আতাউর রহমান রাইহান

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন সংকটে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেড় বছর ধরেই চলছে টানাপড়েন। বাংলাদেশের দিক থেকে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা থাকলেও, ভারতের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া মেলেনি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
তাদের দাবি, দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক এত তলানিতে আগে কখনো যায়নি। এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা মেনে নিয়ে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতকেই সদিচ্ছা দেখাতে হবে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেছেন, গেল বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক খুব যে সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল, তা বলার অবকাশ নেই। বর্তমান সময়েও খুব একটা ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে হুমকি দেওয়া এবং সেটাকে মিডিয়া গুজব বলে চালানো বুদ্ধিমানের মতো কাজ নয় ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্য। আবার বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন ঘিরে যে নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য কোনো বিষয় নয়।
তিনি বলেন, অতীতে বাংলাদেশের কনস্যুলেটে আঘাত এসেছে। আগরতলা, গৌহাটিতে এবং এই ধরনের আঘাতের পুনরাবৃত্তি আমরা আবার দেখতে পেয়েছি। আমার মনে হয়, দুদেশেরই এখন উচিত হবে বিষয়গুলো কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা। এর বাইরে তো আর কিছু নেই।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান টানাপড়েনকে বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিতে বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তাঁর বক্তব্যের বিষয়ে সাহাব এনাম বলেন, আমার মনে হয়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কারণ এই টানাপড়েনের সূত্র বাংলাদেশের সৃষ্টি করা নয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে যে পরিবর্তন ঘটুক এবং ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক, তার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সরকারে যারা আসবে, কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে সম্পর্ক রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা রাজনীতিতে অমূলক, অবাস্তব ধরনের কোনো সম্পর্ক কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। সেদিক থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট সাহসী ভূমিকা নিয়েছে। এখন আশা করা যায়, ভারতও তার পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেসবের সমাধান করবে।
চাপে রেখে স্বার্থ আদায়ে মরিয়া ভারত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলেন, ‘দুদেশের সম্পর্কে যে খারাপ অবস্থা চলছে, এটা ভারতের দিক থেকে করা হচ্ছে। ভারতীয়রা কেন এটা চাচ্ছে, সেই ব্যাখ্যা তারা দিতে পারবে। আমার ব্যাখ্যা, বাংলাদেশকে সব সময় চাপে রেখে ভারত স্বার্থ আদায় করতে চায়। এটা তাদের অনেক পুরোনো মনোভাব।
কেবল বর্তমান সময়ে নয়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও এমন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত ক্রমাগত বাংলাদেশকে চাপে রেখে তার স্বার্থ আদায় করেছে। দুদেশের সুসম্পর্কের স্বর্ণযুগ বলে খ্যাত গেল ১৭ বছরে ভারত একতরফাভাবে আমাদের কাছ থেকে নিয়েছে, আমাদের কিছুই দেয়নি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, এই প্রবণতা শুরু হয়েছে ১৯৭১ বা ’৭২ সাল থেকেই। অনেক পজিটিভ নোটে আমাদের সম্পর্কের সূচনা হয়েছে। কিন্তু ভারতের অ্যাপ্রোচ (মনোভাব) ছিল ভিন্ন। ভারতের এই মনোভাব নেপালের প্রতি নয়, পাকিস্তানের প্রতি তো প্রশ্নই আসে না। গত দেড় বছরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া মেলেনি।
তিনি বলেন, এর আগে কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশন আক্রান্ত হয়েছিল। তখন আমাদের এখান থেকে প্রতিবাদ গেলে ভারতও দুঃখপ্রকাশ করেছিল। এরপরেই কিন্তু আবার আপনি দেখেন গৌহাটিতে আমাদের ডেপুটি হাইকমিশন আক্রান্ত হয়েছে। ভিডিওতে আমরা সবাই দেখেছি, ওটা ভারত করতে দিয়েছে, সুস্পষ্ট অবহেলা ছিল ভারতের দিক থেকে।
ওবায়দুল হক আরও বলেন, আজ যে জায়গায় এসেছি, আপনি যদি দেখেন ক্রমাগত বাংলাদেশের দিক থেকে পজিটিভ সাইনস (ইতিবাচক আভাস) দেওয়া হয়েছে। আমরা সম্পর্কের বরফ গলাতে চেষ্টা করলেও ভারতের কাছ থেকে সাড়া মিলছে না।
