈতিক শক্তি ফিরে পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দলের প্রধানমন্ত্রী পদে শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে তারেক রহমানের নির্বাসনের প্রেক্ষাপটও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, ২০০৮ সালে তিনি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়নের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রসহ একাধিক মামলায় দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের পর আদালত এসব রায় বাতিল করেন। এর ফলে তাঁর দেশে ফেরার আইনি বাধা দূর হয়।

আল জাজিরা এই বিষয়গুলো তথ্যভিত্তিকভাবে তুলে ধরেছে এবং পুরোনো অভিযোগগুলোকে তাঁর রাজনৈতিক যোগ্যতার প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখায়নি।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু বিএনপির মধ্যেই নয়, নতুন রাজনৈতিক শক্তির কাছেও প্রতীকী গুরুত্ব বহন করছে। শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) তাঁর দেশে ফেরাকে স্বাগত জানিয়েছে। দলটির এক মুখপাত্র বলেন, চরম চাপ ও হুমকির মুখে তাকে নির্বাসনে যেতে হয়েছিল। সে কারণে তাঁর প্রত্যাবর্তন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তারা মনে করছে, তাঁর আগমন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আরও উদ্দীপ্ত করবে।

তবে আল জাজিরার প্রতিবেদনে কিছু সতর্কতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন দেশের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত অস্থির ও অনিশ্চিত। প্রতিবেদনে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, গণমাধ্যমে হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরা হয়েছে।

আল জাজিরা মনে করছে, আসন্ন নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক বৈধতা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে কতটা সফল হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। বর্তমানে বিভক্ত হয়ে পড়া দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে তারেক রহমান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তারেক রহমান দেশের ভেতরে কিছুটা হলেও ঐক্য ফেরাতে সক্ষম হতে পারেন। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস, বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত মাত্রায় আইনশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারেননি।

আর এর একটি বড় কারণ, আগের সরকারের অনেক প্রভাব এখনো নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের ভেতরে রয়ে গেছে। এসব অবশিষ্ট প্রভাবের কারণে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা কেবল রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত দিক থেকেও জরুরি হয়ে উঠেছে। তাঁর মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কয়েক মাস ধরে গুরুতর অসুস্থ। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া পালাক্রমে দেশ শাসন করেছেন। সেই অধ্যায়ের আপাতত অবসান ঘটেছে।

আল জাজিরা জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের ডিসেম্বরে করা এক জরিপে বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি সংসদে সবচেয়ে বেশি আসন পেতে পারে। এই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। দলটি অস্থিরতার হুমকি দিয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ভোট আয়োজন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই বাংলাদেশ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। সরকার অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে হামলা এবং বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বিএনপি ও দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ধারণী মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের ভঙ্গুর রাজনৈতিক রূপান্তরের একটি বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সব মিলিয়ে আল জাজিরার উপস্থাপনায় তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতির পুনরুত্থান এবং সম্ভাব্য গণতান্ত্রিক নবযাত্রার প্রতীকী দিকটি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত