সহুল আহমদ

বিগত এক বছর যাবত দেখলাম, পাহাড় নিয়ে যাবতীয় আলাপ আলোচনা দিনশেষে ‘ইন্ধন’-এর ষড়যন্ত্রতত্ত্বের মধ্যে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। এমনকি সাম্প্রতিক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তি, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিদ্বৎসমাজের বৃহদাংশ—সবার সুর একই বিন্দুতে এসে মিলেছে। সেখানে কী হচ্ছে বা কী হলো অথবা কেন তিনজনের প্রাণ হারাতে হলো—এসব প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে ‘ফ্যাসিস্ট/ভারতের ইন্ধনে’র প্রশ্নটাই প্রধান হয়ে দেখা দিলো।
পাহাড় প্রশ্নে বাংলাদেশে ‘জাতীয়তাবাদ’ যে সবচেয়ে প্রকট আকারে হাজির হয়, তার আরেকপ্রস্থ নজিরও দেখা গেল। সঙ্গে আর্মি বা সেনাপ্রীতিও। সেনাবাহিনী নিয়ে আমাদের কেউ কেউ যতই বিরূপ মন্তব্য করুক না কেন, তারা যখন আমাদের ‘প্রত্যাশিত জাতীয়তাবাদ’ অনুযায়ী কাজ করে, তখন তাকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলে ভাবতেই পছন্দ করি আমরা।
‘ধর্ষণ’-এর ঘটনাকে ‘ভুয়া’ সাব্যস্থ করার বিষয়ে গুজবকুলশিরোমনি ইলিয়াস সাহেব থেকে শুরু থেকে এনসিপির হান্নান মাসুদ সাহেব (যদিও তিনি পরে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন) পর্যন্ত যে ঐক্যমত দেখালেন—এটিকে আমাদের জনপ্রিয় সাইকি বা মনস্তত্ত্বে ‘পাহাড়’ কীভাবে কাজ করছে, তার নজির হিসেবেও দেখা যেতে পারে। অবশ্য বিএনপির হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সাহেব আবার আরেক কাঠি সরেস। তিনি পাহাড়ে চলমান সেটেলার-পাহাড়ি দ্বন্দ্বের ‘দায়’কে প্রশংসা হিসাবে সম্প্রতি প্রকাশ করে বলেছেন, ‘পাহাড়ে আবার পুরাতন খেলা শুরু হয়েছে। জিয়াউর রহমান পাহাড়ে বাঙালি পাঠানোর কারণেই এখন জনসংখ্যার হার সমান হয়েছে। সেজন্যই এখন ভারতের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারছে না তারা।’
শুধু তাই নয়, হাফিজ সাহেব আরও বলেছেন, বাঙালিদের পাঠিয়ে জনসংখ্যার হার সমান না করলে পাহাড়িরা (কয়েকটা খবর দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, হাফিজ সাহেব এখানে ‘তারা’ বলতে পাহাড়িদেরই বুঝিয়েছেন) ভারতের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফেলত। তাঁর এই বক্তব্য যে যথেষ্ট ‘অপমানজনক’, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, পাহাড় প্রশ্নে এই ‘সার্বভৌমত্ববাদী’ আলাপের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিগত দেড় দশকের বক্তব্যের এক বিন্দু ফারাক নেই। আওয়ামী লীগ আমলে পাহাড়ে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটলে আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা ছাড়া বাকিরা অন্তত ‘ইন্ধন’-এর অনুসন্ধান না করে সরাসরি সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে পারতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ শাসন ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর পাহাড় প্রশ্নে এখন সবার সুর আসলে ‘সার্বভৌমত্ববাদী’। সবাই ‘ইন্ধন’-এর সন্ধানে এতোই ব্যস্ত যে পাহাড়ে যে কোনো ক্রাইসিস বা সমস্যা ও সংকট থাকতে পারে, সেই আলাপ বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে।
যখন আপনার রাষ্ট্রের ভেতরে এই ধরনের সমস্যা ও সংকট থাকে, তখন এজেন্সি থেকে শুরু করে নানান পক্ষই একে নিজেদের মতো কাজে লাগানোর চেষ্টা করে; করেও থাকে। এর অজস্র নজির ও ভাষ্য আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। কিন্তু তাই বলে ‘সমস্যা’র স্বীকৃতি না দিয়ে উল্টো সবকিছুকে ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিলেও সমস্যাটা উধাও হয়ে যায় না; বরং প্রকটই হতে থাকে।
একদিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের এক্সক্লুশনারি রাজনীতি এবং এর মতাদর্শিক ভিত্তি নিয়ে বহু আলাপ-আলোচনা চলছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ যে নিজেকে ইনক্লুসিভ দেখাতে চায়, সেখানেও ‘সার্বভৌমত্ববাদী’ আলাপ কতটা এক্সক্লুশনারি আকার ধারণ করতে পারে, তা হাফিজ সাহেবের উক্তির মধ্য দিয়েই বোঝা সম্ভব। সব মিলিয়ে পাহাড় প্রশ্নে পুরো মেইনস্ট্রিম যেন একাট্টা।
স্বাধীন বাংলাদেশ পঞ্চাশের বেশি বছর পার করে এলেও এবং অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর তুমুল উত্থান-পতন হলেও পাহাড় নিয়ে আমাদের মূলধারার অবস্থান আসলে হেরফের হয়নি খুব একটা। হুমায়ূন আজাদ যে ভাষায় পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে লিখেছিলেন, তাঁকে যারা ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচনা করেন, তাঁরাও অন্তত এই একটা কাজে আজাদকে মান্য করতে পারেন, করেনও। ‘জাতীয়তাবাদ’ যে রূপই ধারণ করুক না কেন, সেটা দিনশেষে এক্সক্লুশনারি হয়ে ওঠে, তারও প্রমাণ পাহাড় থেকে পাওয়া যায়।
শেষে বলি, বাংলাদেশ যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, আর কিছু না হোক, কোনো যদি-তবে-কিন্তু না রেখে এই মৃত্যুর নিন্দা জানাতে পারতে হবে।
লেখক: গবেষক

বিগত এক বছর যাবত দেখলাম, পাহাড় নিয়ে যাবতীয় আলাপ আলোচনা দিনশেষে ‘ইন্ধন’-এর ষড়যন্ত্রতত্ত্বের মধ্যে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। এমনকি সাম্প্রতিক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তি, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিদ্বৎসমাজের বৃহদাংশ—সবার সুর একই বিন্দুতে এসে মিলেছে। সেখানে কী হচ্ছে বা কী হলো অথবা কেন তিনজনের প্রাণ হারাতে হলো—এসব প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে ‘ফ্যাসিস্ট/ভারতের ইন্ধনে’র প্রশ্নটাই প্রধান হয়ে দেখা দিলো।
পাহাড় প্রশ্নে বাংলাদেশে ‘জাতীয়তাবাদ’ যে সবচেয়ে প্রকট আকারে হাজির হয়, তার আরেকপ্রস্থ নজিরও দেখা গেল। সঙ্গে আর্মি বা সেনাপ্রীতিও। সেনাবাহিনী নিয়ে আমাদের কেউ কেউ যতই বিরূপ মন্তব্য করুক না কেন, তারা যখন আমাদের ‘প্রত্যাশিত জাতীয়তাবাদ’ অনুযায়ী কাজ করে, তখন তাকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলে ভাবতেই পছন্দ করি আমরা।
‘ধর্ষণ’-এর ঘটনাকে ‘ভুয়া’ সাব্যস্থ করার বিষয়ে গুজবকুলশিরোমনি ইলিয়াস সাহেব থেকে শুরু থেকে এনসিপির হান্নান মাসুদ সাহেব (যদিও তিনি পরে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন) পর্যন্ত যে ঐক্যমত দেখালেন—এটিকে আমাদের জনপ্রিয় সাইকি বা মনস্তত্ত্বে ‘পাহাড়’ কীভাবে কাজ করছে, তার নজির হিসেবেও দেখা যেতে পারে। অবশ্য বিএনপির হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সাহেব আবার আরেক কাঠি সরেস। তিনি পাহাড়ে চলমান সেটেলার-পাহাড়ি দ্বন্দ্বের ‘দায়’কে প্রশংসা হিসাবে সম্প্রতি প্রকাশ করে বলেছেন, ‘পাহাড়ে আবার পুরাতন খেলা শুরু হয়েছে। জিয়াউর রহমান পাহাড়ে বাঙালি পাঠানোর কারণেই এখন জনসংখ্যার হার সমান হয়েছে। সেজন্যই এখন ভারতের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারছে না তারা।’
শুধু তাই নয়, হাফিজ সাহেব আরও বলেছেন, বাঙালিদের পাঠিয়ে জনসংখ্যার হার সমান না করলে পাহাড়িরা (কয়েকটা খবর দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, হাফিজ সাহেব এখানে ‘তারা’ বলতে পাহাড়িদেরই বুঝিয়েছেন) ভারতের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফেলত। তাঁর এই বক্তব্য যে যথেষ্ট ‘অপমানজনক’, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, পাহাড় প্রশ্নে এই ‘সার্বভৌমত্ববাদী’ আলাপের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিগত দেড় দশকের বক্তব্যের এক বিন্দু ফারাক নেই। আওয়ামী লীগ আমলে পাহাড়ে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটলে আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা ছাড়া বাকিরা অন্তত ‘ইন্ধন’-এর অনুসন্ধান না করে সরাসরি সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে পারতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ শাসন ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর পাহাড় প্রশ্নে এখন সবার সুর আসলে ‘সার্বভৌমত্ববাদী’। সবাই ‘ইন্ধন’-এর সন্ধানে এতোই ব্যস্ত যে পাহাড়ে যে কোনো ক্রাইসিস বা সমস্যা ও সংকট থাকতে পারে, সেই আলাপ বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে।
যখন আপনার রাষ্ট্রের ভেতরে এই ধরনের সমস্যা ও সংকট থাকে, তখন এজেন্সি থেকে শুরু করে নানান পক্ষই একে নিজেদের মতো কাজে লাগানোর চেষ্টা করে; করেও থাকে। এর অজস্র নজির ও ভাষ্য আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। কিন্তু তাই বলে ‘সমস্যা’র স্বীকৃতি না দিয়ে উল্টো সবকিছুকে ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিলেও সমস্যাটা উধাও হয়ে যায় না; বরং প্রকটই হতে থাকে।
একদিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের এক্সক্লুশনারি রাজনীতি এবং এর মতাদর্শিক ভিত্তি নিয়ে বহু আলাপ-আলোচনা চলছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ যে নিজেকে ইনক্লুসিভ দেখাতে চায়, সেখানেও ‘সার্বভৌমত্ববাদী’ আলাপ কতটা এক্সক্লুশনারি আকার ধারণ করতে পারে, তা হাফিজ সাহেবের উক্তির মধ্য দিয়েই বোঝা সম্ভব। সব মিলিয়ে পাহাড় প্রশ্নে পুরো মেইনস্ট্রিম যেন একাট্টা।
স্বাধীন বাংলাদেশ পঞ্চাশের বেশি বছর পার করে এলেও এবং অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর তুমুল উত্থান-পতন হলেও পাহাড় নিয়ে আমাদের মূলধারার অবস্থান আসলে হেরফের হয়নি খুব একটা। হুমায়ূন আজাদ যে ভাষায় পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে লিখেছিলেন, তাঁকে যারা ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচনা করেন, তাঁরাও অন্তত এই একটা কাজে আজাদকে মান্য করতে পারেন, করেনও। ‘জাতীয়তাবাদ’ যে রূপই ধারণ করুক না কেন, সেটা দিনশেষে এক্সক্লুশনারি হয়ে ওঠে, তারও প্রমাণ পাহাড় থেকে পাওয়া যায়।
শেষে বলি, বাংলাদেশ যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, আর কিছু না হোক, কোনো যদি-তবে-কিন্তু না রেখে এই মৃত্যুর নিন্দা জানাতে পারতে হবে।
লেখক: গবেষক

২০০৭ সালের ‘ওয়ান-ইলেভেন’ থেকে ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং তৎপরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রার একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ এই লেখা। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের অভাব, আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতার সংকট এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের ফলে সৃষ্ট সামাজিক ক্ষত ত
৫ ঘণ্টা আগে
ঢাকার ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভিন্ন আবহে পালিত হয় ৫৪তম মৈত্রী দিবস। এতে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায়।
১ দিন আগেবাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত বার্ষিক ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্সের এবারের আলোচনার শিরোনাম ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমরা সবাই এখন এই বিষয়টি নিয়েই ভাবছি।
১ দিন আগে
পেরুর বিচারক লুজ দেল কারমেন ইবানিয়েজ কারাঞ্জর ওপর গত জুনে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ, তিনি ২০০৩ সালের পর আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের অপরাধ তদন্তের অনুমতি দিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে গত এক বছরে ছয়জন আইসিসি বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১ দিন আগে