leadT1ad

হাদির আসনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে কী বলছে পরিবার ও ইনকিলাব মঞ্চ

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ০৬
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

প্রয়াত শরিফ ওসমান হাদি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিনও তিনি নির্বাচনি প্রচারণা করেছেন। মৃত্যুর পরে তাঁর স্থলে কে প্রার্থী হতে পারেন তা নিয়ে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা চলছে। আসনটিতে নির্বাচন করতে পারেন বলে পরিবার এবং ইনকিলাব মঞ্চের নেতাদের নাম শোনা গেলেও—তাঁরা বলছেন এ ব্যাপারে এখনও কোনো আলোচনাই হয়নি।

গত ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীতে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার মাত্র একদিন পর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। এর প্রায় এক সপ্তাহ পরে গত ১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টা দিকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওসমান হাদি।

আলোচনায় যাঁদের নাম

গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে শাহবাগে এক জনসমাবেশ মঞ্চ থেকে ওসমান হাদির বড় বোন মাসুমা বেগমকে আগামী সংসদ নির্বাচনে লড়ার প্রস্তাব করা হয়। এরপরে ওসমান হাদির স্থলে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আরও কিছু নাম সামনে আসে। এর মধ্যে একজন রয়েছেন পরিবারের সদস্য, আর দুজন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা। তাঁরা হলেন ওসমান হাদির বড় ভাই ওমর হাদি, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের ও ডাকসু নেত্রী ফাতিমা তাসনিম জুমা।

গত শনিবার জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় অনুষ্ঠিত ওসমান হাদির জানাজাপূর্ব অনুষ্ঠানে বক্তৃতা রাখেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। এরপর থেকেই যোগ্য প্রার্থী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওসমান হাদির সতীর্থ আবদুল্লাহ আল জাবেরের নাম ঘুরতে থাকে।

ফেসবুকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাবের ২০১২ সালে ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল, ২০১৪ সালে দারুন নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসায় এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। প্রয়াত ওসমান হাদিও চতুর্থ থেকে আলিম পর্যন্ত ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসায় অধ্যয়ন করেছেন। এরপরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ গড়ে তুলেন ওসমান হাদি-আবদুল্লাহ আল জাবের। একজন মুখপাত্র আর আরেকজন সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা ইনকিলাব মঞ্চেরও শীর্ষ নেত্রী। তাঁর নামও রয়েছে আলোচনায়। ঢাবির অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাতিমা তাসনিম জুমা নিজের রাজনৈতিক গুরু মানেন ওসমান হাদিকে। ডাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেলে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে অংশ নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক নির্বাচিত হন। নির্বাচনের আগে-পরে নিজের বক্তব্যের কারণে তিনি সারা দেশের পরিচিত মুখ। তবে সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীর ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে তিনি ওসমান হাদির আসনে নির্বাচন করতে পারবেন না।

নাম আসছে পরিবারের সদস্যদেরও

ওসমান হাদির প্রয়াণের পরে বিভিন্ন সময় বড় বোন মাসুমা বেগমের দুয়েকটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে। তাঁর এসব বক্তব্যে অনেকে প্রয়াত হাদির ছায়া দেখতে পেয়েছেন বলে ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন। জানা যায়, মাসুমা বেগমের স্বামী একজন শিক্ষক। সাংগঠনিকভাবে রাজনৈতিক সক্রিয়তা নেই তাঁদের।

অন্যদিকে, আলোচনায় থাকা পরিবারের আরেক সদস্য বড় ভাই ওমর হাদি ব্যবসায়িক সূত্রে ঢাকায় ওসমান হাদির কাছাকাছি থাকতেন। হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময়েও তিনি তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় ওসমান ছিলেন রিকশার ডান দিকে, আর বাম দিকে ছিলেন ওমর।

যা বলছে পরিবার

ওসমান হাদির বাবা শরিফ আবদুল হাদি ছিলেন পেশায় মাদরাসা শিক্ষক ও স্থানীয় ইমাম। তাঁর ছয় সন্তানের মধ্যে তিনজন ছেলে তিনজন মেয়ে।

শনিবার জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ওসমান হাদির জানাজার নামাজ পড়ানের আগে বরিশালের বাঘিয়া আল-আমীন কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল শরিফ ওসমান হাদি। ওর সন্তানের মাত্র আট মাস বয়স।’

হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক ঝালকাঠির বিখ্যাত এন এস কামিল মাদরাসার আল-হাদিস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ হিযবুল্লাহ জমিয়াতুল মুছলিহীনের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন।

সোমবার বিকেলে স্ট্রিমকে তিনি জানান, তাঁদের পরিবারটি একটি শিক্ষক পরিবার। প্রায় সবাই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। ভাইদের মতো বোন-জামাইরাও শিক্ষক।

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘এমনকি ওসমানও খুব ভালো শিক্ষক ছিল। কিন্তু আমার এই ভাইটা ছিল বিপ্লবী।’ পরিবারের কারো রাজনীতিতে আসার বা ঢাকা-৮ থেকে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে এতটাই শোকাহত যে, এসব নিয়ে এখনও ভাবতে পারছি না। আমার মা তো পাগলপ্রায়। বোনও ভেঙে পড়েছে। এসব নিয়ে আমাদের মাঝে কোনো আলোচনা হয়নি এখনও।’

তবে এসব ব্যাপারে ওসমান হাদির সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলেও তিনি জানান।

যা বলছে ইনকিলাব মঞ্চ

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঢাকা-৮ আসনে হাদি ভাইয়ের হয়ে ইলেকশনে কেউ লড়বেন কিনা এ ব্যাপারে ইনকিলাব মঞ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নাই, এবং এখন পর্যন্ত ঢাকা-৮ আসনে ইনকিলাব মঞ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে কিনা এ ব্যাপারেও কোনো মিটিং হয় নাই। আমরা ইনশাআল্লাহ এ ব্যাপারে অতি শিগগিরই বসবো এবং আপনাদের এ ব্যাপারে জানাবো।’

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।

আবদুল্লাহ আল জাবের আরও বলেন, ‘ওসমান হাদি ভাই কোনো লুকোচুরি পছন্দ করতেন না, আমাদের মধ্যেও কোনো লুকোচুরি নেই। আমরা যেইটা বলবো সেটা আপনাদের সামনে এসেই বলবো। আমাদের কোনো পিছুটান নাই। আমরা ওসমান হাদি ভাই যেই আদর্শের লড়াই করে গেছেন সেই লড়াইটা জীবিত রাখার জন্যই এখানে দাঁড়িয়েছি। নয়তো আমাদেরকে যেইভাবে এই ফোকাসটা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, আজকে তাইলে আপনাদের সামনে আইসা দাঁড়াইতাম না, সোজা কথা।’

এই বক্তব্যের সময় পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ডাকসুনেত্রী ফাতিমা তাসনিম জুমাসহ অন্যরা।

Ad 300x250

সম্পর্কিত