যেভাবে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিসা ও বাণিজ্যে কড়াকড়ি আরোপ করে ভারত। অন্যদিকে ঢাকাও স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয়। শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান ও সেখান থেকে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা বারবার আপত্তি জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দুবার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে এখনই ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা কম।
এদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে একদল মানুষ বিক্ষোভ দেখায়, সে সময় মিশনে ঢিল ছোড়াও হয়।
এরপর চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক) কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে ১৮ ডিসেম্বর রাতেই ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভালুকার একটি কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এরপর ২০ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’ নামের সংগঠনের ২০-২৫ সদস্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে। তারা সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকি দেয়। পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ২১ ডিসেম্বর বিবৃতিতে বিষয়টিকে ‘বিভ্রান্তিকর প্রপাগান্ডা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
ভারতের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ২২ ডিসেম্বর বলেন, দিল্লিতে কূটনৈতিক এলাকার গভীরে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের সামনে ‘হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনের বিক্ষোভকারীদের আসার সুযোগ করে করে দেওয়া’ হয়েছে।
এরপর ২২ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে হামলা চালায় হিন্দুত্ববাদী তিনটি সংগঠন। এরপর ভিসা কেন্দ্রটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। সঙ্গে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এমন টানাপড়েনের মধ্যে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লিতে আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। নয়াদিল্লির চাণক্যপুরী নামে খ্যাত কূটনৈতিক এলাকার গভীরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। ঘোষণা দিয়ে এসে সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনীর তিন স্তর ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে উগ্রপন্থী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল ও বাম দলের নেতাকর্মীরা।
দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে এগোতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়। এক পর্যায়ে জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
গণঅভ্যুত্থানের পর এক ভিন্ন বাংলাদেশ
গেল ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর যে বাংলাদেশ দেখছি, সেটা ভিন্ন উল্লেখ করেছেন ঢাবি শিক্ষক ওবায়দুল হক। তিনি বলেন, এখানে বুঝতে হবে, ৫ আগস্টের পরে এটা একটা ভিন্ন বাংলাদেশ। এটা তো আগের বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশে এখন যে ন্যারেটিভ (বয়ান) প্রভাব বিস্তার করে ভারত সম্পর্কে, সে সম্পর্কে দেশটি ভালোই অবগত। ভারত স্বেচ্ছায়, খুব ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে সেই বয়ানের জবাব দিতে চেয়েছে, যেটা ব্যাকফায়ার (পাল্টা প্রতিক্রিয়া) করেছে।
তিনি বলেন, এটা হঠাৎ করে ঘটেনি। আমাকে ভবিষ্যৎবাণী করতে বলেন, আমি দেখছি যে এই সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যাবে। এমনকি নির্বাচনের পরবর্তী যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারপরেও সম্পর্কের উন্নয়ন সহসাই হবে না। আমি মনে করি দায় পুরো ভারতের।’
সম্পর্কের টানাপড়েন কারও জন্যই ভালো নয় মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘এখান থেকে এই সম্পর্ক ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এজন্য ভারতকে সদিচ্ছা দেখাতে হবে।’
দুই দেশের সম্পর্ককে খুবই তিক্ত উল্লেখ করে গবেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এ দেশের একদল লোক তারা ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায়। তারা ভারত ভাঙতে চায়। ভারতেও একদল লোক আছে, যারা বাংলাদেশের প্রতি খুব বিরূপ। পারলে দখল করে নেয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এতটা তলানিতে আগে কখনো যায়নি। যারা এই সম্পর্ক নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে, তাদের ভিন্ন মতলব রয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন সংকটে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেড় বছর ধরেই চলছে টানাপড়েন। বাংলাদেশের দিক থেকে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা থাকলেও, ভারতের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া মেলেনি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
তাদের দাবি, দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক এত তলানিতে আগে কখনো যায়নি। এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা মেনে নিয়ে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতকেই সদিচ্ছা দেখাতে হবে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেছেন, গেল বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক খুব যে সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল, তা বলার অবকাশ নেই। বর্তমান সময়েও খুব একটা ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে হুমকি দেওয়া এবং সেটাকে মিডিয়া গুজব বলে চালানো বুদ্ধিমানের মতো কাজ নয় ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্য। আবার বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন ঘিরে যে নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য কোনো বিষয় নয়।
তিনি বলেন, অতীতে বাংলাদেশের কনস্যুলেটে আঘাত এসেছে। আগরতলা, গৌহাটিতে এবং এই ধরনের আঘাতের পুনরাবৃত্তি আমরা আবার দেখতে পেয়েছি। আমার মনে হয়, দুদেশেরই এখন উচিত হবে বিষয়গুলো কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা। এর বাইরে তো আর কিছু নেই।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান টানাপড়েনকে বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিতে বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তাঁর বক্তব্যের বিষয়ে সাহাব এনাম বলেন, আমার মনে হয়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কারণ এই টানাপড়েনের সূত্র বাংলাদেশের সৃষ্টি করা নয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে যে পরিবর্তন ঘটুক এবং ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক, তার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সরকারে যারা আসবে, কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে সম্পর্ক রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা রাজনীতিতে অমূলক, অবাস্তব ধরনের কোনো সম্পর্ক কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। সেদিক থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট সাহসী ভূমিকা নিয়েছে। এখন আশা করা যায়, ভারতও তার পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেসবের সমাধান করবে।
চাপে রেখে স্বার্থ আদায়ে মরিয়া ভারত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলেন, ‘দুদেশের সম্পর্কে যে খারাপ অবস্থা চলছে, এটা ভারতের দিক থেকে করা হচ্ছে। ভারতীয়রা কেন এটা চাচ্ছে, সেই ব্যাখ্যা তারা দিতে পারবে। আমার ব্যাখ্যা, বাংলাদেশকে সব সময় চাপে রেখে ভারত স্বার্থ আদায় করতে চায়। এটা তাদের অনেক পুরোনো মনোভাব।
কেবল বর্তমান সময়ে নয়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও এমন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত ক্রমাগত বাংলাদেশকে চাপে রেখে তার স্বার্থ আদায় করেছে। দুদেশের সুসম্পর্কের স্বর্ণযুগ বলে খ্যাত গেল ১৭ বছরে ভারত একতরফাভাবে আমাদের কাছ থেকে নিয়েছে, আমাদের কিছুই দেয়নি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, এই প্রবণতা শুরু হয়েছে ১৯৭১ বা ’৭২ সাল থেকেই। অনেক পজিটিভ নোটে আমাদের সম্পর্কের সূচনা হয়েছে। কিন্তু ভারতের অ্যাপ্রোচ (মনোভাব) ছিল ভিন্ন। ভারতের এই মনোভাব নেপালের প্রতি নয়, পাকিস্তানের প্রতি তো প্রশ্নই আসে না। গত দেড় বছরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া মেলেনি।
তিনি বলেন, এর আগে কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশন আক্রান্ত হয়েছিল। তখন আমাদের এখান থেকে প্রতিবাদ গেলে ভারতও দুঃখপ্রকাশ করেছিল। এরপরেই কিন্তু আবার আপনি দেখেন গৌহাটিতে আমাদের ডেপুটি হাইকমিশন আক্রান্ত হয়েছে। ভিডিওতে আমরা সবাই দেখেছি, ওটা ভারত করতে দিয়েছে, সুস্পষ্ট অবহেলা ছিল ভারতের দিক থেকে।
ওবায়দুল হক আরও বলেন, আজ যে জায়গায় এসেছি, আপনি যদি দেখেন ক্রমাগত বাংলাদেশের দিক থেকে পজিটিভ সাইনস (ইতিবাচক আভাস) দেওয়া হয়েছে। আমরা সম্পর্কের বরফ গলাতে চেষ্টা করলেও ভারতের কাছ থেকে সাড়া মিলছে না।
যেভাবে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিসা ও বাণিজ্যে কড়াকড়ি আরোপ করে ভারত। অন্যদিকে ঢাকাও স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয়। শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান ও সেখান থেকে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা বারবার আপত্তি জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দুবার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে এখনই ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা কম।
এদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে একদল মানুষ বিক্ষোভ দেখায়, সে সময় মিশনে ঢিল ছোড়াও হয়।
এরপর চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক) কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে ১৮ ডিসেম্বর রাতেই ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভালুকার একটি কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এরপর ২০ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’ নামের সংগঠনের ২০-২৫ সদস্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে। তারা সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকি দেয়। পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ২১ ডিসেম্বর বিবৃতিতে বিষয়টিকে ‘বিভ্রান্তিকর প্রপাগান্ডা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
ভারতের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ২২ ডিসেম্বর বলেন, দিল্লিতে কূটনৈতিক এলাকার গভীরে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের সামনে ‘হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনের বিক্ষোভকারীদের আসার সুযোগ করে করে দেওয়া’ হয়েছে।
এরপর ২২ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে হামলা চালায় হিন্দুত্ববাদী তিনটি সংগঠন। এরপর ভিসা কেন্দ্রটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। সঙ্গে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এমন টানাপড়েনের মধ্যে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লিতে আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। নয়াদিল্লির চাণক্যপুরী নামে খ্যাত কূটনৈতিক এলাকার গভীরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। ঘোষণা দিয়ে এসে সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনীর তিন স্তর ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে উগ্রপন্থী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল ও বাম দলের নেতাকর্মীরা।
দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে এগোতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়। এক পর্যায়ে জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
গণঅভ্যুত্থানের পর এক ভিন্ন বাংলাদেশ
গেল ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর যে বাংলাদেশ দেখছি, সেটা ভিন্ন উল্লেখ করেছেন ঢাবি শিক্ষক ওবায়দুল হক। তিনি বলেন, এখানে বুঝতে হবে, ৫ আগস্টের পরে এটা একটা ভিন্ন বাংলাদেশ। এটা তো আগের বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশে এখন যে ন্যারেটিভ (বয়ান) প্রভাব বিস্তার করে ভারত সম্পর্কে, সে সম্পর্কে দেশটি ভালোই অবগত। ভারত স্বেচ্ছায়, খুব ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে সেই বয়ানের জবাব দিতে চেয়েছে, যেটা ব্যাকফায়ার (পাল্টা প্রতিক্রিয়া) করেছে।
তিনি বলেন, এটা হঠাৎ করে ঘটেনি। আমাকে ভবিষ্যৎবাণী করতে বলেন, আমি দেখছি যে এই সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যাবে। এমনকি নির্বাচনের পরবর্তী যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারপরেও সম্পর্কের উন্নয়ন সহসাই হবে না। আমি মনে করি দায় পুরো ভারতের।’
সম্পর্কের টানাপড়েন কারও জন্যই ভালো নয় মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘এখান থেকে এই সম্পর্ক ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এজন্য ভারতকে সদিচ্ছা দেখাতে হবে।’
দুই দেশের সম্পর্ককে খুবই তিক্ত উল্লেখ করে গবেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এ দেশের একদল লোক তারা ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায়। তারা ভারত ভাঙতে চায়। ভারতেও একদল লোক আছে, যারা বাংলাদেশের প্রতি খুব বিরূপ। পারলে দখল করে নেয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এতটা তলানিতে আগে কখনো যায়নি। যারা এই সম্পর্ক নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে, তাদের ভিন্ন মতলব রয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাঁকে বহনকারী বিমানটি ঢাকায় অবতরণ করে।
১৮ মিনিট আগে
গাজীপুরের টঙ্গীতে অভিযান চালিয়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচিত তাহরিমা জান্নাত সুরভী (২১) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে টঙ্গী পূর্ব থানার গোপালপুর টেকপাড়া এলাকার নিজ বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর এক আবেগঘন পরিবেশে তাঁকে বরণ করে নেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগে
১৭ বছর পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে গুলশানে জড়ো হতে শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হচ্ছেন।
৩ ঘণ্টা আগে